রাষ্টপুঞ্জে ভারতের প্রতিনিধি বিমর্ষ আর্য্য।—ছবি টুইটার সৌজন্যে।
মহৎ হওয়ার জন্য বৃহৎ হওয়ার দরকার পড়ে না। একটু অন্য ভাবে বললে, বৃহৎ হলেই মহৎ হবে, এমন কোনও কথা নেই। আধুনিক পৃথিবীতে সে সত্যকে বার বার প্রতিষ্ঠিত করছে ভারতের বৃহৎ প্রতিবেশী চিন।
চিন বিপুলায়তন। চিন প্রভূত শক্তিধর। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের অন্যতম হওয়ার সুবাদে চিন আন্তর্জাতিক রাজনীতির নিয়ন্ত্রকদের সারিতেও রয়েছে। কিন্তু চিন নিজের দায়িত্বশীলতা প্রমাণ করতে পারেনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চিন সঙ্কীর্ণ স্বার্থের দ্বারা চালিত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চিন সঙ্কীর্ণ কূটনীতিতে অভ্যস্ত। অতএব দায়িত্বশীলতার সঙ্গে বারবার আপস করতে হয়েছে চিনকে। আর দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আপস করলে অবস্থান লঘু হতে বাধ্য, ক্ষমতা বা আয়তন যেমনই হোক।
জম্মু-কাশ্মীর প্রসঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে চিন। জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে ভারত সরকার সম্প্রতি যে পদক্ষেপ করেছে, তার বিরোধিতা স্পষ্ট সে বিবৃতিতে। পাকিস্তানের সুরে সুর মিলিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতিকে নেতিবাচক রঙে চিত্রিত করতে চেয়েছে চিন।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
প্রথমত, নিজের অবস্থানের ধারাবাহিকতাকেই চিন নষ্ট করেছে এই বিবৃতিতে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে। জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বিষয়, সেকথা স্বীকার করে চিন আগেই বিবৃতি দিয়েছিল, এ বিষয়ে নাক না গলানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে কৌশলগতভাবে চাপে রাখা চিনের অন্যতম লক্ষ্য। অতএব পাকিস্তানকে হাতে রাখা জরুরি। তাই নিজেদের পূর্বতন অবস্থানকেই নস্যাৎ করে দিয়ে পাকিস্তানের সুরে সুর মেলানো।
আরও পড়ুন: বেঁচে থাকার অধিকারই কেড়ে নেয় জঙ্গিরা: দিল্লি
দ্বিতীয়ত, অন্তত তিন দশক ধরে জম্মু-কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল সন্ত্রাস। আন্তর্জাতিক পরিসরে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও চিন ভুলে গেল কাশ্মীরের সেই সঙ্কটকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখার কথাটা। কাশ্মীর নিয়ে উদ্বিগ্ন যাঁরা হবেন, তাঁদের সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ থাকার কথা পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে। জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাস জিইয়ে রাখার যাবতীয় পরিকাঠামো যে পাকিস্তানেই লালিত, গোটা বিশ্বে কারও অজানা নয় সে কথা। চিনের ভঙ্গিতে মনে হল সে সত্য বেজিঙের কর্তাদের জানা নেই।
এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় ভারতের কোনও ক্ষতি নেই। ক্ষতি চিনেরই। ভাবমূর্তির ক্ষতি, অবস্থানগত ক্ষতি, নৈতিক ক্ষতি।