জলসঙ্কট ও সংরক্ষণ নিয়ে সচেতনতা প্রচার জরুরি

আমি এই সাধারণ মানুষের কোনও দোষ খুঁজে পাইনি কারণ তাদের কোনও ধারণাই নেই যে মাটির নিচের জল ধীরে ধীরে কীভাবে কমে যাচ্ছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৯ ০৩:০৩
Share:

কাজের সূত্রে এখন শহরে থাকি। একদিন সপ্তাহান্তে গ্রামের বাড়ি ফিরছিলাম দেখি প্রতি পাড়াতে একটি করে সাবমারসিবল বসে গেছে যাতে গ্রামবাসীর কোনোও জলকষ্ট না হয়। খুব ভাল লাগলো। কিন্তু কিছুদিন পর থেকেই একটি দৃশ্য দেখতে শুরু করলাম। দেখলাম মানুষ এক গ্লাস জল খেতেও ওই সাবমারসিবল চালিয়ে জল খাচ্ছে কিন্তু পাম্প বন্ধ করছে না। জল পরেই যাচ্ছে। পাম্প চালিয়ে স্নান করছে কিন্তু অপর একজন কখন আসবে তার ঠিক নেই তার জন্য পাম্প চলছে। আমি একদিন একজনকে বলতে গেলাম যে এত জল নষ্ট করো না ভবিষ্যতে একদিন মাটির নিচের জল সব শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আমার কপালে তিরস্কার ছাড়া কিছুই জুটল না। বেশি কিছু বলতে পারলাম না এখনকার সামাজিক পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে।

Advertisement

আমি এই সাধারণ মানুষের কোনও দোষ খুঁজে পাইনি কারণ তাদের কোনও ধারণাই নেই যে মাটির নিচের জল ধীরে ধীরে কীভাবে কমে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ জানে যে মাটির নিচের জল কোনওদিন শেষ হবে না। কিন্তু এই চিন্তা ভাবনা থেকে সরে না এলে ভবিষ্যত ভয়াবহ হয়ে উঠবে। গরমে চাষের জন্য আমাদের মাটির নিচের জলের উপর ভরসা করে থাকতে হয়। আমি যতদূর জানি, যে মাটির তলার একটি নিদির্ষ্ট দূরত্বের নিচে এই জল পাম্প দিয়ে তোলার আইন রয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ নিগমের কিছু লোকের সহায়তায় সেই দূরত্বের অনেক আগেই মাটির স্তর থেকে জল তুলতে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এতে চাষির খরচ অনেক কমে যাচ্ছে। কিন্তু এর ফলে মাটির উপর স্তরের জল অনেক কমে যাচ্ছে। গ্রামের দিকে জল অপচয়ের আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়।

এতো গেল গ্রামের দিক। শহরে আমরা কি দেখছি? দিনের পর দিন পুরসভার কলগুলো দিয়ে জল পড়ে যাচ্ছে। সেগুলি আটকানোর কোনও ব্যবস্থা নেই। সকাল থেকে জল পরেই যাচ্ছে। কারোর কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। এখন আবার নতুন উঠেছে যে বাথরুমের কমোডে মূত্র ত্যাগ করে ফ্লাশের জল দেওয়া। এতে যে কত জল অপচয় হয় আমরা ভাবি না। আমি এক বহুতল আবাসনে থাকি। এই বহুতল আবাসনগুলোর একমাত্র জলের উৎস ওই ভূগর্ভস্থ জল। এখানে সব কাজে ওই জল ব্যাবহার করা হয়। এখানেও আবাসিকদের দেখা উচিত যাতে জল অপচয় না হয়।

Advertisement

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এর প্রতিকার কি? একটা উপায় হলো সমুদ্রের জলকে বিপরীত অভিস্রবণ (আর ও) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানীয় জলে পরিণত করা। কিন্তু সে তো অনেক খরচ। সবার পক্ষে অত দাম দিয়ে জল কেন সম্ভব হবে না। তাছাড়া জল তো শুধু পান করার জন্য কাজে লাগে না, আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে জলের প্রয়োজন। তাহলে উপায়? এখন সময় এসেছে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের যে জোর কদম এর প্রচার করা। যদিও কিছু প্রকল্প আছে যেমন ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্প। কিন্তু এগুলো সেরকম প্রচারের আলোয় আসে না।

ধর্ম, উন্নয়ন নিয়ে তো আমরা অনেক প্রচার দেখলাম এবার একটু জল বাঁচানোর এবং অপচয় বন্ধ করার প্রচার দেখতে চাই। যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা আসে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা না থাকলে এই অপচয় বন্ধ করা যাবে না। তার সঙ্গে এই জল বাঁচানোর জন্য আমাদের রাস্তায় নামতে হবে। ভূগর্ভস্থ জল বাঁচানোর একটাই উপায় সেটা হলো ভূগর্ভস্থ জলের অপচয় বন্ধ করা।

আমাদের মনে রাখতে হবে এই পৃথিবীর মোট আয়তনের ২.২৫ - ২.৭৫% পরিশ্রুত জল। এর মধ্যে ১.৭৫% - ২% জল মেরু প্রদেশে জমে আছে। তাহলে পরে থাকলো ০.৫% -০.৭৫% ভূগর্ভস্থ জল। বৃষ্টির জল খুব কম পরিমাণে মাটির নিচে যায়। প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের এখন সময় এসেছে জল বাঁচানোর প্রতিজ্ঞা নেওয়ার এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার। না হলে আমরা তো জানি জলের অপর নাম জীবন, আর এই জীবনের জন্যই একদিন ভবিষ্যতে মানুষে মানুষে যুদ্ধ লাগবে। ভারতবর্ষে এর মধ্যেই চেন্নাই, অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থানে এর প্রভাব পরতে শুরু করে দিয়েছে। এখনই সচেতন না হলে এর প্রভাব আমাদের রাজ্যেও পড়বে।

(লেখক বোলপুর বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের শিক্ষক, মতামত নিজস্ব)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement