ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ছবি পিটিআই।
মধুরেণ হয়তো বলা যাবে না, কিন্তু সমাপয়েৎ অবশ্যই। রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে সপ্তাহখানেক ধরে চলতে থাকা অচলাবস্থায় ইতি পড়ল। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে জুনিয়র ডাক্তাররা ঘোষণা করলেন, আন্দোলন শেষ। ১২ দফা দাবি মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেছেন হবু ডাক্তাররা। ১২ দফা দাবিই মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। লিখিত আশ্বাসবাণী হাতে নিয়ে সোল্লাসে এনআরএস হাসপাতালে ফিরেছেন আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিরা। ততোধিক উল্লাসে তাঁদের বরণ করে নিয়েছেন বাকি আন্দোলনকারীরা। সঙ্ঘাতে পূর্ণচ্ছেদ আপাতত। নতুন উদ্যমে কাজে যোগদান জুনিয়র ডাক্তারদের। আজ সকাল থেকে গোটা রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পূর্ণ স্বাভাবিকতায় ফেরার ক্ষেত্র প্রস্তুত। নিঃসন্দেহে স্বস্তির ক্ষণ। শুভেচ্ছা, অভিনন্দন এবং সাধুবাদ সব পক্ষকেই।
যে ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছিলেন ডাক্তাররা, সে ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। সোমবার আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসে মুখ্যমন্ত্রীও উচ্চারণ করেছেন ‘নিন্দা’ শব্দ। কর্মক্ষেত্রে উপযুক্ত নিরাপত্তাই পাবেন চিকিৎসকরা, এই আশ্বাসও জোরের সঙ্গে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দাবি মূলত এইগুলোই ছিল আন্দোলনকারীদের। সঙ্গে আরও কিছু ছিল। প্রায় সব দাবিকেই যতটা সহজে মান্যতা দেওয়ার কথা, মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন বৈঠকে, ততটা সম্ভবত বৈঠকের আগে আন্দোলনকারীরাও আশা করেননি। ফলে বৈঠক শুরু হতেই ক্রমশ কমতে দেখা গিয়েছে গত সপ্তাহখানেক ধরে জমতে থাকা তিক্ততা। বৈঠক শেষ হয়েছে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে চলতে থাকা অচলাবস্থায় ইতি টানার অঙ্গীকারেই।
সরকার এবং চিকিৎসকদের মধ্যে প্রলম্বিত সঙ্ঘাত এবং তজ্জনিত অচলাবস্থায় যে সব উলুখাগড়ার প্রাণ যাচ্ছিল, তাঁরা হলেন রাজ্যের সাধারণ চিকিৎসাপ্রার্থী। কোটি কোটি মানুষ নির্ভর করে থাকেন সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থার উপরে। ঘোর অনিশ্চয়তা এবং সঙ্কটের মধ্যে দিন কাটছিল এই বিপুল জনগোষ্ঠীর। সোমবারের বৈঠকে অচলাবস্থার ইতি ঘটায় সবচেয়ে স্বস্তি পেলেন এই বিপুল সংখ্যক নাগরিক। এর চেয়ে ভাল খবর এই মুহূর্তে আর কী-ই বা হতে পারত? অতএব শেষ পর্যন্ত বৈঠকে বসতে পারা এবং সঙ্কটের নিরসন ঘটাতে পারার জন্য বিবদমান দু’পক্ষকেই অভিনন্দন। এই রকম সঙ্কট ভবিষ্যতে আর ঘনাবে না, এমন আশাই আমরা সকলে রাখব।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
আরও পড়ুন: ফের কাজে ডাক্তারেরা, সঙ্কট কাটিয়ে সকাল থেকেই আউটডোর হবে স্বাভাবিক
কিন্তু এই বৈঠক দু’পক্ষেরই দায়িত্ব অনেকটা বাড়িয়ে দিল। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যে ঘটনা এনআরএস হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে ঘটেছিল, তা আর ঘটবে না, ঘটলেও তৎক্ষণাৎ কঠোর পদক্ষেপ হবে। অতএব চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে না দেওয়ার জন্য প্রশাসনকে এখন থেকে সদা সতর্ক থাকতে হবে। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর উপরেই সর্বাগ্রে বর্তাবে। অন্য দিকে চিকিৎসকদের দায়িত্ব বা দায়বদ্ধতাও এখন থেকে আরও বেশি করে আতসকাচের নিচে থাকবে। তাঁদের সুরক্ষা নিশ্ছিদ্র করার দায়িত্ব যেমন সরকারের, তেমনই রোগীদের চিকিৎসা নিশ্ছিদ্র করার দায়ও কিন্তু চিকিৎসকদেরই। কোনও এক জন রোগীর ক্ষেত্রেও বিন্দু মাত্র গাফিলতির অভিযোগ কিন্তু চিকিৎসকদের দায়বদ্ধতাকে আগের চেয়েও বড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে ফেলে দেবে এখনকার পরিস্থিতিতে। কর্তব্য পালনে দু’পক্ষই সফল হোক, শুভেচ্ছা রইল। কিন্তু দু’পক্ষই আরও সতর্ক হোক, এই পরামর্শও রইল।