Calcutta High Court

সদিচ্ছা?

কিছু কিছু মানুষ নিজেদের দায়িত্ব স্বীকার করিয়া লইয়াছেন, তাহা অনস্বীকার্য।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২০ ০১:০০
Share:

শেষ পর্যন্ত, আবারও, আদালত। যে দায়িত্ব ছিল প্রশাসনের, আরও এক বার তাহার জন্য আদালতকে সক্রিয় হইতে হইল। রাজস্থানে প্রয়োজন হয় নাই, ওড়িশাতে নহে, দিল্লিতেও নহে। কিন্তু, দীপাবলিতে আতশবাজির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করিতে পশ্চিমবঙ্গে কলিকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করিতে হইল। কারণ, রাজ্য প্রশাসন মানুষের ‘মানবিকতা’র ভরসায় ছিল। বিশেষজ্ঞেরা জানাইয়াছেন, দীপাবলিতে বাজির দূষণ কোভিড-১৯ আক্রান্তদের পক্ষে মারাত্মক হইতে পারে। সেই প্রবল উদ্বেগের মুখে নবান্ন হইতে মুখ্যসচিব অনুরোধ করিলেন, ‘আপনার আনন্দ যেন অন্য কাহারও নিরানন্দের কারণ না হইয়া উঠে।’ অনুরোধ সেই রাজ্যবাসীর প্রতি, যাঁহাদের বদান্যতায় প্রতি বৎসরই দীপাবলি হইয়া দাঁড়ায় মূলত দূষণের উৎসব। শব্দদূষণ যেমন, বায়ুদূষণও তেমনই। শব্দবাজি লইয়া তবু কিছু নিষেধাজ্ঞা আছে— সাধারণ মানুষ মানুন বা না-ই মানুন, তবু আছে। যে বাজি তেমন শব্দ করে না, বরং অমাবস্যার অন্ধকার ছিন্ন করে অগণন আলোকশিখায়, তাহার রোশনাইয়ে বায়ুদূষণের প্রসঙ্গটি ঢাকাই পড়িয়া থাকে। এই বৎসর কোভিড-১৯ সমস্যাটিকে জটিলতর করিয়াছে। এই বার তাঁহাদের শুভবোধ জাগিয়া উঠিবে, তাঁহারা নাগরিক-দায়িত্ব সম্বন্ধে সচেতন হইয়া বাজি না পুড়াইয়াই থাকিবেন, রাজ্য প্রশাসনের এমন প্রত্যাশা থাকিলে তাহাদের বাস্তববোধ লইয়া প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক।

Advertisement

কিছু কিছু মানুষ নিজেদের দায়িত্ব স্বীকার করিয়া লইয়াছেন, তাহা অনস্বীকার্য। কেহ জানাইয়াছেন, এই বৎসর তাঁহারা বাজি বিক্রয় করিবেন না। কেহ নিজেদের আবাসনে বাজি পুড়ানো নিষিদ্ধ করিয়াছেন। কিছু পূজাকমিটি জানাইয়াছে, শ্যামাপূজা হইবে জাঁকজমকহীন। কিন্তু, এই শুভবোধ ব্যতিক্রমী। দুর্গাপূজা দেখাইয়া দিয়াছে যে, অতিমারির ভয়ই হউক বা আদালতের সতর্কবার্তা, বহু মানুষ কিছুতে থমকান না। সামাজিক দায়িত্ববোধের বালাই গড়পড়তা বঙ্গজনের নাই। কাজেই, সরকারের নিকট অধিকতর সক্রিয়তা প্রত্যাশিত ছিল। আদালতের নির্দেশক্রমে দুর্গাপূজায় যে নিয়ন্ত্রণ জারি হইয়াছিল, শ্যামাপূজায় প্রশাসনের তাহা স্বতঃপ্রবৃত্ত করা বিধেয় ছিল। অপরের প্রাণসংশয় হইতে পারে জানিয়াও যাঁহারা এত বৎসর প্রবল শব্দে বাজি ফাটাইতে দ্বিধা করেন নাই, তাঁহাদের শুভবোধের ‌ভরসায় থাকিলে সেই দায়িত্ব পালন করা যায় না। অপ্রিয় সিদ্ধান্তগ্রহণের দায় প্রশাসন অস্বীকার করিতে পারে কি? যে দায়িত্ব প্রশাসনের, সেখানে কেন আদালতকে হস্তক্ষেপ করিতে হয়, তাহা বোঝা সম্ভব।

ভারতে, বঙ্গভূমিতেও, রাজনীতি যে হেতু মূলত জনতার অনুসারী, ফলে একটি আশ্চর্য দুষ্টচক্র কাজ করে। সমাজের কথা ভাবিতে জনতা অনিচ্ছুক, নেতারাও সেই জনতাকে ঘাঁটাইতে সাহস করেন না। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব সংক্রমিত হয় প্রশাসনেও। আবার, প্রশাসন যে হেতু অনাচার ঠেকাইতে গা করে না, মানুষও নির্দ্বিধায় সামাজিক অন্যায় চালাইয়া যান। ফলে, যে কাজগুলি নিতান্তই প্রশাসনের কর্তব্য, তাহার জন্যও সমাজকে আদালতের মুখাপেক্ষী হইতে হয়। বিশেষত পরিবেশের ক্ষেত্রে। বস্তুত, তাহাতেও সরকারের অবস্থান পরিবেশ-িবরোধী। তাহার সর্ববৃহৎ প্রমাণ ছটপূজা। যেখানে আদালতের নির্দেশেই রবীন্দ্র সরোবরে ছটপূজা বন্ধ করিবার কথা, সেখানে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে ছুটিয়াছে সেই নির্দেশের বিরোধিতায়। রাজনীতির সঙ্কীর্ণ স্বার্থের নিকট পরিবেশের স্বার্থ তাহাদের নিকট নগণ্য বলিয়াই প্রতিভাত হয়। আতশবাজির ক্ষেত্রে আদালত নির্দেশ দিয়াছে। কিন্তু এই ক্ষেত্রেও সরকার তাহার ফাঁক দিয়া গলিবার অভিপ্রায় দেখাইবে না, সেই ভরসা কোথায়? নিজেদের সদিচ্ছা প্রমাণ করিবার দায়টি, অতএব, প্রশাসনের উপরই বর্তায়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement