us

কে ডিশ ধুইবে?

নৈতিক শুদ্ধতার একটি চল হইয়াছে বটে, কিন্তু মস্তিষ্কে বাসা বাঁধিয়া রহিয়াছে পুরুষতান্ত্রিক ধারণা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:২৮
Share:

প্রতীকী চিত্র।

মার্কিন সমীক্ষায় প্রকাশ পাইল, আমেরিকায় তরুণবয়সি দম্পতিদের মধ্যেও, পুরুষ ও নারীর গৃহকর্মের বিভাজন এখনও প্রাচীন ছাঁচ মানিয়াই চলিয়াছে। অর্থাৎ, পুরুষ গৃহকর্ম করেন কম, নারী করেন বেশি। যদিও পুরুষ পূর্বের তুলনায় কিছু অধিক এবং নারী পূর্বের তুলনায় কিছু ন্যূন কর্ম করেন। পুরুষের তুলনায় নারী গড়ে প্রতি দিন এক ঘণ্টা বেশি গৃহকর্ম করেন ও এক ঘণ্টা বেশি শিশুর লালনপালনে মন দেন। হাইস্কুলের সিনিয়রদের মধ্যেও সমীক্ষা চালাইয়া দেখা গিয়াছে, তাহারা মনে করে, এক আদর্শ পরিবারে, পুরুষটি উপার্জন করিবেন, নারী গৃহে থাকিবেন ও শিশুর যত্ন করিবেন। বৃদ্ধ দম্পতিদের এমন ধারণা থাকিলে হয়তো স্বাভাবিক লাগিত, কিন্তু ১৮ হইতে ৩৪ বৎসর বয়স্কদের মধ্যেও মূলত এই ধারণাই প্রোথিত হইয়া আছে। কোনও সন্দেহ নাই, ক্রমাগত প্রচার, আন্দোলন, গণমাধ্যমে লিখিত ও বাচিক আলোচনার ফলে নারীবাদ পূর্বের তুলনায় অগ্রসর হইয়াছে, সমান পারিশ্রমিকের দাবিতে নারী অফিসকর্মী হইতে নারী টেনিস খেলোয়াড় সরব হইয়াছেন। অস্কার পুরস্কারে নারী পরিচালকেরা যথেষ্ট সংখ্যায় মনোনয়ন না পাইলে, খ্যাতনামা অভিনেত্রী ‘বঞ্চিতা’দের নাম-খচিত পোশাক পরিয়া সেই অনুষ্ঠানে আসিয়া প্রতিবাদ জানাইতেছেন। নিঃসন্দেহে বহু সাধারণ পুরুষও এখন মনে করেন, নারীই কেবল গৃহের কাজ করিবেন কেন, বিশেষত যেখানে তিনিও অফিসে কাজ করিয়া বাড়ি ফিরিতেছেন? কিন্তু ফলাফল দেখিয়া আপাত ভাবে মনে হইতেছে, নিবন্ধে বা দূরদর্শনের টক শো’তে, এমনকি বৈঠকি আড্ডায় প্রকাশিত সেই মনোভাব এখনও পুরুষকে কায়িক শ্রমে প্রণোদিত করে নাই। ফেসবুকে লিখিবার সময় যে-পুরুষ প্রবল নারীবাদী, চলচ্চিত্রে বা সাহিত্যে প্রচ্ছন্ন পুরুষতন্ত্রকে যিনি সপাটে ধুইয়া দিতেছেন, নিজগৃহে ঘর পরিষ্কার করিবার জন্য ভ্যাকুয়াম ক্লিনারটি চালাইতে তাঁহার হাড়ে ব্যথা ধরিয়া যায়, ওয়াশিং মেশিনে কাপড় কাচিতে ও সেই কাপড় শুকাইতে দিতে জ্বর-জ্বর লাগে। কিন্তু সমীক্ষায় ইহাও প্রকাশ পাইয়াছে, গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে ও বাড়ির লাগোয়া বাগানটির যত্ন লইবার ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা নারীর তুলনায় অধিক। অর্থাৎ, পুরুষ যে অলস তাহা নহে, শ্রম করিতে তাঁহারা প্রস্তুত, কিন্তু ‘পুরুষোচিত’ কাজগুলিতেই আগাইয়া আসেন, ‘নারীসুলভ’ কাজে নহে। কাপড় কাচা, রান্না, মুদির দোকানে যাইয়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়, ডিশ-প্রক্ষালন ইত্যাদি কাজগুলিতে তাঁহারা উৎসাহী নহেন। অন্য দিকে, বাড়ি কেমন সাজানো হইবে, কোন আসবাব ক্রয় করা হইবে, এই ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত মূলত লইয়া থাকেন নারী। আবার, অর্থ বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে পুরুষের সিদ্ধান্তের ভূমিকা প্রধান। অর্থাৎ, আমেরিকা আছে আমেরিকাতেই। বা, বিশ্ব আছে বিশ্বেই।

Advertisement

কারণ, নৈতিক শুদ্ধতার একটি চল হইয়াছে বটে, কিন্তু মস্তিষ্কে বাসা বাঁধিয়া রহিয়াছে পুরুষতান্ত্রিক ধারণা। এই ছাঁচ ভাঙা অতীব দুষ্কর। অবশ্য একটি ক্ষেত্রে তাহা ভাঙিয়া গিয়াছে। নারীর উপার্জনটি পরিবারের জন্য সমান অনুপাতে ব্যয় করিতে পুরুষের কোনও বাধা নাই। এই ক্ষেত্রে সমানাধিকার বুঝিব, অন্য ক্ষেত্রে বুঝিব না, তাহাতে প্রতীয়মান হয়, পুরুষের মূল অবস্থানটি সুবিধাবাদী। প্রাচীন পুরুষের অহঙ্কারী ধাঁচ হয়তো নারীর নিকটে অর্থপ্রার্থনা করিতে লজ্জা বোধ করিত। আরও দেখা যাইতেছে, ১৯৭০-এর দশকে এক জননী তাঁহার শিশুর সহিত যে পরিমাণ সময় কাটাইতেন, এখন এক জননীও তাহাই কাটাইতেছেন, শিশুর যত্ন লইতেছেন ও তাহাকে পড়াইতেছেন।

অথচ উক্ত দশকে জননীরা অধিকাংশই হইতেন গৃহবধূ। অফিস যাইতেন না। একই সঙ্গে, ইদানীং বেশ কিছু চাকুরির ক্ষেত্রে, অধিক ঘণ্টা কাজ করিতে হয়। অর্থাৎ, এক আধুনিক নারী হরেদরে অফিসে বেশি খাটিতেছেন, গৃহে বেশি খাটিতেছেন। অনেকের মতে ইহার মূল কারণ, শৈশব হইতে মানুষ দেখিতেছে, পরিবারে নারী গৃহকর্ম বেশি করেন। সেই বুনিয়াদি দর্শনকে সহস্র শিক্ষা ও নূতন দীক্ষা দিয়াও উৎপাটন করা কঠিন। অবশ্য এ সকলই তো মার্কিন দেশের কথা। আমাদের দেশে এই বিষয় লইয়া

Advertisement

অত গোল হইবার সম্ভাবনা নাই। এখানে অন্যের গৃহে পরিচারিকার কর্ম করিয়া নারী বাড়ি ফিরিয়া নিজের গৃহে পরিচারিকার সমুদয় কর্ম করিবার পর, পুরুষ মদ গিলিয়া আসিয়া তাঁহাকে প্রাণপণ পিটাইয়া, সকল অর্থ কাড়িয়া লন। সমীক্ষার প্রশ্নই নাই। সমীক্ষকেরা অন্তত এই দেশে গৃহকর্মে অধিক মনোযোগ দিতে পারিবেন।

যৎকিঞ্চিত

ভ্যালেন্টাইন’স ডে-র পরম শুভলগ্নে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো শুরু হল, নিশ্চয় ভিড়ঠাসা ট্রেনে পা মাড়িয়ে দিলেও ঝগড়া হবে কম। আর যে-হারে সবাই কামরায় দাঁড়িয়ে মোবাইলে ছবি তুলতে ব্যস্ত, সিট না পেলেও বেজার হওয়ার সম্ভাবনাই নেই। সব বন্দোবস্ত ধাঁ-চকচকে, আবার স্টেশনে স্ক্রিন-ডোর। তাই দড়াম করে লাইনে লাফিয়ে পড়া যাবে না। অতি সস্তায় আত্মহত্যার একটি উপায় বন্ধ করে দেওয়া হল। দেখা যাক, অতি-সচেতন শহরে এ নিয়ে আন্দোলন গজিয়ে ওঠে কি না!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement