ছবি রয়টার্স।
সরকারি প্রক্রিয়ায় সচরাচর যাহা হয় না, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট তদন্তে তাহাই দেখা যাইতেছে। তদন্ত প্রক্রিয়া দ্রুত আগাইতেছে। এই তৎপরতা অভূতপূর্ব না হইলেও বিস্মিত করে। কেহই এতটা আশা (বা আশঙ্কা) করেন নাই। এই বছরের গোড়ায় যখন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব আনা হইয়াছিল, হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসের কুড়ি জন সদস্যের সমর্থনও তখন ছিল না। ধীরে ধীরে অভিযোগের সারবত্তা বুঝা যাইতে সেই সংখ্যা বাড়িয়াছে। এখন তাহা ২২৯, যাহা হাউসের অর্ধেকের অধিক। আমেরিকার ইতিহাস বলিবে, চূড়ান্ত দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগে ইতিপূর্বে ইমপিচড হইয়াছিলেন অ্যান্ড্রু জনসন ও বিল ক্লিন্টন। তবে, অভিযোগ সেনেট অবধি পৌঁছায় নাই এবং ক্ষমতাচ্যুত হন নাই তাঁহারা। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রস্তাব হাউস পার করিলেও সেনেটও তাহা করিবে, এই ভাবনা ভাবিবার সময় আসে নাই। কিন্তু ঘটনাক্রম যে এত দূর আসিতে পারিয়াছে, ইহাই তাৎপর্যমণ্ডিত।
মূল তাৎপর্য জনমানসে। সরকারি স্তরে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ক্রমাগত অভিযোগের তালিকা লম্বা হইবার ফলে ট্রাম্প-বিরোধী নেতিবাচক ধারণা জোরালো হইতেছে। ইমপিচমেন্টের কঠোরতম সমর্থকও যাহা স্বপ্নে ভাবিতে পারেন নাই, সেই গতিতে তদন্ত চলিবার ফলে পরিস্থিতির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করিতে পারিয়াছেন ডেমোক্র্যাট নেতৃবৃন্দ। শেষাবধি ট্রাম্প সরিবেন কি না, ইহা বহুলাংশে নিয়মকানুনের প্রশ্নও বটে, কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে জমি হারাইতেছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট। সাধারণ নাগরিকদের বৃহদংশ তাঁহাকে অসৎ ভাবিতেছেন। উপরন্তু, তদন্ত প্রক্রিয়া চলাকালীন যে ট্রাম্প যথাযথ আচরণ করিতেছেন না, ইহাও তাঁহাদের নিকট প্রতীয়মান হইতেছে। জনৈক জননেতার কোনও সৎ উদ্দেশ্যই নাই— কথাটি জনগণ ধরিয়া ফেলিলে তাঁহার বিশ্বাসযোগ্যতার যে অভাব দেখা দেয়, সেই ঘাটতি পূরণ করা কঠিন হইয়া পড়ে। ভোটের বাজারে জনতার মনকে উস্কাইয়া দিবার সেই কাজে সংশয়াতীত ভাবে সফল বিরোধীরা।
বিরোধীদের শক্তি সঞ্চয় যে কোনও গণতন্ত্রের পক্ষেই শুভ। কেবল বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি নহে, প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তিরও ন্যায্য বক্তব্যটুকু প্রকাশ করিতে পারিতে হয়। আমেরিকায় এই পর্বে সেই দুইটি জরুরি বিষয়ই দেখা গিয়াছে। প্রথমত, শাসককে বেকায়দায় ফেলিতে পাথুরে প্রমাণ লইয়া আসরে নামিয়াছে বিরোধী দল ডেমোক্র্যাট। তাহারা দলগত ভাবে একতাবদ্ধ হইয়াছে, এবং ট্রাম্পবিরোধী সকলকে সেই উদ্যোগে শামিল করিতে পারিয়াছে। মূলত সংগঠিত বিরোধিতার ফলেই ট্রাম্পের ন্যায় স্বৈরাচারী শাসক বেকায়দায় পড়িয়াছেন। ইহাই সুস্থ রাজনীতি, এবং সুস্থ সমাজ গঠনের পাথেয়, যেখানে শাসক অন্যায় করিলে পাল্টা স্বর রুখিয়া দাঁড়াইতে পারে। দ্বিতীয়ত, ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়ায় মার্কিন আমলারা যে ভূমিকা পালন করিতেছেন, উহার জন্য তাঁহাদের সাধুবাদ প্রাপ্য। নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করা তাঁহাদের দায়িত্ব হইলেও রাজনৈতিক চাপে তাঁহাদের দলদাসে পরিণত হইতে দেখা যায়। এই পর্বে তাহা হয় নাই বলিয়াই ভারসাম্যটি তৈয়ারি হইয়াছে, এবং তদন্ত মসৃণ গতিতে আগাইতেছে। গণতন্ত্র তাহার জোর আর এক বার জানান দিতেছে।