দিনভর চাকা গড়াল না বাসের। নিজস্ব চিত্র
পরিবহণ কর্মী সংগঠন ও বাস মালিকদের মধ্যে ‘বিবাদ’। এর জেরে মঙ্গলবার বরাকর থেকে আচমকা বড়বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিপাকে পড়েন কয়েক হাজার যাত্রী। দ্রুত বাস পরিষেবা চালুর নির্দেশ দিয়েছেন এআরটিও (আসানসোল) তরুণ দত্ত।
‘আসানসোল বাস অ্যাসোসিয়েশন’-এর অভিযোগ, আইএনটিইউসি, আইএনটিটিইউসি ও সিটু অনুমোদিত পরিবহণকর্মী সংগঠনগুলির নেতারা এক জোট হয়ে বরাকর বাসস্ট্যান্ডে লাগাম ছাড়া ‘জুলুম’ চালাচ্ছেন। অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিজন মুখোপাধ্যায় জানান, এত দিন তিনটি শ্রমিক সংগঠন প্রতি বাস পিছু দৈনিক পাঁচ টাকা করে চাঁদা নিত। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বাস মালিকদের সঙ্গে আগাম কোনও আলোচনা ছাড়া সোমবার থেকে বাস পিছু দৈনিক দশ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। প্রতি দিন প্রতিটি ট্রিপে বাসের যা আয় হচ্ছে, তার ১০ শতাংশ হারে বাড়তি চাঁদা চাওয়া হয়েছে। এই দাবি পূরণ করতে হলে প্রত্যেক বাসকে দৈনিক ১০০ টাকারও বেশি চাঁদা দিতে হবে। এই জুলুমবাজি মানছি না। তাই বরাকর থেকে বাস চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।’’ বিজনবাবু জানান, বিষয়টি তাঁরা এআরটিও-কে মৌখিক জানিয়েছেন।
যদিও, শ্রমিক নেতৃত্ব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, বরাকরের বেশ কয়েকটি বাস কেরোসিনে চলে। তা বন্ধের দাবি উঠেছে। রাজ্য সরকার বাসের ভাড়া বাড়ায়নি, তবুও মালিকেরা যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করছেন। ফলে, বাস কন্ডাক্টরদের সঙ্গে যাত্রীদের প্রতি দিন বচসা হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াতকারী এমন ২০টি বাস আছে, যেগুলি নিয়মিত বরাকর থেকে ছাড়ার কথা। কিন্তু মালিকেরা বাসগুলি বরাকর পর্যন্ত না আনায় হয়রান হচ্ছেন যাত্রীরা। তিনটি শ্রমিক সংগঠন একত্রিত হয়ে দাবি তুলেছে, এই অনিয়ম অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। আইএনটিইউসি নেতা সুপ্রভাত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা এই অনিয়মের প্রতিবাদ করায় মালিকেরা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বাস বন্ধ করেছেন।’’ সিটু নেতা রাধাগোবিন্দ রায়ের দাবি, ‘‘কোনও জুলুমবাজি করা হচ্ছে না। শ্রমিক স্বার্থেই বাস পিছু চাঁদা তোলা হচ্ছে। আসানসোল, দুর্গাপুরেও এই ব্যবস্থা রয়েছে।’’ আইএনটিটিইউসি নেতা রবিন লায়েক বলেন, ‘‘আমরা অনিয়ম বন্ধের দাবি জানিয়েছি। বাস মালিকদের বাস বন্ধ সমর্থন করছি না।’’
জেলা পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাকর থেকে প্রতিদিন ৬০টি বড় বাস পশ্চিম বর্ধমান জেলা-সহ লাগোয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করে। মঙ্গলবার একটি বাসও স্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে বেরোয়নি। এর ফলে চরম বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। সকালে স্ট্যান্ডে এসে বাস না পেয়ে দুর্গাপুরের নিত্যযাত্রী সমরেশ হালদার বলেন, ‘‘সোমবারও শুনিনি বাস বন্ধ থাকবে। এ ভাবে আচমকা বাস বন্ধ হওয়ায় খুবই বিপদে পড়েছি।’’ সাধারণ যাত্রীদের কথা ভেবে অবিলম্বে বাস চলাচল শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন এআরটিও (আসানসোল) তরুণ দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে বাস বন্ধ করা অন্যায়। দ্রুত পরিষেবা চালু করতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। দু’পক্ষকেই তাঁদের অভিযোগ লিখিত ভাবে জানানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বৈঠক ডেকে স্থায়ী সমাধান
করা হবে।’’