কেশপুর গ্রামীণ হাসপাতালে টিকাকরণ। নিজস্ব চিত্র
প্রথম দিনেই একশোয় একশো টিকাকরণ করে সারা রাজ্যে হইচই ফেলে দিয়েছিল জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রাম। দ্বিতীয় দিনে অবশ্য হতাশই করল তারা।
সোমবার, করোনা প্রতিষেধক নেওয়ার দ্বিতীয় দিনে ঝাড়গ্রাম জেলার চারটি কেন্দ্রের মধ্যে তিনটিতে পাস মার্কও উঠল না! এ দিন জেলার চারটি কেন্দ্রে ১২০ জন করে ৪৮০ জনের তালিকা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তালিকায় নাম থাকা অধিকাংশ স্বাস্থ্যকর্মীই প্রতিষেধক নিতে আসেননি। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ঝাড়গ্রাম নার্সিং ট্রেনিং স্কুলে ৩০ জন, ঝাড়গ্রাম এসিএমওএইচ অফিসের মিটিং হলে ৪০ জন, চিল্কিগড়ে জামবনি ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের মিটিং হল ৪৪ জন ও গোপীবল্লভপুর ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের মিটিং হলে ৭৩ জনকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে।
সংখ্যাটা এত কমে গেল কেন?
চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ বলছেন, প্রথম দিনে প্রথম হওয়ার জন্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে যাঁদের প্রতিষেধক দেওয়ার কথা ছিল, তাঁদেরও ডেকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছিল। তাই সোমবার কার্যত মাছি তাড়াতে হয়েছে। এছাড়াও সোমবারের জন্য তৈরি চূড়ান্ত তালিকা রবিবার সাড়ে ১২টা নাগাদ প্রতিষেধক দান কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে আসে। এরফলেও পরিস্থিতি কিছুটা জটিল হয়েছে। জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের অবশ্য ব্যাখ্যা, পোর্টালে গোলমালের জন্য তথ্য নথিভুক্ত করতে (আপলোড) সমস্যা হচ্ছে। বেশ কয়েকজন প্রতিষেধক নিতে চাইছেন না। কাউকেই জোর করা হচ্ছে না। আর এ দিনের তালিকায় যাঁদের নাম ছিল শুধু তাঁদেরই প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। এ দিন জামবনির চিল্কিগড়ে বেশ কিছু অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী প্রতিষেধক নিতে এসেছিলেন। কিন্তু এ দিনের তাঁদের নাম তালিকায় না-থাকায় প্রতিষেধক দেওয়া যায়নি। সূত্রের খবর, তালিকায় নাম থাকলেও জেলা হাসপাতালের কয়েকজন কর্মী এ দিন প্রতিষেধক নিতে হবে বলে কাজেই আসেননি।
পশ্চিম মেদিনীপুরেও শনিবার টিকাকরণ শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে লক্ষ্যমাত্রার ৫৮ শতাংশের টিকাকরণ হয়েছিল এই জেলায়। রবিবার টিকাকরণ হয়নি। সোমবার টিকাকরণের দ্বিতীয় দিনে সার্বিকভাবে লক্ষ্যমাত্রার ৩৬ শতাংশের টিকাকরণ হয়েছে সেখানে। টিকাকরণের হার কমতে থাকায় বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মন্ডল বলেন, ‘‘ইচ্ছুকদেরই প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে।’’ জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গীও বলেন, ‘‘প্রতিষেধক দেওয়ার ক্ষেত্রে জোরাজুরির কোনও ব্যাপার নেই।’’ জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, শনিবার এই জেলায় ১,১০০ জনের প্রতিষেধক নেওয়ার কথা ছিল। নিয়েছিলেন ৬৩৯ জন। আর সোমবার এ জেলায় ১,২৯৬ জনের প্রতিষেধক নেওয়ার কথা থাকলেও নিয়েছেন ৪৬৯ জন। এ দিন লক্ষ্যমাত্রার নিরিখে সবথেকে বেশি টিকাকরণ হয়েছে ডেবরায়, ৭৬ শতাংশ। এছাড়া মেদিনীপুরে ৩৫ শতাংশ, খড়্গপুরে ১৯ শতাংশ, ঘাটালে ৫৩ শতাংশ, কেশপুরে ৫০ শতাংশ, শালবনিতে ২৯ শতাংশ টিকাকরণ হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতালে এ দিন টিকা নিয়েছেন ৩০ জন। সেখানে প্রথম দিন টিকা নিয়েছিলেন ৪৮ জন। সব মিলিয়ে দু’দিনে ওই কেন্দ্রে ৭৮ জন করোনা টিকা নিলেও পোর্টাল সমস্যার জন্য এ পর্যন্ত ৫৩ জনের নাম আপলোড করা গিয়েছে। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সঞ্চিতা কর্মকার এ দিন টিকা নিয়েছেন। এ দিন ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ৬৪, দাসপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ৪৩ এবং ক্ষীরপাই গ্রামীণ হাসপাতালে ৩১ জনকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়। সবক্ষেত্রেই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০০। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে এ দিন সুপার-সহ ২৩ জন টিকা নিয়েছেন। মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “পরীক্ষা করে অ্যান্টিবডি ৬০০-এর বেশি দেখায় আমি প্রথমে টিকা নিইনি। তার পরে বিষয়টি নিয়ে বৈজ্ঞানিক আলোচনায় জানতে পারি অ্যান্টিবডি বেশি থাকলেও টিকা নিলে কোনও ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না। বরং ভাল। তাই দ্বিতীয়বার আমার নাম আসায় টিকা নিয়ে নিলাম।”
সবং হাসপাতালে এ দিন মাত্র ১৩ জন টিকা নিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সবংয়ের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুভাষ কাণ্ডার বলেন, “প্রথম দিন ৫৩ জন টিকা নিলেও পোর্টালে গোলযোগ থাকায় সেই নাম নথিভুক্ত করা যায়নি। তাই তাঁদের নাম দ্বিতীয় দিনের একশো জনের মধ্যে তালিকাতেও ছিল। নতুন ৪৭ জনের মধ্যে ১৩ জন এ দিন প্রতিষেধক নিয়েছে।’’ বেলদা গ্রামীণ হাসপাতালে মাত্র ৩৮জন টিকা নিয়েছেন। বাকিরা কেন আসেননি সেই প্রশ্নে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিস মণ্ডল বলেন, “দেখা যাচ্ছে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা টিকা নিতে চাইছে না।” তবে আলো দেখাচ্ছে ডেবরা সুপার স্পেশালিটি। এ দিন সেখান ৯১ জন টিকা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আরিফ হাসান।