একটি সাবানের বিজ্ঞাপনে মীনাকুমারীর ছবি! ১৯৫৩-য়, ‘বৈজু বাওরা’য় প্রথম নায়িকা হওয়ার বছরখানেক পর একটি বহুজাতিক সংস্থার ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর’ হিসেবেই ওই বিজ্ঞাপন। এ রকম তাঁর আরও কিছু ছবি, সিনেমার এবং ব্যক্তিগত জীবনের। হার্পার কলিন্স-এর ‘দি ক্লাসিক বায়োগ্রাফি’ সিরিজে বিনোদ মেটা রচিত মীনাকুমারী (৩৫০.০০)। প্রথম প্রকাশ ১৯৭২-এ, চল্লিশ বছর পর নতুন হার্পার-সংস্করণটির ভূমিকায় কবুল করেছেন বিনোদ, যখন প্রথম লিখেছিলেন, তখন তাঁর তো কম বয়স বটেই, তারকাদের জীবনও এতটাই মিথ-এ ঢাকা থাকত (বিশেষত মীনাকুমারীর মতো তারকার ক্ষেত্রে, অত্যধিক মদ্যপান যেখানে তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠেছিল) যে, সেগুলি বায়োগ্রাফির বদলে হয়ে উঠত হেজিয়োগ্রাফি। তবু নিজের পুরনো রচনাটি পুরোপুরি অপছন্দ হয়নি বিনোদের, সেটিকে মূল হিসেবে রেখেই লিখেছেন নতুন সংস্করণটি। মধুবালা বা নার্গিসকে নিয়ে জীবনী লেখার চেয়ে অনেক বেশি ‘থট-প্রভোকিং চ্যালেঞ্জ’ তাঁর কাছে মীনাকুমারীকে নিয়ে লেখা। এ রচনার প্রাসঙ্গিকতা নিয়েও বলেছেন বিনোদ, ‘আই ওয়ান্ডার হোয়াট দ্য নিউ জেনারেশন অব আন্ডার-থার্টি সিনেমা-গোয়ার্স নোজ অ্যাবাউট হার।’ সত্যি তো, ক’জনই বা জানে ‘পরিণীতা’, ‘পাকিজা’, ‘সাহিব বিবি আউর গুলাম’-এর নায়িকার দ্বন্দ্বদীর্ণ অবগুণ্ঠিত জীবন?
’৬৯-’৭২, গত শতকের এ-ক’টা বছর জনপ্রিয় হিন্দি ছবির প্রায় প্রতিশব্দ হয়ে উঠেছিলেন রাজেশ খন্না। ‘সুপারস্টার’ শব্দটাই চালু তাঁর আবির্ভাবে। তখনও বলিউড বলা হত না মেনস্ট্রিম হিন্দি সিনেমাকে। এত অল্প সময়ে খ্যাতির এত তুঙ্গে অমিতাভ বচ্চনও পৌঁছতে পারেননি কোনও দিন। এই কথাগুলি খেয়াল করিয়ে দিয়েছেন শর্মিলা ঠাকুর তাঁর মুখবন্ধে, গৌতম চিন্তামণির ডার্ক স্টার/ দ্য লোনলিনেস অব বিইং রাজেশ খন্না (হার্পার কলিন্স, ৪৯৯.০০) বইটিতে। শুধু তো তারকা নন, হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের ‘আনন্দ’, ‘নমক হারাম’, ‘বাওয়াচির্’, অসিত সেনের ‘সফর’, বা বাসু ভট্টাচার্যের ‘আবিষ্কার’-এর মতো বেশ কিছু ছবিতেই অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন রাজেশ। এমন এক অন্তর্মুখী তারকার নিঃসঙ্গ অন্তর্ধানের রহস্য উন্মোচনেই যেন ব্রতী হয়েছেন লেখক। রাজেশ খন্নাকে নিয়ে এ মূল্যায়ন জরুরি ছিল।
কত রকমের ব্যস্ত অফিস এসেছে হিন্দি ছবিতে, সেই ‘ছোটি সি বাত’ থেকে শুরু করে ‘ত্রিশূল’ ‘কর্পোরেট’ হয়ে ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ অবধি— এ নিয়ে একটি অধ্যায় ‘অফিস, অফিস: টেন কর্পোরেট সেটিংস’, দীপ্তকৃতি চৌধুরীর বলিউড বুক/ দি বিগ বুক অব হিন্দি মুভি ট্রিভিয়া-য় (পেঙ্গুইন, ৪৯৯.০০)। কলকাতাই বা কত বার হিন্দি ছবিতে, এ নিয়ে অধ্যায়টি ‘ওহ্, ক্যালকাটা: টুয়েলভ মুভিজ সেট ইন কলকাতা’, তাতে উঠে এসেছে ‘অমর প্রেম’ থেকে হালের ‘কহানি’র কথা। কোন কোন ছবিতে ক্যানসার হয়েছিল নায়কের, এমন হরেক রকম খুঁটিনাটি জিজ্ঞাসার উত্তর যেন বইটি, হিন্দি সিনেমা নিয়ে কুইজ-এর জন্যেও উপযোগী। একটা বইয়ের মধ্যে গোটা বলিউড-বিশ্ব!
চণ্ডী মুখোপাধ্যায় তাঁর বাংলা সিনেমার ইতিকথা/ দুই বাংলার চলচ্চিত্র/ ১৯০৩—২০১৪-র (গাঙচিল, ৫০০.০০) শুরুতেই জানিয়েছেন ‘বাংলা সিনেমার কোনও লিখিত ইতিহাস নেই। কালীশ মুখোপাধ্যায়ের ‘বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাস’ বা গৌরাঙ্গপ্রসাদ ঘোষের ‘সোনার দাগ’, স্বাধীনতার আশপাশ সময়েই শেষ। তাই বাংলা সিনেমার ইতিকথায় ওই ইতিহাসকে টেনে আনা হয়েছে সাম্প্রতিক সময় অবধি। বাংলা সিনেমা মানে তো বাংলা ভাষায় তৈরি সিনেমাও। তাই ওপার বাংলার সিনেমাও এই বইয়ে অন্তর্ভুক্ত।’ বাংলা সিনেমাকে ‘এপার বাংলা’ এবং ‘ওপার বাংলা’-য় ভাগ করে কালানুক্রম তৈরি করেছেন লেখক, সঙ্গে নির্বাক যুগের বাংলা ছবির তালিকাও। কাজে লাগবে এ-বই দর্শক থেকে গবেষক, সকলেরই।
শেক্সপিয়র অবলম্বনে যে তিনটি হিন্দি ছবি করেছেন বিশাল ভরদ্বাজ, মকবুল (ম্যাকবেথ) ওমকারা (ওথেলো) আর হায়দার (হ্যামলেট), প্রত্যেকটিরই মূল চিত্রনাট্য (হার্পার কলিন্স, ২৫০.০০) বেরিয়েছে ইংরেজি অনুবাদ-সহ। এই দ্বিভাষিকতায় সবর্ভারতীয় পাঠকের কাছে পৌঁছবে সংস্করণগুলি। বিশালের প্রথম পরিচালিত ছবিটি ছিল ছোটদের জন্যে, তখনই তাঁর কুরোসাওয়ার শেক্সপিরীয় ক্লাসিক ‘থ্রোন অব ব্লাড’ (‘ম্যাকবেথ’ অবলম্বনে) দেখার স্মৃতি জেগে ওঠে। ‘আই হ্যাভ ডিসাইডেড টু অ্যাডপ্ট ম্যাকবেথ টু মুম্বইস আন্ডারওয়ার্ল্ড’, লিখেছেন বিশাল মকবুল-এর মুখবন্ধে। এমনই তাঁর আরও দু’টি মুখবন্ধ বাকি দু’টি চিত্রনাট্যেও। তিনটি পরপর পড়লে ক্ষমতা-র মুখচ্ছবিই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
‘মৃণালদার অকপট স্বীকারোক্তি— কী করব! জাপানের ডাকসাইটে পরিচালক নাগিসা ওশিমা-ও জুরি হয়ে গিয়েছিল। সামনে বসে লোকটা এমন একঘেয়ে সুরে নাক ডাকছিল যে আমারও ঝিমুনি এসে গেল। আসলে ফেস্টিভ্যালগুলোতে সাত-দশ দিন ধরে দিনে পাঁচ-ছ’টা করে এত অর্থহীন ছবি দেখতে হয় যে ঘুম ছাড়া পিঠ বাঁচবে কীসে।’— মৃণাল সেনের সঙ্গে তাঁর ‘অন্তরীণ’ ছবিতে সহযোগী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সময়ে আড্ডা দেওয়ার স্মৃতি, সুগত সিংহের কলমে। সহজপাঠ থেকে বেরিয়েছে তাঁর বাস্তবোত্তর চলচ্চিত্র এবং আরও কিছু (২০০.০০)। বিমল রায়, সত্যজিত্-ঋত্বিক-মৃণাল, তারেক মাসুদ, চ্যাপলিন, আন্দ্রে ওয়াইদা, লাতিন আমেরিকার রাজনৈতিক চলচ্চিত্র এমন নানান বিষয় নিয়ে সুগতর বিশ্লেষণে সমাজতত্ত্বের সঙ্গে কারিগরি-প্রযুক্তির গাঁটছড়া।