সত্যিকারের গুণী মানুষটির কথা

পঞ্চাশ-ষাট-সত্তর দশকে বাংলা সিনেমার সোনার দিনগুলিতে নিত্য যাঁরা ফুল ফোটাতেন, তেমনই একজন পরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় ওরফে ঢুলুবাবু। পড়াশোনা শান্তিনিকেতনে, সান্নিধ্য পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৭ ১০:০০
Share:

আলোছায়ার দিনগুলি

Advertisement

লেখক: অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়

মূল্য: ৫০০.০০

Advertisement

দে’জ পাবলিশিং

অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় তখন নিউ থিয়েটার্সে সহকারী পরিচালক। তুলসী চক্রবর্তী সেখানে প্রায় প্রতি ছবিতেই অভিনয় করেন আর আড্ডা দেন প্রেমাঙ্কুর আতর্থী পঙ্কজ মল্লিক প্রমুখের সঙ্গে, ভাল গাইতেন বলে তাঁরা তাঁকে এক দিন গাইতে অনুরোধ করলেন। অরবিন্দবাবু লিখছেন ‘‘তুলসীদা বললেন— পঙ্কজ, তুমি তো বাবা রবীন্দ্রসংগীত গাও, আমি একটা নিজের সংগীত শোনাই। ‘বেশ বেশ’ সবাই বলে উঠল। তুলসীদা ডান হাতটা ডান কানে রেখে বাঁ হাতটা তুলে আ-আ-আ— করে তান ধরলেন, তারপর কাফি রাগে শুরু করলেন:— শিবরাত্রির পরের দিন/ শিবের হল সর্দি কাশি/ ঘটি ঘটি জল ঢেলেছে/ জ্যেঠি কাকি মামি মাসি/ তাই শিবের হল সর্দি কাশি/ আদা দিয়ে চা করে...।’’ তাঁর সরস গদ্যে এ রকমই স্মৃতির আখ্যান ছবি বিশ্বাসকে নিয়েও। ১৯৫৪-য় নিউ থিয়েটার্স বন্ধ হয়ে গেলে অরবিন্দবাবুরা কয়েক জন মিলে নতুন কাজের সন্ধানে একটা ছবির ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছেন ছবিবাবুর কাছে, তিনি বললেন ‘পাঁচশ টাকা করে পার ডে দিবি।’ সতীর্থ বন্ধু সুনীল বসু হাতজোড় করে কাঁচুমাচু মুখে ‘আড়াইশ’ দিতে পারবেন জানালেন, শুনে ছবিবাবুর মন্তব্য ‘একেবারে নীল ডাউন হয়ে হাফ টিকিটের প্যাসেঞ্জার হয়ে গেলি যে, ডেটগুলো দিয়ে যা।’

পঞ্চাশ-ষাট-সত্তর দশকে বাংলা সিনেমার সোনার দিনগুলিতে নিত্য যাঁরা ফুল ফোটাতেন, তেমনই একজন পরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় ওরফে ঢুলুবাবু। প্রথম ছবি ‘কিছুক্ষণ’-এই তিনি তাঁর জাত চিনিয়েছিলেন, সাহিত্যিক বনফুলের ভ্রাতা এই মানুষটির পড়াশোনা শান্তিনিকেতনে, সান্নিধ্য পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের। শিক্ষার ভিতই তৈরি করে দিয়েছিল তাঁর জীবনদর্শন রুচি মূল্যবোধ। আহ্বান, পিতাপুত্র, নিশিপদ্ম, ধন্যি মেয়ে, নায়িকার ভূমিকায়, নকল সোনা, অগ্নীশ্বর, এই পৃথিবী পান্থনিবাস, মন্ত্রমুগ্ধ... একের পর এক ছবিতে বুনে দিয়েছিলেন বাঙালি জীবনের যে উত্তাপ, সেই উত্তাপই তাঁর স্মৃতিকথন আলোছায়ার দিনগুলি-তে। ফেলে আসা সেই সময়টা আর সেই সময়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষজন যেন এক অলীক রূপকথা হয়ে ফুটে উঠেছে এ বইয়ের পাতায়-পাতায়। সঙ্গে তিনটি চিত্রনাট্য: কিছুক্ষণ, ধন্যি মেয়ে, অগ্নীশ্বর। চলচ্চিত্রপঞ্জি, জীবনপঞ্জি। দুর্লভ সব স্থিরচিত্র। সর্বজিৎ মুখোপাধ্যায় ও গোপাল দাস সম্পাদিত বইটির ভূমিকা-য় তরুণ মজুমদার লিখেছেন এই ‘আটপৌরে, সদালাপী, দিলখোলা অথচ সত্যিকারের গুণী মানুষ’টির কথা।

চৈনিক পরিব্রাজক ফা-হিয়ান

লেখক: যোগীন্দ্রনাথ সমাদ্দার

মূল্য: ২০০.০০

অরুণা প্রকাশন

‘চিনা পরিব্রাজকগণের মধ্যে ফা-হিয়ান এবং হিউয়েন সিয়াং এই দুজনই প্রধান’, লিখেছেন বৌদ্ধশাস্ত্রজ্ঞ শরচ্চন্দ্র দাস, যোগীন্দ্রনাথ সমাদ্দারের (১৮৮৩-১৯২৮) বইয়ের ভূমিকায়। চিন থেকে ৩৯৯ খ্রিস্টাব্দে এসে পঞ্চম শতাব্দীর সূচনাকালটি ভারতেই কাটিয়েছিলেন ফা-হিয়ান, গুরু কুমারজীবের আজ্ঞায় লেখেন নিজের ভ্রমণবৃত্তান্ত। তাঁর বর্ণনায় উজ্জ্বল হয়ে আছে সমসাময়িক ভারতের নানা দিক। উনিশ শতকেই এই ভ্রমণবৃত্তান্ত ইংরেজিতে অনুবাদ করেন স্যামুয়েল বিল ও জেমস লেগি। বিল ও লেগির অনুবাদের উপর ভিত্তি করে বাংলায় ১০৪ বছর আগে সেই ভ্রমণবৃত্তান্ত প্রকাশ করেন যোগীন্দ্রনাথ, তাঁর ‘সমসাময়িক ভারত’ গ্রন্থমালার একটি খণ্ডে। সঙ্গে যুক্ত হয় পাটলিপুত্র নিয়ে আলোচনা, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও পূর্ণানন্দ স্বামীর টীকা। প্রতিটি অধ্যায়ে তিনিও টীকা সংযুক্ত করেছিলেন। তিনি অপর দুই গুরুত্বপূর্ণ চিনা পর্যটক হিউয়েন সাং এবং ইৎ সিং-এর বৃত্তান্তও অনুবাদ করেন। পটনা সরকারি কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপনার সঙ্গে গবেষণাকর্মেও তিনি সমান উৎসাহী ছিলেন। যোগীন্দ্রনাথই পটনা মিউজিয়মের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা এবং প্রথম কিউরেটর। তাঁর ফা-হিয়ান বইটি এত দিন পরে নতুন করে প্রকাশিত হল।

বাঙালি মুসলিম সমাজ ও নারী

লেখক: রোশেনারা খান

মূল্য: ২০০.০০

সহজপাঠ

বাঙালি মুসলমান সমাজে নারীর দুনো যন্ত্রণা। পশ্চাৎপদ সমাজে নারীজন্মের যন্ত্রণা তো আছেই, তার ওপর রয়েছে নানা ধরনের পীড়ন। মুসলমান বাঙালি নারীর বঞ্চনা-বৈষম্য, শোষণ-পীড়নের কারণ এবং সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেছেন রোশেনারা খান। মাত্র তেরো বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায় রোশেনারার। স্বামীর উৎসাহ এবং আগ্রহে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে প্রথাবহির্ভূত পড়াশোনা। মুসলিম মেয়েদের বৈষম্য, বঞ্চনা, লাঞ্ছনা দেখতে দেখতে প্রতিবাদের কলম তুলে নেন হাতে। একেবারে ভিতর থেকে দেখা মুসলমান সমাজের মেয়েদের হয়ে তিনি সওয়াল করেছেন, যুক্তি সাজিয়েছে। আলোচনা করেছেন মুসলিম মহিলাদের শিক্ষা, স্বনির্ভরতা, বাল্যবিবাহ, নারীপাচারের মতো জরুরি বিষয়গুলো নিয়ে। তা ছাড়া ইদানীং কালের বহু চর্চিত তিন তালাক, পণপ্রথা, দেনমোহর, পুরুষের একাধিক বিয়ের অধিকার, অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মতো বিষয়েও তাঁর সাহসী মতামত এবং মন্তব্য পাই এ বইয়ে। তাঁর বক্তব্য সরাসরি, স্পষ্ট। বলেছেন, বহুবিবাহের অধিকার রদ করতে হলে মুসলিম পুরুষদেরই এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু ‘শিক্ষিত পুরুষেরা একাধিক বিয়ে না-করে থাকলেও এই অধিকার হারাতে চান না। তাই হয়তো তাঁদের সে-ভাবে প্রতিবাদ করতে দেখা যায় না।’ আলোচনা করেছেন ‘বাঙালি মুসলিম নারীর পোশাকআশাক’ নিয়েও। লেখকের পর্যবেক্ষণ, ‘গত কয়েক বছর ধরে দেখছি, মুসলিম মহিলাদের বাঙালিয়ানায় আঘাত হানছে ধর্মীয় পোশাক।... অল্প বয়সি মেয়ে-বউরা বাইরে বের হচ্ছে কলেজ যাচ্ছে বোরখা পরে, নয়তো হিজাব ও নিকাব পরে’। মুসলিম সমাজের পিছিয়ে থাকা পরিবারের অনেক বেশি মেয়ে এখন স্কুলের গণ্ডি পার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ‘মেয়ে বেশি লেখাপড়া শিখলে পাত্র পেতে অসুবিধা হবে, তাই মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলেই যাতে বিয়ের পিঁড়িতে বসানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়।’ বাঙালি মুসলিম সমাজের ছোট বড় বদলগুলো ধরা পড়েছে তাঁর লেখায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement