পুস্তক পরিচয় ২

অবিশ্বাসীর মনেও শিহরন জাগায়

বাংলা সাহিত্যের দিকপাল লেখকরা তাঁদের সৃষ্টির মধ্যে ভূতপ্রেত, পিশাচ, প্রতিহিংসা, নির্মমতা, কল্পবিজ্ঞানের নানা বিষয় লিখেছেন। বহুবিচিত্র সৃষ্টির মধ্যে কত ভাবে যে এই সব বিষয় এসেছে তা এক সংকলনে পাওয়ায় অন্য মাত্রা যোগ হয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৭ ২৩:৫৪
Share:

ভয়াল ভয়ংকর অমনিবাস

Advertisement

সম্পাদক: পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়

৪০০.০০

Advertisement

উর্বী প্রকাশন

গল্প বলার আড়ালে যখন ভয়াল উপাদান মজুত থাকে, তা বহু অবিশ্বাসীর মনেও শিহরন জাগায়। পাহাড়ি বনবাংলোর পটভূমির গল্প বলতে গিয়েও বুদ্ধদেব গুহ তাঁর আত্মবয়ানে বলেছেন যে, ভূতপ্রেতে বিশ্বাস না করেও অনেক কিছু বুদ্ধি বা যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। সেখানে বেছে বেছে পুরুষদেরই মেরে রাখছে— অথচ স্পষ্টতই তা কোনও বন্যপশুর কাজ নয়। এমন রহস্য সন্ধানেও আছে নানা গল্পের কাঠামো। বাংলা সাহিত্যের দিকপাল লেখকরা তাঁদের সৃষ্টির মধ্যে ভূতপ্রেত, পিশাচ, প্রতিহিংসা, নির্মমতা, কল্পবিজ্ঞানের নানা বিষয় লিখেছেন। বহুবিচিত্র সৃষ্টির মধ্যে কত ভাবে যে এই সব বিষয় এসেছে তা এক সংকলনে পাওয়ায় অন্য মাত্রা যোগ হয়। কাহিনির বহুমাত্রিক গল্প-বর্ণনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, নীহাররঞ্জন গুপ্ত, প্রমথ চৌধুরী, বনফুল, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ প্রমুখের মুন্সিয়ানা তো অনস্বীকার্য। হেমেন্দ্রকুমার রায় উপন্যাসও লিখেছেন। সাঁইত্রিশটি গল্প ও তিনটি উপন্যাসে বিন্যস্ত সমৃদ্ধ সংকলনে নানা ধারার সম্ভার। বাংলা সাহিত্যের অতীত থেকে সমসাময়িক গল্পকারের লেখা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিদেশি গল্পের নমুনাও পাওয়া যায়। এডগার অ্যালেন পো-র রচনা ‘দ্য ব্ল্যাক ক্যাট’ গল্পটিও আছে মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গানুবাদে। ‘হরর’ বা ভয়াল বিদেশি সাহিত্যের দৃষ্টান্ত এবং বাংলা সাহিত্যের প্রয়াস বিশ্লেষণে সংক্ষিপ্ত অথচ মূল্যবান আলোচনা করেছেন সম্পাদক। তবে সংকলনের লেখাগুলির রচনাকালের উল্লেখ থাকলে রচনার ধারা বুঝতে আরও সুবিধা হত। অজানা অস্পষ্ট অশরীরীর এই আয়োজনের উপভোগে, সম্পাদক সন্ধ্যা নামলে সাবধান হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। পাঠ নির্দেশিকার ধাঁচে তাঁর পরামর্শ— ‘পূর্ণ রসোপলব্ধির জন্য প্রতিদিন একটি-দুটি গল্প পড়াই উচিত কাজ হবে।’ একটি-দুটি করে পড়া যদি সম্ভব নাও হয়, তবুও ভয়াল, অশরীরী শক্তি বা ভূতপেত্নির ভবিষ্যৎ এখনও আছে তা বলাই যায়।

পটের দুর্গা/ প্রসঙ্গ বীরভূম

লেখক: কিশোর দাস ও সঞ্জয় পাল

২৫০.০০

রাঢ় প্রকাশন

পটচিত্রের প্রচলন সুদীর্ঘ কালের। বাংলার লোকশিল্পে জড়ানো পট আর কাহিনির সুরবিন্যাসে পটুয়া সমাজও অঞ্চলভিত্তিতে পরিচিত। এ ছাড়া চৌকো পটের কারিগরি ঘরানা উনিশ শতকে তীর্থক্ষেত্র কালীঘাটকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। বঙ্গীয় শিল্পরূপের এটিও অন্যতম ধারা। অন্য দিকে, বাংলার ধর্মীয় পূজার্চনাকেন্দ্রিক পটের ব্যবহারের কথা দু’একটি ক্ষেত্র ছাড়া বছর দশেক আগেও অপরিচিত ছিল। রাঢ়বঙ্গে বা নির্দিষ্ট ভাবে বীরভূমের এই রীতির বৈশিষ্ট্য দীর্ঘ দিন যাবৎ অপ্রকাশিত ছিল। অথচ এই সব পারিবারিক পুজোর ধারা প্রায় সবই কমপক্ষে শতাধিক বছরের পুরনো। বিভিন্ন রীতি-আঙ্গিকে রঙিন চিত্রায়ণে পটদুর্গার রূপ অভিনব। কিন্তু জানা যায় না পুরনো অঙ্কনরীতি বা শিল্পীর কথা। এ রাজ্যের বীরভূম পটদুর্গা পুজোয় সব থেকে সমৃদ্ধ জেলা। বিন্যাসে, চিত্রশৈলীতে, শিল্পীভেদে বীরভূমের নানা প্রান্তে যে সব নিদর্শন দেখা যায় তা পরিবার ও গ্রাম উল্লেখে সচিত্র লিপিবদ্ধ করেছেন জেলাবাসী দু’জন লেখক। তবুও তাঁদের প্রায় দশ বছরের প্রয়াসেও সার্বিক তথ্য নিবন্ধীকরণ সম্ভব হয়নি। পুজোকেন্দ্রিক তথ্য, শিল্পীর কৃৎকৌশলগত দিকও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আগের কোনও ছবির নমুনাও কোথাও সংরক্ষিত হয়নি— দুর্গাপুজোর বিসর্জনে তা মিলিয়ে গিয়েছে। আরও সেই কারণে এই সময়ের তথ্য অনুসন্ধানে, পটদুর্গারূপের ধারার একটি বিশেষ জেলাকেন্দ্রিক বিন্যাসে এটি অন্যতম প্রয়োজনীয় কাজ।

অতীন্দ্রিয়

লেখক: মিমি রাধাকৃষ্ণন

৩০০.০০

ঋত প্রকাশন

মিমি রাধাকৃষ্ণনের ‘অতীন্দ্রিয়’ সার্বিক পরিকল্পনায় গ্রন্থিত সুমুদ্রিত প্রকাশনা। লেখক নিজেই শিল্পী— প্রচ্ছদও তাই হয়ে উঠেছে যত্নশীল এক শিল্পকাজ। আর, দশটি আলাদা আলাদা লেখায় সোচ্চার ভয়াল পরিবেশ তৈরির প্রয়াস তা নয়— মেধাবী ভাষায় গল্প বলার ছক। উচ্চকিত নয়, তবে বর্ণনার মধ্যে কোথাও পৌঁছনোর চেষ্টা— ইঙ্গিতে আতঙ্ক ভয় ধরানোর নির্মেদ রচনা। পাহাড়ি প্রকৃতি থেকে মালভূমি, ভারসাম্যের জীবনযাপন আর মেঘের মধ্যে লুকিয়ে থাকা রহস্যের রসদ আছে এ সব গল্পে। শান্তিনিকেতন, কালিম্পং, মুম্বই, দুমকা, দিল্লি, জয়পুর, কেরল ছাড়া বিদেশের ভ্রামণিক উল্লেখে মধ্যবিত্তের যাপনের নানা খুঁটিনাটি ঘুরেফিরেই আছে। শান্তিনিকেতন কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। তাই বিশ্বাসযোগ্য সরলতায় মোড়া এ সব কথায় জেগে থাকে ভ্রামণিক অভিযাত্রা। ‘জং বাহাদুরের জন্মরহস্য’ গল্পে তনিমা বড়াল যে শেষ পর্যন্ত বাড়ির পোষ্য বিড়ালের মধ্যে জং বাহাদুরের হিংস্র খিদের বলি হল তা ঠাসবুনট বর্ণনায় ভরা। সুরচিত সেলফোনের কথালাপে, ই-মেলের সংযোগের কথাবার্তায় স্বতন্ত্র আবহ তৈরি হয়েছে এ সময়ের গল্পে। গ্রন্থবদ্ধ গল্পগুলি ২০১২-’১৬ সালের মধ্যে লেখা। কিন্তু ‘কামোট’ কি বেজি, বনবিড়াল বা গন্ধগোকুলের মতো প্রাণী যা জঙ্গলেই থাকে?

বহির্মুখী, ওয়াকিবহাল মধ্যবিত্তের ঘর-গেরস্থালি আর দৈনন্দিনতার গল্প এ সব। মারপ্যাঁচহীন সেই গল্পের ফাঁকফোকরে অতিপ্রাকৃত শক্তির ছোঁয়া লাগা আছে কখনও কখনও। কোনও কোনও গল্পের শিরোনামেও আছে রহস্য মেশা— ক্রিস্টোফার ভিলার শেষ অতিথি, টেরিজা মেমের টেবিল বা জলি বোসের জবানবন্দি। যদিও এ সব গল্পে ব্যক্তিজীবন ও গোষ্ঠীজীবনের অনুভূতি, আনুগত্যে মেশা বেঁচে থাকার কাহিনিই ছাপ ফেলেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement