পুস্তক পরিচয় ২

ফিরে পড়া জরুরি

ওকালতি ত্যাগ করেই কিছু দিনের মধ্যে তিনি স্থির করলেন শিক্ষা বিস্তার করতে হবে, সর্বসাধারণের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার না হলে জাতীয় ভাবের উন্মেষ হবে না। অশ্বিনীকুমারের রচনাও স্বামী বিবেকানন্দের মতো প্রাণিত করেছিল স্বদেশি যুগের যুবসমাজকে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share:

আত্ম-প্রতিষ্ঠা

Advertisement

লেখক: অশ্বিনীকুমার দত্ত

৬০.০০

Advertisement

সূত্রধর

নীতিনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক অশ্বিনীকুমার দত্ত (১৮৫৬-১৯২৩) ছিলেন শিক্ষাব্রতী। তাঁর শিষ্যপ্রতিম চারণকবি মুকুন্দদাস নিজের রচনা ‘অশ্বিনীকুমারের শক্তির উৎস’-এ তাঁর ব্যক্তিজীবনে নানা স্মরণীয় ঘটনা উল্লেখ করতে গিয়ে লিখেছেন ‘ওকালতী ত্যাগ করো ওকালতী ত্যাগ করো, মহাত্মার অসহযোগ আন্দোলনের একটা মস্ত প্রচার্য্য বিষয়।... অশ্বিনীকুমারের প্রাণে এ প্রেরণা এসেছিল এবং তিনি সে প্রেরণার সার্থকতা নিজের জীবনে প্রত্যক্ষ করে দেশের কাছে আদর্শ স্থাপন করে গেছেন।’ ওকালতি ত্যাগ করেই কিছু দিনের মধ্যে তিনি স্থির করলেন শিক্ষা বিস্তার করতে হবে, সর্বসাধারণের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার না হলে জাতীয় ভাবের উন্মেষ হবে না। অশ্বিনীকুমারের রচনাও স্বামী বিবেকানন্দের মতো প্রাণিত করেছিল স্বদেশি যুগের যুবসমাজকে। নব্বই বছরেরও আগে প্রকাশিত তাঁর আত্ম-প্রতিষ্ঠা পুস্তিকাটিকে পুনরায় প্রকাশ করে সে ইতিহাসের স্মৃতি পাঠককে ফিরিয়ে দিল সূত্রধর। সঙ্গে চারণকবির লেখা তাঁর জীবনচরিতটি। স্বাধীনতার সত্তর পূর্তিতে প্রায়-দুষ্প্রাপ্য রচনা দু’টির এই সংকলনে বিস্তারিত ভূমিকা সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের, তাতে তিনি খেয়াল করিয়ে দিয়েছেন ‘রাজনীতির বিচারে তিনি ঠিক চরমপন্থী ছিলেন না।... কিন্তু পুলিশি নির্যাতন বা দমনপীড়নের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার।’

চরিত-কথা/ বিপিনচন্দ্র পাল

সম্পাদক: চণ্ডিকাপ্রসাদ ঘোষাল

৪০০.০০

গাঙচিল

অগ্নিযুগের বিরল ব্যক্তিত্ব বিপিনচন্দ্র পাল। নেতৃত্বের পর্যাপ্ত বারুদ ভাঁড়ারে থাকা সত্ত্বেও না পেরেছেন রাজনৈতিক অবস্থানে অবিচল থাকতে, না ধর্মীয় বিশ্বাসে। অথচ তাঁর বাগ্মিতা, বিচক্ষণতা, ব্রিটিশ-বিরোধী জেহাদ ও বৈদগ্ধ্যে ছিল জাতীয়তাবাদের জিয়নকাঠি। সেই বৈদগ্ধ্যেরই ফসল উঠেছে চরিত-সাহিত্যের ঘরে। বিপিনচন্দ্রের চরিতকথা ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। সংকলিত ন’টি প্রবন্ধের মধ্যে যে আট জন ব্যক্তি এবং একটি বস্তু অন্তর্ভুক্ত, তাঁদের মধ্যে সাত জনই বঙ্গীয় মহাপ্রাণ এবং তাঁদের প্রায় প্রত্যেককেই বিপিনচন্দ্রের সমসাময়িক বলা চলে। শেষ রচনাটির চরিত্র স্বতন্ত্র। এটি সেই অতিকায় জলযান ‘টাইটানিক’-এর জীবনকথা। একই জাতীয় আরও তিনটি প্রবন্ধকে এখানে জায়গা দেওয়া হয়েছে— ‘এমার্সন’, ‘প্রতাপচন্দ্র মজুমদার’ এবং ‘মহারানি স্বর্ণময়ী’। সম্পাদকের কথায়, ‘সমসাময়িক যশস্বী ব্যক্তিবর্গের মূল্যায়নে বিপিনচন্দ্র তৎপর হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর এই মৌলিক প্রয়াসের মূল্যায়নে দৃষ্টিভঙ্গির সামগ্রিকতার খামতি রয়ে গেছে বলেই মনে হয়। সেই কারণেই সদ্য শতবর্ষ অতিক্রান্ত এই বইটি ফিরে পড়া জরুরি।’

এক্সপ্লোরিং মার্কসিস্ট বেঙ্গল/ সি. ১৯৭১-২০১১/ মেমরি, হিস্টরি অ্যান্ড আয়রনি

লেখক: দেবরাজ ভট্টাচার্য

৯৯৫.০০

কে পি বাগচি

পশ্চিমবঙ্গের বাম শাসনকালের ইতিহাস গোটা দেশেই রীতিমতো গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। লাগাতার ৩৪ বছর একটি রাজ্য বামপন্থীদের দখলে! ষাট ও সত্তরের উত্তাল দশক তখনও শেষ হয়নি, মহাকরণে বামপন্থীদের প্রবেশ। তার পরে ভূমি সংস্কার ও পঞ্চায়েতের সাফল্য। সাক্ষরতা অভিযান। বসন্তের বজ্রনির্ঘোষের মধ্যেই ’৭১ সালে জন্ম এই গ্রন্থের লেখক দেবরাজ ভট্টাচার্যের। দমদমে এক যৌথ পরিবারে বেড়ে ওঠা এবং পরে দক্ষিণ কলকাতায় চলে যাওয়া। যৌথ পরিবার ভাঙতে ভাঙতে ছোট। তার কয়েক বছরের মধ্যেই সিপিএমের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট ক্ষমতা দখল করল। ধীরে ধীরে সিপিএম বাঙালি সমাজে এমন এক জায়গা করে নিল যে, এলাকায় এলাকায় লোকাল কমিটির অফিসই কার্যত মিনি মহাকরণে পরিণত হল। এক জায়গায় চমৎকার লিখেছেন দেবরাজ, ১৯৮৪-’৮৫ সালের মধ্যে বাড়িঘরের, মহল্লার উল্লেখযোগ্য ‘ল্যান্ডমার্ক’ হয়ে দাঁড়াল ‘পার্টি অফিস’। মোট আটটি অধ্যায়ে লেখক ‘মার্কসিস্ট বেঙ্গল’-এর যে সময়কাল ধরতে চেয়েছেন সেটি হল ১৯৭১ থেকে ২০১১। এসেছে বাম জমানায় আমলাশোলে অনাহারে মৃত্যুর প্রসঙ্গ। আনন্দবাজার পত্রিকায় ২০০৪-এর জুনে সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় আমলাশোলের ঘটনা। একই সঙ্গে প্রশ্নের মুখে পড়ে বাম জমানায় দারিদ্র দূরীকরণে ‘সাফল্য’-এর ঢক্কানিনাদ। ওই বছরেই ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট’ প্রকাশিত হয়। রিপোর্টে বলা হয়, এই রাজ্যে ধীরে ধীরে দারিদ্রের হার কিছুটা কমলেও বিভিন্ন জেলার মধ্যে বৈষম্য এত বেশি যে বেশ কয়েকটি জেলায় দারিদ্রের ফাঁস ভয়ঙ্কর। বিভিন্ন তথ্য-পরিসংখ্যানের মাধ্যমে লেখক অনুন্নয়নের আর্থ-সামাজিক শিকড় খুঁজতে চেয়েছেন। লেখক বাম জমানায় টালিগঞ্জের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকেও ভিন্ন চোখে দেখেছেন। বামেদের অবক্ষয়ের কারণও ব্যাখ্যা করেছেন চমৎকার ভাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement