আউতোবিয়োগ্রাফিয়া/ হোর্খে লুইস বোর্খেস
অনুবাদক: অর্পিতা মুখোপাধ্যায়
মূল্য: ২০০.০০
প্রকাশক: বৈ-চিত্র
লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের কিংবদন্তি লেখক হোর্খে লুইস বোর্খেস ‘দ্য নিউ ইয়র্কার’ পত্রিকার জন্য ইংরেজিতে একটি আত্মজীবনীমূলক প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সেটি অবলম্বনেই পরে স্প্যানিশে লেখেন ‘আউতোবিয়োগ্রাফিয়া’। অর্পিতা মুখোপাধ্যায় মূল স্প্যানিশ থেকেই বাংলায় অনুবাদ করেছেন পাঁচ পর্বে গ্রন্থিত ‘বোর্খেসের একমাত্র আত্মজীবনী’। বিশ্বসাহিত্যের এই অতি গুরুত্বপূর্ণ লেখকের গল্প-কবিতা নিয়ে বাংলায় বিচ্ছিন্ন কিছু লেখালিখি থাকলেও ছোট্ট জীবনীটি এত দিন অনূদিত হয়নি। শুরুতেই অর্পিতা মনে করিয়ে দেন, ‘বই আর জীবন শব্দ দু’টি যেন (বোর্খেসের) সমার্থক’। বুয়েনোস আইরেসে জন্ম, শৈশব থেকেই ক্রমক্ষীয়মাণ দৃষ্টিশক্তির অধিকারী বোর্খেস শুধু বই, গ্রন্থাগার আর বইয়ের মানুষের সঙ্গেই জীবন কাটিয়েছেন। তাঁর আত্মকথা যত না পরিবেশ-প্রতিবেশ বিষয়ে, তারও অনেক বেশি এই পড়াশোনা আর লেখালিখির ইতিহাস নিয়ে। সেই সূত্রেই এসেছে তারুণ্যে চরমবাদ ‘উলত্রাইজ্ম’-এর প্রভাব, ইউরোপে কলেজ-জীবন, দেশে ফিরে নিমগ্ন লেখালিখি, বন্ধু বিক্তোরিয়া ওকাম্পোর প্রসঙ্গ। তথ্যপঞ্জিটি জরুরি সংযোজন।
দি আর্লি হিস্টরি অ্যান্ড গ্রোথ অব ক্যালকাটা
লেখক: বিনয়কৃষ্ণ দেব
মূল্য: ৫৫০.০০
প্রকাশক: সাগ্নিক বুকস
উনিশ শতকের শেষ দশকে মহারাজা নবকৃষ্ণ দেবের জীবনী লেখানর জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে কলকাতার প্রাচীন ইতিহাসে আগ্রহী হয়ে ওঠেন নবকৃষ্ণেরই এক উত্তরপুরুষ রাজা বিনয়কৃষ্ণ দেব। ১৯০৫-এ প্রকাশিত হয় তাঁর গবেষণালব্ধ বইটি, দি আর্লি হিস্টরি অ্যান্ড গ্রোথ অব ক্যালকাটা। দশটি অধ্যায় ও একটি পরিশিষ্টে বিভক্ত বইটিতে কলকাতার সূচনাপর্ব, বাংলার অন্যান্য অতীত রাজধানী, কলকাতার ভূগোল, শহরের পরিবর্তমান চেহারা, জনসংখ্যা, নানা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিচারব্যবস্থা, সংবাদ ও সাময়িকপত্র, ইউরোপীয় সমাজ ও হিন্দু সমাজ নিয়ে তথ্যবহুল আলোচনা রয়েছে। সে তথ্য মূলত পুরনো নানা বিবরণী থেকে সংগৃহীত। আশ্চর্যের বিষয়, বিনয়কৃষ্ণ এই বই লিখতে গিয়ে পারিবারিক প্রাচীন নথিপত্র সংগ্রহ খুব একটা ব্যবহার করেছেন এমন প্রমাণ নেই। তবু কলকাতার প্রথম দিকের ইতিহাস রচনার প্রয়াস হিসেবেও বিনয়কৃষ্ণের বইটি গুরুত্বপূর্ণ। সমকালে এটি যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছিল, সুবলচন্দ্র মিত্র এর বাংলা অনুবাদও করেন। মূল ইংরেজি বইটি ঋদ্ধি সংস্করণের পর বহু দিনই দুর্লভ। সাগ্নিক বুকস বইটি পুনর্মুদ্রণ করে পাঠক-গবেষকদের উপকার করল।
আকাশ ভরা সূর্য তারা/ কবিতা-গান-শিল্পের ঝরনাধারায়
লেখক: মতিউর রহমান
মূল্য: ৮০০.০০
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশনী/ পরি: নয়া উদ্যোগ
স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের আগে থেকেই তো পূর্ব-পাকিস্তানে মতিউর রহমান চেনাজানা। বামপন্থী ছাত্রনেতা, তরুণ রাজনৈতিক কর্মী, সত্তরে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘একতা’র সম্পাদক। কিন্তু এ রকম কর্মমুখরতার মধ্যেই তিনি বিভাগোত্তর দুই বাংলার শিল্পসাহিত্য ও মননচর্চায় প্রাণিত, বাঙালির নন্দন-সন্ধানী বহু মানীগুণী মানুষের সঙ্গে ক্রমশ আলাপিত। স্বাধীনতার পরে অবশ্য বাংলাদেশের কৃতী সাংবাদিক হিসেবেই তাঁর প্রধান পরিচয়— পর্ব-পর্বান্তরে সর্বাধিক প্রচারিত ‘ভোরের কাগজ’ এবং ‘প্রথম আলো’য় তাঁর নেতৃত্বের কথা সবাই জানেন। এই সাংবাদিকতার অবসরেই দুই-বাংলার যশস্বী মানুষদের সম্পর্কে তাঁর সাক্ষাৎ, এবং শুধু তাই নয়, তাঁদের নিয়ে জীবনালেখ্য, স্মৃতিচারণ, কিংবা তাঁদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সান্নিধ্য যেটুকু ঘটেছে তার উত্তাপ, তা-ই বিভিন্ন সময়ে তাঁর সম্পাদিত পত্রিকায় সংলগ্ন হয়ে থাকত। এ বার গাঁথা রইল এই বইয়ে।
অরুণ মিত্র বা সুভাষ মুখোপাধ্যায় বা শামসুর রাহমান, জহির রায়হান বা শহীদুল্লা কায়সার— এ রকম কত কবি ও ঔপন্যাসিকের মিছিল সেখানে। তবে সবচেয়ে তাঁর টান যে চিত্রী, ভাস্কর ও স্থপতির দিকেই, তা বেশ বোঝা যায় যখন দেখি মোট ২৭টি লেখার ১৪টিতে শিল্পীদেরই কথা। পশ্চিমবঙ্গ থেকে যেমন অন্তরের ডাক পেয়েছেন সোমনাথ হোর, পরিতোষ সেন, গণেশ পাইন, বিকাশ ভট্টাচার্য ও যোগেন চৌধুরীর কাছ থেকে— আবার সেই সঙ্গে জড়িয়ে থেকেছেন স্বদেশের কামরুল হাসান, মোহাম্মদ কিবরিয়া, কাইয়ুম চৌধুরী, মুর্তজা বশীর, নিতুন কুণ্ডু বা দেবদাস চক্রবর্তীর সঙ্গে। প্রবাদপ্রতিম স্থপতি মাজহারুল ইসলামেও তাঁর মুগ্ধতা। আবার বিশ্বখ্যাত রবিশঙ্কর, আর একুশের গানের সুরকার আলতাফ মামুদ— দুই মেরুর স্পর্শ তাঁর বিচরণে। এই সব অনুভবের ছোট ছোট লেখাগুলিতে মতিউর রহমানের অনাবিল স্ফূর্তিই প্রকাশ পায়— অজস্র ছবি ও আলোকচিত্রে ভরপুর এবং অঙ্গসজ্জায় অভিনব এক শিল্পিত জগতের আবহ ফুটে ওঠে বইয়ের শিরোনামে ও উপশিরোনামে।