পুস্তক পরিচয় ২

ঐতিহ্যের ধারা

মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ থানার মির্জাপুর গ্রাম কি হুগলির চুঁচুড়া বাঁশবেড়িয়া, বর্ধমানের কাটোয়ার কার্তিকপূজা আর কার্তিকের লড়াই উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও ‘কাতির গান’ এই বইয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৭ ০০:০০
Share:

কার্তিক: পুরাণ ও বাঙালি লোকবিশ্বাসে

Advertisement

লেখক: অগ্নিবর্ণ ভাদুড়ী

মূল্য: ১০০.০০

Advertisement

প্রকাশক: কুবোপাখি

কার্তিক দেবসেনাপতি, আবার তিনি ‘দেবসেনা’-পতিও— প্রজাপতি-কন্যা দেবসেনার স্বামী। কার্তিকের বিচিত্র কথা নিয়ে ছোট্ট বইটি শুরু হচ্ছে এমনই উচ্চারণে। পৌরাণিক নানা ইতিবৃত্তে আরও অনেক চরিত্রের মতোই কার্তিককে নিয়েও বিস্তর জটিলতা। বইয়ের সূচনাতেই তার আভাস দিয়েছেন লেখক, পরে আলোচনা করেছেন বিস্তারে। সমস্যার শুরু জন্মবৃত্তান্তে। মহাভারত, পুরাণ থেকে শিল্পকলা কি বাংলার লোককাহিনি কিছুই বাদ পড়েনি লেখকের অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে। যেমন পাথর ও ব্রোঞ্জের ভাস্কর্যে কার্তিকের পাশে দেখা যায় তাঁর দুই পত্নী দেবসেনা ও বল্লী-কে। কিন্তু স্কন্দপুরাণে কার্তিক অবিবাহিত, বাংলার লোকবিশ্বাসেও তাই। দেবদাসীদের কার্তিকের সঙ্গে বিয়ে হত, পরে গণিকারা নিজেদের কার্তিকের বাগদত্তা স্ত্রী বলে মনে করতেন। সম্ভবত গণিকাদের কার্তিকপূজার এটাই উৎস। তবে বাংলায় সাধারণের মধ্যে কার্তিক উপাসনা বেশ প্রাচীন। মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ থানার মির্জাপুর গ্রাম কি হুগলির চুঁচুড়া বাঁশবেড়িয়া, বর্ধমানের কাটোয়ার কার্তিকপূজা আর কার্তিকের লড়াই উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও ‘কাতির গান’ এই বইয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।

কপিলামঙ্গল/ দ্বিজ কবিচন্দ্র

সম্পাদক: অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায়

মূল্য: ৬০.০০

প্রকাশক: ভারবি

গবাদিপশুকে কেন্দ্র করে গান ও উৎসব বাংলায় স্মরণাতীত কাল থেকেই প্রচলিত। পশ্চিমরাঢ় তথা মানভূম অর্থাৎ বাঁকুড়া পুরুলিয়ায় পশুভক্তি থেকে জন্ম নিয়েছিল ‘কপিলামঙ্গল’। প্রধান ধারার মঙ্গলকাব্যের পাশাপাশি যে সব আঞ্চলিক মঙ্গলকাব্য রচিত হয়েছে, এটি তার অন্যতম। লোকমুখে চলিত বাঁদনা ও খুটান গান থেকেই ‘কপিলামঙ্গল’-এর উদ্ভব। কার্তিক মাসে বাঁদনা পরবের সময় আজও ‘কপিলামঙ্গল’ কাব্য পড়া হয়, গাওয়া হয়। এখনও এর পেশাদার গায়েনরা আছেন। এই অঞ্চলে পটুয়ারাও গরু-বাঁদনার পট আঁকেন, কপিলামঙ্গলের গান গেয়ে বেড়ান। যে দ্বিজ কবিচন্দ্রের পুথিটি আলোচ্য বইয়ে সংকলিত ও সম্পাদিত, তিনিই সম্ভবত ‘কপিলামঙ্গল’-এর প্রধান কবি। সম্পাদক তাঁকে ‘মহাভারত’ ও ‘বিষ্ণুপুরী রামায়ণ’ রচয়িতা শঙ্কর কবিচন্দ্রের সঙ্গে অভিন্ন বলেই সিদ্ধান্ত করেছেন। বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের সভাকবি ছিলেন তিনি। শুরুতে কবি-পরিচিতি, কাব্যের প্রেক্ষিত, ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা নিয়ে সবিস্তার আলোচনা রয়েছে। চারটি পুথির ভিত্তিতে মূল কাব্যটি সম্পাদিত হয়েছে। ক্ষেত্রানুসন্ধানের মাধ্যমে সম্পাদক একটি ‘লিভিং ট্র্যাডিশন’ চমৎকার তুলে এনেছেন।

বাতিল চিত্রনাট্য

লেখক: তরুণ মজুমদার

মূল্য: ২৫০.০০

প্রকাশক: দে’জ পাবলিশিং

ফিল্মে গল্প-বলায় তিনি যে অনবদ্য, পঞ্চাশ-ষাট দশকের সন্ধিক্ষণেই প্রমাণ করে দিয়েছিলেন তরুণ মজুমদার, নতুন শতকে প্রমাণ হয়ে গেল অনবদ্য কথাকারও তিনি। প্রথমে যাত্রিক-এর ব্যানারে ‘কাঁচের স্বর্গ’ কিংবা ‘পলাতক’-এর মতো ছবি, পরে স্বনামে তাঁর একটার পর একটা ছবি... আলোর পিপাসা, একটুকু বাসা, বালিকা বধূ, নিমন্ত্রণ, শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, ফুলেশ্বরী, সংসার সীমান্তে, ঠগিনী, গণদেবতা, দাদার কীর্তি, আলো-র মতো ছবি ক্রমাগত বাংলা সিনেমার দিগন্ত প্রসারিত করে গিয়েছে। তাজা স্বাদু গদ্যে রচিত তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থটি সাহিত্য থেকে মুখফেরানো বাঙালিকেও ফের গল্পপাঠক করে তুলবে। এ বইয়ের প্রচ্ছদের পাশাপাশি নামটিও চমৎকার— বাতিল চিত্রনাট্য। ফিল্মের চিত্রনাট্য লেখার ফাঁকে ফাঁকে এমন অনেক ভাবনার জন্ম হয়, যার কিছুটা হয়তো অভিজ্ঞতা কিছুটা হয়তো কল্পনা, সেগুলিকেই যেন বুনে গিয়েছেন তরুণবাবু গল্পের গড়নে। শিল্পের যে যে শর্তে কোনও কাহিনি একটি নিটোল ছোটগল্প হয়ে ওঠে, ঠিক সে ভাবেই তাঁর তেইশটি গল্প পূরণ করবে পাঠকের রুচি ও চাহিদা। রীতিমতো ছবি ফুটিয়ে গল্প বলেন তিনি, শব্দের বাতাবরণে আত্মগোপন করা সে সব ছবি খেয়াল করিয়ে দেয় তিনি চলচ্চিত্রকার। নিসর্গ বা চরিত্রেরা তাঁর দীর্ঘ জীবনের স্মৃতি থেকে উঠে আসা, খাঁটি বঙ্গজ, ধুলোমাখা আটপৌরে জীবনে লিপ্ত, যারা ক্রমশই লুপ্ত আমাদের গল্প-উপন্যাস থেকে, ক্রমাগত ভুবনায়নের দাপটে। যেমন গোড়ার গল্প ‘পলাশবুনি উপাখ্যান’-এ মন্দিরের সেই মহারাজ, মঠাধ্যক্ষ, যিনি রাম-মন্দির তৈরির জন্যে অযোধ্যা যাওয়ার লোক খুঁজে বেড়ানো সন্ন্যাসীদের মুখের ওপর বলেছিলেন ‘যদি সবার লেগেই আল্লা আর সবার লেগেই নারায়ণ— তবে একটা পুজোর থান ভেঙে আরেকটা গড়লে হরেদরে তো সেই একটু দাঁড়াল। মাঝখান থেকে ফালতু কিছু ইট-সুরকির খরচ। লয়?’ এই গল্পগুলি নিয়ে ‘ছবি তৈরি হবার কোনো আপাত-সম্ভাবনা নেই।’— লেখা আছে বইটির ব্লার্বে। তরুণ তুখড় কোনও ছবি-করিয়ে এ বই পড়লে নির্ঘাৎ ‘নেই’টাকে উড়িয়ে ছবি তৈরিতে মেতে উঠবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement