সেকালের গোয়েন্দা গল্প
সম্পাদক: অরিন্দম দাশগুপ্ত
৬০০.০০
আনন্দ পাবলিশার্স
বিশ্বের গোয়েন্দা গল্পের ইতিহাস আসলে সংশ্লিষ্ট দেশ ও কালের ইতিহাসও বটে। ইতিহাস সংস্কৃতিরও। উনিশ শতকের মাঝামাঝি এডগার অ্যালান পো-র গোয়েন্দা কাহিনি ‘দ্য মার্ডারস ইন দ্য র্যু মর্গ’-এর পরে গোয়েন্দা কাহিনি পা পা করে এগিয়েছে। সেটা ছিল ১৮৪১। আমাদের বাংলা ভাষাতেও গোয়েন্দা কাহিনির ইতিহাস কম পুরনো নয়। উনিশ শতকের শেষ দশক থেকেই শুরু হয় আধুনিক বাংলা গোয়েন্দা গল্প লেখা।
বাংলায় গোয়েন্দা কাহিনির নানা সঙ্কলন প্রকাশকেরা দীর্ঘ কাল ধরেই পাঠকের দরবারে হাজির করছেন। কিন্তু তার মধ্যে ব্যতিক্রমী এক সঙ্কলন হাতে এল, ‘সেকালের গোয়েন্দা গল্প’। সম্পাদনায় অরিন্দম দাশগুপ্ত। সঙ্কলনটিতে স্থান পেয়েছে মোট চল্লিশটি গল্প। এই সঙ্কলনের বেশির ভাগ গল্পই প্রকাশিত হয়েছিল বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকায়।
কেন এই সঙ্কলনটি ব্যতিক্রমী? কারণ, ভূমিকাতেই বলা হয়েছে, ‘‘এই সংকলনে গল্পের গুণগত মান বিচারের মধ্যে যাওয়া হয়নি, আর একজন লেখকের যে একটা গল্পই বেছে নেওয়া হবে তেমনটাও উদ্দেশ্য নয়। সংকলনের বাইরে রাখা হয়েছে সেই গল্পগুলি যা খুব সহজেই সংগ্রহ করা যায় এমন গল্পসংগ্রহের অন্তর্ভুক্ত।’’ এই সঙ্কলনে ঠাঁই পেয়েছে প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের ৯টি গল্প। প্রিয়নাথবাবু ছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের সাব ইনস্পেকটর। ফলে কর্মজীবনের নানা অভিজ্ঞতা তাঁর গল্পে আসে।
এই প্রিয়নাথকে নিয়ে তৎকালীন ‘অনুসন্ধান’ পত্রিকা ১২৯৫ সালের ৩১ চৈত্র একটি সংবাদ প্রকাশ করে। সেখানে লেখা হয়েছিল: ‘... দেশের লোকেও জানিয়া বিস্মিত হইয়াছেন যে, এমন বাঙ্গালী এখন পর্য্যন্তও এ-দেশে আছেন, যিনি দুই-দুইজন ইংরাজ ডাকাইতকে বিনা অস্ত্র-সস্ত্রে ধরিয়া আনিতে পারেন।’
ভারতবর্ষে ও অন্যান্য/ আঁদ্রে শেভ্রিয়ে
অনুবাদক: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর
সম্পাদক: শম্পা ভট্টাচার্য
১৭০.০০
পত্রলেখা
প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায় ছাড়াও দীনেন্দ্রকুমার রায়, পাঁচকড়ি দে, প্রমথনাথ দাশগুপ্ত, অঘোরনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়দের পাশাপাশি ‘অজ্ঞাত’ লেখকদের বেশ কয়েকটি গল্পও সঙ্কলনে রাখা হয়েছে। এটিও একটি ব্যতিক্রমী প্রয়াস। সঙ্কলনটি হাতে নিলেই বোঝা যায়, কী বিপুল পরিশ্রম এর পিছনে লুকিয়ে। বিভিন্ন গল্পের ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও ইতিহাসকে হাজির করার একটা প্রয়াসও এখানে লক্ষ্য করা যায়। ব্যোমকেশ বক্সী, কিরীটি রায় থেকে শুরু করে পরের দিকে ফেলুদার গল্পের স্বাদের সঙ্গে স্বভাবতই সে কালের গোয়েন্দা গল্পের স্বাদের ফারাক রয়েছে। এবং সেটা আছে বলেই সে কালের ছবি যেন চোখের সামনে মূর্ত হয়ে ওঠে।
ফরাসি হলেও আঁদ্রে (১৮৬৪-১৯৫৭) ইংল্যান্ড ও ইংরেজি সাহিত্য বিষয়ক প্রাবন্ধিক। ভ্রমণবৃত্তান্তেরও লেখক তিনি। পড়াশোনাও করেছেন প্যারিসের পাশাপাশি লন্ডনে। তাঁর এই ভারতবর্ষে আদতে ভ্রমণকাহিনি, এতে যেমন আছে বারাণসী ও জয়পুরের নৈসর্গিক দৃশ্যাদির বর্ণনা, তেমনই আছে তাঁর সংবেদনশীল ফরাসির চোখ-দিয়ে-দেখা ভারতীয়দের অবস্থা ও ইংরেজদের জাতিগত আধিপত্য। নিজের আধ্যাত্মিক এষণা থেকে চেষ্টা করেছেন ভারতের গভীরতর আধ্যাত্মিক সত্যকেও জানার। ভাষান্তর করেছেন তাঁরই সমকালীন ফরাসি ভাষা-সাহিত্যে আসক্ত জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, তবে তা মোটেও হুবহু অনুবাদ নয়। কখনও তাঁর পরোক্ষ উক্তিতে আঁদ্রের বক্তব্য, আবার কখনও স্বচ্ছন্দ বাংলায় সরাসরি অনুবাদ, আর ইতস্তত জ্যোতিরিন্দ্রনাথের টুকরো মন্তব্যগুলি যেন-বা মণিমুক্তোর মতো ছড়ানো। সম্পাদকের মতে: ‘‘পরাধীন দেশের বেদনার্ত মানুষটি শোষক ইংরেজের বিরুদ্ধে শ্লেষাত্মক কথাবার্তায় হয়ত আঁদ্রের সঙ্গে একাত্ম হতে পেরেছেন। বিদগ্ধ পাঠক জ্যোতিরিন্দ্রনাথের এই অনুবাদে ফরাসির চোখে উনিশ শতকের ভারতদর্শনের দিক ও দিশা খুঁজে পাবেন।’’ যেমন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ লিখছেন, ‘‘ভারতবর্ষের কতিপয় প্রধান নগরের স্বরূপ-লক্ষণ গ্রন্থকার কেমন বেশ সংক্ষেপে ব্যক্ত করিয়াছেন। তিনি বলেন— ‘কলিকাতা ইংরাজের ভারতবর্ষ; বারাণসী ব্রাহ্মণের ভারতবর্ষ; আগ্রা মোগলদিগের; আর জয়পুর রাজাদিগের ভারতবর্ষ— উপন্যাসের ভারতবর্ষ।’’ আবার আঁদ্রের প্রথম কলকাতা দেখার অভিজ্ঞতা: ‘‘সাদা ধুতি-পরা, ক্ষুদ্র, শীর্ণ, সুকুমার স্ত্রীসুলভ মুখশ্রীসম্পন্ন বাঙালিদিগের কলরব। ইহারা... কর্মশীল, চটুল, দ্রুতগামী ও জীবন-উদ্যমে পরিপূর্ণ।’’ এ যেন আঁদ্রে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের যুগলবন্দি!