অশোক মিত্র/ স্মৃতি ও কথা
সম্পাদক: প্রণব বিশ্বাস
৪৫০.০০
অনুষ্টুপ
‘আমার এই কার্যক্রমে আপনাদের মনের সায় না-থাকলে সবিনয়ে বলি, আমাকে ভোট দেবেন না।’ বলেছিলেন অশোক মিত্র। ১৯৮২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরে উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়ে প্রচারে বেরিয়েছিলেন তিনি। ‘কার্যক্রম’ বলতে প্রধানত বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার কারবার দমনে অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাঁর তৎপরতা, যা রাজ্যের অনেক মানুষকেই অশোকবাবুর প্রতি বিরূপ করেছিল। সেই কথা মনে রাখলে নির্বাচনী জনসভায় এমন চাঁচাছোলা উক্তি এমনিতে বিস্ময়কর বইকি। কিন্তু বক্তা অশোক মিত্র হলে সেই বিস্ময়ের বিশেষ কারণ থাকে না, কারণ তিনি ওই রকম চাঁচাছোলা কথাই বলতেন।
প্রণব বিশ্বাস তাঁর নিবেদন তথা ভূমিকায় ওই বক্তৃতার গল্পটি শুনিয়েছেন। ২০১৮ সালের মে দিবসে অশোক মিত্র বিদায় নিয়েছিলেন, দেখতে দেখতে দু’বছর হয়ে এল। এই সঙ্কলনটি সেই বিদায়ের পরেই পরিকল্পিত হয়েছিল। তেইশটি লেখা, তিনটি সাক্ষাৎকার বা সাক্ষাকার-ভিত্তিক নিবন্ধ, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত অশোক মিত্রের কিছু বাংলা ও কয়েকটি ইংরেজি লেখা, একটি সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত এবং তাঁর লেখা ইংরেজি ও বাংলা বইয়ের তালিকায় সমৃদ্ধ সম্ভারটি কর্মব্যস্ত মানুষটির জীবন ও কৃতিকে দুই মলাটের মধ্যে ধরে দেয়।
অশোক মিত্রের লেখাপড়া, চিন্তাভাবনা, রুচি-পছন্দ, সব কিছুর মধ্যেই বরাবর এক বিপুল বৈচিত্র ছিল। অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিক, প্রশাসক, পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল— এর প্রত্যেকটি অভিধাই তাঁর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, কিন্তু কোনওটির পরিসরেই তাঁকে পুরোপুরি আঁটানো সম্ভব নয়। এমনকি, আজীবন বামপন্থী আদর্শে অবিচল মানুষটিকে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের অধিকাংশ বামপন্থী দলনেতা কিংবা তাত্ত্বিকদের থেকে আলাদা করে চিনে নেওয়া যেত সহজেই। এমন মানুষকে এই বইয়ের বিভিন্ন লেখক স্বভাবতই দেখেছেন নানা দিক থেকে, আলো ফেলেছেন তাঁর বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন মাত্রার ওপর। কিন্তু সমস্ত লেখাতেই যে একটি সাধারণ এবং অনিবার্য কথা বার বার উঠে এসেছে, সেটি হল তাঁর মন ও মগজের সতেজ আগ্রহ। বাইরে কঠোর এবং অন্তরে সহৃদয় এই মানুষটি সম্পর্কে একটি বিষয়ে কারও দ্বিমত ছিল না: তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র। নিজের মতো।
কার্টুনে রবীন্দ্রনাথ
সুশোভন অধিকারী
২২০.০০
দেবভাষা
ভারতবর্ষকে অশিক্ষা আর কুসংস্কারের গোঁড়ামি থেকে টেনে বার করে আনতে গিয়ে রামমোহন, বিদ্যাসাগরের মতো মনীষীকে অনেক বিদ্রুপের আঘাত সইতে হয়েছে, দেশের কাজে ছাড় পাননি মহাত্মা গাঁধীও। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ? তাঁকেও কি মুখোমুখি হতে হয়েছিল এ ধরনের বিরোধিতার? গ্রন্থকার লিখেছেন, ‘প্রায় সারাজীবন রবি ঠাকুরকে ফেস করতে হয়েছে পাহাড়প্রমাণ বিরোধিতা।’ রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে দেশিবিদেশি শিল্পীদের আঁকা অজস্র কার্টুনের মধ্যে গগন ঠাকুরের ছবির কথা বলতেই হয়। কবির প্রথম বিমানবিহারকে কেন্দ্র করে আঁকা এই ছবির একাধিক ভার্সান দেখা যায়। তার মধ্যে একটি ছাপা হয়েছে গগন ঠাকুরের কার্টুনের তিনটি অ্যালবামের একটিতে। আলোচ্য বইটিতে কবিকে নিয়ে দেশিবিদেশি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত নির্বাচিত কার্টুনচিত্র যেমন জায়গা পেয়েছে, তেমনই তার প্রেক্ষাপটও প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরেছেন লেখক।