ভারতের জনজীবনে গঙ্গা শুধুমাত্র পবিত্র জলধারা নয়, ভারতবাসীর জীবন-জীবিকার অন্যতম অবলম্বনও বটে। বহু বছর ধরেই গঙ্গা এবং তার সহ-নদীগুলি গাঙ্গেয় অববাহিকার উন্নয়নে এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। অববাহিকা অঞ্চলের খাদ্য-বস্ত্রের জোগান দিয়েছে, অন্য দিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সেখানকার জীবন ও জীবিকারও উন্নতি ঘটিয়েছে। অথচ, একবিংশ শতকের গঙ্গা সেই মানুষেরই অপকর্মের কারণে ধ্বংসের সম্মুখে দাঁড়িয়ে। কথাগুলি লিখেছেন অমরচন্দ্র কর্মকার, তাঁর অথ গঙ্গা কথা বইটিতে। শুধু গঙ্গা দূষণই নয়, গঙ্গাকে জড়িয়ে থাকা পুরাণ ও কাব্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি, তার তীর্থক্ষেত্রের মহিমা— এমন নানা কথা বর্ণিত হয়েছে বইটিতে। একই সঙ্গে লেখক জানিয়েছেন, উন্নতির নামে গঙ্গাকে অবরুদ্ধ করে ফরাক্কায় যে ব্যারাজ নির্মাণ করা হয়, তা নদীপ্রকৃতির সার্বিক বিরুদ্ধাচরণ। এর ফলে হুগলি নদীর পলি দূর হল না, কলকাতা বন্দরের নাব্যতাও ফিরল না, কিন্তু বাঁধের কারণে বিবর্ণ হয়ে পড়ল ব্যারাজের উজান ও ভাটির লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন। কথাগুলি এমন এক সময়ে বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে, যখন উত্তরাখণ্ডের তথাকথিত ‘উন্নয়ন’, বাঁধের প্রাচুর্য এবং প্রায় নিয়মিত বিপর্যয় মানুষকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। সর্বোপরি, গঙ্গাকে বাঁচাতে সরকারের নানা পদক্ষেপ সত্ত্বেও তার ‘গঙ্গাপ্রাপ্তি’ যে ঠেকানো যাচ্ছে না, বইয়ের নানা তথ্য-পরিসংখ্যান সেই দিকটিতেও আলোকপাত করে।
অথ গঙ্গা কথা
অমরচন্দ্র কর্মকার
৩৫০.০০
নান্দনিক
দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি, আধুনিক বাংলাদেশ ও বাঙালি সত্তা নির্মাণে শেখ হাসিনার ভূমিকা কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে, এই প্রবন্ধ সঙ্কলনটির চর্চা তা নিয়েই। সঙ্গে গত দু’দশকে বাংলাদেশের গতিপ্রকৃতি বোঝার চেষ্টাটিও রয়েছে লেখাগুলিতে। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের, সমাজের নানা স্তরের, নানা পেশার ছেচল্লিশ জন লেখকের ভাবনাচিন্তার সূত্র এখানে ধরা পড়েছে। রয়েছে কবিতা ও ছড়াগুচ্ছ। প্রবন্ধগুলি চারটি শীর্ষকে বিন্যস্ত। হাসিনার নেতৃত্ব, বাংলাদেশের গান, সিনেমা, খাওয়াদাওয়া ইত্যাদি নিয়ে কথার সঙ্গে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার মতো বিষয় বা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সূত্রগুলি এই মুহূর্তে কোথায় দাঁড়িয়ে, রয়েছে তা নিয়েও আলোচনা। আগ্রহ তৈরি করে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা ও তার সঙ্গে লগ্ন রাজনীতির সঙ্গে কী ভাবে লড়াই করেছেন হাসিনা, তা নিয়ে লেখাটিও। ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ শীর্ষকের লেখাগুলিতে ব্যক্তি ও পারিবারিক পরিসরে শেখ হাসিনার উপস্থিতি ও ভূমিকার কথা উঠে এসেছে। হাসিনাকে কেন্দ্র করে নারী প্রগতির সোপান কোন খাতে বয়েছে, তিনি কী ভাবে ছোট্ট একটি দেশ থেকে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া ও বিশ্বেরও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতৃত্বের এক জন হয়ে উঠেছেন, তারও খোঁজ করতে চেয়েছে এই সঙ্কলন।
শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ
সম্পা: সুমন ভট্টাচার্য
৯০০.০০
শৈব্যা প্রকাশন বিভাগ
“আমি না লিখে পারি তাই লিখি না এবং না গেয়ে পারি না তাই গাই।” শঙ্খ ঘোষকে এক ব্যক্তিগত চিঠিতে লিখেছিলেন অমিতেশ সরকার। অবশ্য, ‘তবুও লিখে’ তিনি সঙ্গীতচর্চার ক্ষেত্রে একটি জরুরি সংযোজন করেছেন। আলোচ্য বইটির নতুন সংস্করণে যুক্ত হয়েছে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের লোকসঙ্গীত ও গণসঙ্গীত বিষয়ে একটি প্রবন্ধ। বইয়ে পূর্বপ্রকাশিত লেখাগুলিতে যেমন, নতুন লেখাটিতেও লেখক তেমনই গানকে দেখেছেন বিশ্লেষণের ভঙ্গিতে। অস্বীকার করার উপায় নেই, শঙ্খ ঘোষের মতো কিছু উজ্জ্বল ব্যতিক্রমকে বাদ দিলে বাংলা ভাষায় সঙ্গীতচর্চার বইয়ে বিশ্লেষণ বস্তুটি নেহাত সুলভ নয়। রবীন্দ্রসঙ্গীতের গায়নে লয়ের প্রসঙ্গে লেখক উত্থাপন করেছেন একটি কার্যত সর্বজনীন প্রবণতার কথা— গানের বাণীর সঙ্গে লয়ের সম্পর্কের কথা বিস্মৃত হওয়া।
প্রাণের গানের ভাষা
অমিতেশ সরকার
৩৫০.০০
ঋতাক্ষর
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘ওগো নদী, আপনবেগে পাগল-পারা’ গানটির দ্রুত লয়ের কথা বলে তিনি লিখেছেন, তাতে গানটি পাগল-পারা নদীর গান হয়ে ওঠে, গায়ক বুঝতে পারেন না যে, “এই গানে নদী নয়, বলা হয়েছে স্তব্ধ চাঁপারই কথা।” রবীন্দ্রনাথের শব্দের ব্যবহার, কী ভাবে সুর সেই কথার বাহন হয়ে ওঠে সেই বিশ্লেষণ ইত্যাদি বইটিকে সমৃদ্ধ করেছে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে তা যে সঙ্গীতের প্রথাগত দীক্ষাহীন পাঠকের কাছে জটিল মনে হতে পারে, সেই আশঙ্কা থাকছে।