—প্রতীকী চিত্র।
নদীমাতৃক বাংলায় একের পর এক নদী পরিণত হয়েছে নর্দমায়, খালে, দূষিত নালায়। যত বেশি বাঁধ তৈরি হয়েছে নদীর উপরে, যত বেশি বালি, নুড়ি, কাঁকর তোলা হয়েছে নদীর ভিতর থেকে, কৃত্রিম ভাবে ঘোরানো হয়েছে নদীর খাত, ততই শীর্ণ হয়েছে নদী। কৃষিজীবী, মৎস্যজীবী, নদীর উপর নির্ভরশীল মানুষ এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছেন, নয়তো খুঁজে নিয়েছেন নতুন জীবিকা। নদীকে আশ্রয় করে গড়ে-ওঠা গ্রাম তার নিজের সংস্কৃতি, নদী ঘিরে গড়ে-ওঠা লোককথা, লোকসঙ্গীত নিয়ে হারিয়ে গিয়েছে। নদীর পরিচয়, তার চার পাশের মানুষের হারিয়ে যাওয়া পরিচয় তাই নতুন করে আহরণ করতে হয় গবেষককে।
বহির্বিশ্বে ডাকটিকিটে বঙ্গবন্ধু
সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল
২৫০.০০
বাংলাদেশি টাকা
কবি প্রকাশনী
সেই কাজটিই করেছেন লেখক। তাঁর নোটবুকে এসেছে এমন অনেক নদী, যার নাম স্থানীয় মানুষরাই বিস্মৃত। আবার এমন নদীও, যাকে হত্যার পর্বটি চলছে পুরোদমে। বিশেষ ভাবে আক্রান্ত সীমান্তের নদীগুলি, যেগুলি বাঁচাতে দুই সরকারের যৌথ উদ্যোগ দরকার। লিখেছেন ভারতের অন্য এক রাজ্যে নদী মাফিয়ার কথা যারা সরকারকে টাকা দিয়ে (অবৈধ ভাবে) নদীর ঠিকা নিয়ে জলাধার গড়েছে উপরিভাগে। অববাহিকার নীচের অংশ আর জল চায় না, চাষিরা দেশান্তরি। এই ভাগ্য কি বাংলার নদীদের জন্যও অপেক্ষমাণ? এক দিকে সীমাহীন লোভ, অন্য দিকে নদীর প্রতি, মৎস্যজীবীর প্রতি উপেক্ষা অবহেলা, নদীর খোঁজ নিতে গেলে বার বার এই ছবি মেলে। দেখিয়েছেন, কেন নদীর ধারে বাস করেও পানীয় জল কিনে খেতে হয় স্বল্পবিত্ত মানুষকে। বইটি নদী আর নদী-নির্ভর প্রাণী ও মানুষের বিপন্নতার জীবন্ত দলিল, এক বিপজ্জনক বাস্তবকে তুলে ধরে।
নদীজীবীর নোটবুক
সুপ্রতিম কর্মকার
২৫০.০০
ধানসিড়ি
শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে প্রথম ডাকটিকিট বেরোয় বিদেশের মাটিতে। ১৯৭১-এর জুলাইয়ে ব্রিটেনে ‘বাংলাদেশ’ বিষয়ক আটটি ডাকটিকিট ডিজ়াইন করেন ভারতীয় বাঙালি বিমান মল্লিক, তার একটিতে ছিল বঙ্গবন্ধুর ছবি; প্রকাশ পায় মুজিবনগর সরকার, কলকাতায় বাংলাদেশ মিশন ও লন্ডন থেকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকার তথা ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’-এর জন্য স্বীকৃতি ও সমর্থন আদায়ে বিশেষ ভূমিকা ছিল সেই ডাকটিকিটের। তার পর থেকে আজ পর্যন্ত, বিশ্বের নানা দেশে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ডাকটিকিট প্রকাশ পেয়েছে— ভারতে তো বটেই, ভুটান, ফ্রান্স, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, তুরস্ক, ব্রাজ়িল, নাইজিরিয়াতেও; এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে। সেই ডাকটিকিটগুলির ছবি, এবং প্রাসঙ্গিক সংক্ষিপ্ত তথ্যের সমাবেশ ছোট্ট এই বইটিতে। তথ্যগুলি চয়িত বাংলাদেশের দৈনিক সংবাদপত্র ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যম থেকে, ইংরেজিভাষী পাঠকের জন্য রয়েছে ইংরেজি অনুবাদও। ডাকটিকিটপ্রেমী ও সংগ্রাহকদের কাজে দেবে। তবে অতি-আবেগের জেরে আছে ভুল তথ্যও: মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে ‘নিজ দেশ ছাড়া... অন্য দেশ থেকে ডাকটিকিট প্রকাশ পায়নি’! আন্তর্জাল ঘেঁটে দেখলেই উত্তর মেলে।
কটকটির উপাখ্যান
অলোকপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
২০০.০০
সিমিকা পাবলিশার্স
বারো-তেরো বছরের শ্যামলা মেয়েটা কটকট করে কথা বলে, তাই ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় নাম রেখেছিলেন ‘কটকটি’। মা-বাবার দশ মেয়ের কনিষ্ঠ, মেয়ের জন্মের সময় ঠাকুরদা বাইরে ঘড়ি হাতে বাইরে বসে ছিলেন, নাতি হবে, জন্মমুহূর্তটি দেখে রাখবেন। শাঁখ বাজল না, ঠাকুমা কান্না জুড়লেন, ‘আর একটা মেয়ের জন্ম দেওয়ার অপরাধে’ মা অজ্ঞান হয়ে গেলেন আঁতুড়ঘরে। সেই মেয়ে— সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়— জীবনযুদ্ধ শুধু দেখলেনই না, লড়লেনও কেমন করে, তারই বয়ান এ বই। সেখানে কুমিল্লা ঢাকা দেশভাগ কলকাতা আছে, সম্পন্ন জীবন অতল দারিদ্র দুই-ই আছে, সিনেমায় ‘এক্সট্রা’ হয়ে নেচে পাঁচ টাকা রোজগারের বাস্তব আছে, ডান্স ডিরেক্টরের থাপ্পড় খাওয়া আছে, দারিদ্র ঢাকতে বাড়ির বারান্দা পার্টিশন দিয়ে অতিথিকে বসানোর যন্ত্রণা আছে। আবার আছে এক ফিনিক্সের অপ্রাকৃত উড়াল: অভিনয় না শিখেও স্বপ্নের মতো পারফরমেন্স, নাটকের মঞ্চ, ছবি বিশ্বাস, উত্তমকুমার ও সর্বেন্দ্রের সঙ্গে ‘সম্পর্ক’কথা। রুপোলি পর্দায় ‘জ়িরো’ থেকে ‘হিরো’ হওয়ার কাহিনি কতই না দেখা যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের জীবনসত্য হার মানাবে তাকেও। অলোকপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের মরমি, দরদি গদ্যভাষা ধরতে চেয়েছে সেই জীবন। এ বই একশো পৃষ্ঠাও ছোঁয়নি, কিন্তু জীবন ছুঁয়েছে।