ভিন দেশের সিনেমা
নির্মল ধর
৬৫০.০০, সহজপাঠ
পায়ের তলায় সর্ষে নির্মল ধরের, ফিল্মের টানে এ-দেশ থেকে ও-দেশ ঘুরে বেড়ান, আবার নিজের দেশেও এ-রাজ্য ও-রাজ্য ঘুরে বেড়ান নানান আন্তর্জাতিক ফিল্মোৎসবে। কোথাও তিনি সাংবাদিক-সমালোচক, কোথাও-বা বিচারকমণ্ডলীর সদস্য। মোদ্দা কথা, ভিনদেশি সিনেমায় আসক্ত একজন নিষ্ঠ দর্শক তিনি। সেই সিনেমাদেখা-র অভিজ্ঞতা নিয়েই হাজির হয়েছেন পাঠকের মুখোমুখি। বিগত কয়েক বছরের বহু রকমের ছবি নিয়ে আলোচনা। শুরুতেই খেয়াল করিয়ে দিয়েছেন যে সিনেমা ‘অন্তহীন প্রবাহিণী এক শিল্পধারা!’ সেখানে ‘প্রবীণদের জায়গা নিচ্ছে নবীনের দল। তাঁদের কতটুকু আর খবর রাখি আমরা!’ জীবনের এই উচ্চাবচতা নিয়ত কী ভাবে প্রতিফলিত হয়ে চলেছে ছবিতে, তা নিয়েই তৈরি হয়ে উঠেছে লেখাগুলি। বিদেশি সিনেমার কথা উঠলেই এখনও আমাদের চোখের সামনে হলিউডি সিনেমার চেহারাটাই ভেসে ওঠে, সেই বৃত্তাবদ্ধ ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে নতুন স্বাদের সিনেমার খোঁজ দেবে এ-বই। কথামুখ-এ বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের বক্তব্য: ‘‘দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অসম্ভব প্রয়োজনীয় পরিচালক ও তাঁদের সিনেমা সম্পর্কে অক্লান্ত ভাবে লিখে চলেছেন।... ছবিগুলো যদি পাঠক দেখেও থাকেন, তাহলেও যেমন তাঁর ভাবনার সঙ্গে তিনি মিলিয়ে নিতে পারেন... আর যদি না দেখে থাকেন, তাহলে পাঠক অবশ্যই এই ছবিগুলো দেখার আগ্রহে থাকবেন।’’ প্রচুর ছবি ও বিবিধ ভাবনার পরিচালকদের সঙ্গে পাঠকের আলাপ করিয়ে দিতে-দিতে তাঁর এই বইটি প্রস্তুতির পিছনে অভিপ্রায়টুকু জানাতে ভোলেন না নির্মল ধর: ‘‘যাঁদের সিনেমায় এখনও ব্যবসায়ের আঁশটে গন্ধ লাগেনি, তাঁরা এখনও মনে করেন সিনেমা একটি সৃজনশীল শিল্পমাধ্যম, সামাজিক দায়বোধ প্রকাশের শক্ত হাতিয়ার।’’
জীবনপুরের পথিক/ অনুপকুমার
সম্পাদক: অভীক চট্টোপাধ্যায়
২৫০.০০, সপ্তর্ষি প্রকাশন
নিজের শিল্পীজীবনের পঞ্চাশ বছর পার করে লিখছেন অনুপকুমার: ‘‘আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় যদি কিছু থাকে সেটা হচ্ছে আমার এই অভিনয়শিল্প। আমি এমনিতে মেজাজে গল্প করতে ভালবাসি, কিন্তু গল্প করতে করতেও সেই ঘুরে-ফিরে অভিনয়ের প্রসঙ্গে চলে আসি। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় চাওয়া।’’ আবার পাশাপাশি এও লিখছেন ‘‘আমি যখন থেকে জেনেছিলাম যে শিল্পীর সব থেকে বড়ো হাতিয়ার তার নাটক, নাটকের মধ্যেই তার একটা রাজনৈতিক আদর্শ থাকবে,... তাহলে তার সামাজিক দায়বদ্ধতার কিছুটা পূরণ করা সম্ভব হবে।... সে সময় আমার মার্কসীয় মতবাদে একটা বিশ্বাস জন্মেছিল...’’। অনুপকুমারের আত্মকথনেই তাঁর মতো প্রতিভাবান অভিনেতাকে, তাঁর সময়-চারপাশ-অভিনেতৃকে চিনে নেওয়া যায়। তাঁর সারা জীবনের সঙ্গে, নানা কাজ কিংবা মুহূর্তের সঙ্গে জড়ানো স্থিরচিত্র আকর্ষণ বাড়িয়েছে বইটির। জীবনপঞ্জি ও উল্লেখ্য সম্মান-পুরস্কারের সঙ্গে আছে তাঁর বিশদ কর্মপঞ্জিও। নিজের বর্ণময় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি যেমন লিখেছেন উত্তম-সুচিত্রা, রবি ঘোষ, কালী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে, তেমনই লিখেছেন চার্লি চ্যাপলিন, মান্না দে, তরুণ মজুমদারকে নিয়েও। তরুণবাবুর ‘কথামুখ’খানি গৌরব বাড়িয়েছে বইটির: ‘‘যে চাইলেই সংযত অভিনয় করতে পারে তার কোনও অতি-অভিনয়, শুধুমাত্র তাঁর দোষ বলে চিহ্নিত হবে কেন?... পরিচালকের দাবি মেটাতে গিয়েই তাঁকে বদনাম কুড়োতে হয়েছে।... এক একটা ছবি, তার এক এক রকম চরিত্রে অনুপ অভিনয় করেছে। ওকে শিল্পী হিসাবে আমার সবসময়ই দরকার পড়েছে।’’
নজরবন্দী সিনেমা/ ভারতে ফিল্ম সেন্সরশিপের একশো বছর
সোমেশ্বর ভৌমিক
২৫০.০০, ছোঁয়া
গত বছর মার্চেই একশো পূর্ণ হল এ দেশের সিনেমাকে নজরবন্দি করার আইনটির। ১৯১৮-য় ব্রিটিশ সরকার চালু করেছিল এটি, চালু করার পিছনে যুক্তি ছিল নৈতিকতার, যদিও ইংরেজদের আসল উদ্দেশ্য ছিল পরাধীন ভারতে রাজনৈতিক খবরদারি। অবাক কাণ্ড, সেই খবরদারিই চালু রাখল স্বাধীন ভারতের গণতান্ত্রিক সরকার, নব কলেবরে। কিন্তু অনেকে যেমন মনে করেন যে স্বাধীনতার পর ঔপনিবেশিক আমলের রীতিনীতিগুলোই একটু-আধটু পাল্টে চলে আসছে, সে ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। লেখক জানিয়েছেন ‘‘স্বাধীন ভারতে ফিল্মের ওপর নজরদারি ব্যবস্থার রাজনৈতিক দর্শন, এর প্রশাসনিক খুঁটিনাটি এবং প্রয়োগপদ্ধতি সবই আগের আমলের নজরদারি ব্যবস্থার চেয়ে মূলে-স্থূলে আলাদা। অনেক জটিলও বটে।’’ আর সেই জটিলতাটাই প্রাঞ্জল গদ্যে দশটি প্রবন্ধে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন সোমেশ্বর ভৌমিক। প্রথমটিতে ব্রিটিশ শাসনে নজরদারির আদি পাঠ, পরের ন’টি প্রবন্ধে স্বাধীন দেশের সরকারের নতুন নজরদারি ব্যবস্থার খুঁটিনাটি বৃত্তান্ত। লেখকের মতে, রাষ্ট্রই চলচ্চিত্র নিয়ন্ত্রণের একমাত্র নিয়ামক নয়, রীতিমতো নাগরিক সম্মতির ভিত্তিতেই নজরদারির এক ব্যাপক মেশিনারি তৈরি করেছে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে নাগরিকদের এই কার্যকর ভূমিকা... ‘ব্যাপারটা লজ্জার’, জানাতে ভোলেননি সোমেশ্বর।