নেতাজির মৃত্যুর পর প্রায় আশি বছর অতিক্রান্ত। কিন্তু তাঁর মৃত্যু ঘিরে বিতর্ক এখনও কমেনি। আশিস রায়ের বইটিতে, সংবেত্তা চক্রবর্তীর অনুবাদে সেই বিতর্ক তৈরি হওয়া এবং এত দিন পরেও তা বজায় থাকার কারণের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। বইয়ের শুরুতেই ‘উদ্দেশ্য’ প্রসঙ্গে লেখক স্পষ্ট জানিয়েছেন, বইটি নেতাজির জীবনী বিষয়ক নয়। বরং তাঁর মৃত্যু ঘিরে বিভ্রান্তি কাটানোই মূল উপজীব্য। লক্ষ্য, এই সংক্রান্ত নথিবদ্ধ প্রমাণের যে ভান্ডার রয়েছে, তাকে প্রকাশ্যে আনাও। লেখকের দাবি, ১৯৪৫ সালের ১৮ অগস্ট তাইপেইয়ের এক বিমান দুর্ঘটনায় যে দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুবরণ করেছিলেন দেশনায়ক, এই নথিগুলিই তার অকাট্য প্রমাণ। বইটির মুখবন্ধ লিখেছেন নেতাজি-কন্যা অনিতা পাফ। তিনিও স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন— পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং ভারত সরকার নেতাজি-সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি প্রকাশ করে সময় পেরিয়ে যাওয়ার অনেক পরে। কোথাও কোনও রহস্যময় ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মেলেনি।
চিরবিশ্রাম: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বিতর্কিত মৃত্যুপ্রসঙ্গ
আশিস রায়,
অনু: সংবেত্তা চক্রবর্তী
৭৫০.০০
আনন্দ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ নতুন এই বইটি সাজিয়ে দিয়েছেন পাঠকদের জন্য। সংক্ষিপ্ত ভূমিকায় স্পষ্ট করেছেন বিশ শতকে পূর্ববঙ্গে মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ এবং প্রাক্-সাতচল্লিশ ও দেশভাগ-উত্তর সময়ে, ষাটের দশক ও ক্রমে মুক্তিযুদ্ধ পেরিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলা ছোটগল্প কোন লেখকদের কলমে পরিপুষ্ট হয়েছে, সেই কথা। উনিশ জন গল্পকারের একত্রিশটি ছোটগল্প সঙ্কলিত এখানে: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ আবু ইসহাক আল মাহমুদ শওকত আলী আখতারুজ্জামান ইলিয়াস হাসান আজিজুল হক যেমন আছেন, তেমনই সেলিনা হোসেন হুমায়ূন আহমেদ শহীদুল জহির ওয়াসি আহমেদ হয়ে নবীন প্রবংশের গল্পকাররাও। বাংলা ছোটগল্পের পদ্মাপারের ধারাটিও কেমন বেগবতী, বুঝতে পারা যাবে।
বাংলাদেশের নির্বাচিত গল্প
সম্পা: বিশ্বজিৎ ঘোষ
৪৫০.০০
নয়া উদ্যোগ
একটি ছোট জনপদকে কেন্দ্র করে আবর্তিত বইয়ের গল্প তিনটি। সেই জনপদ একই সঙ্গে বাস্তব ও অলীক, কারণ গল্পগুলি রচিত যে সময়খণ্ডকে কেন্দ্র করে, তা অতিক্রান্ত কয়েক দশক আগেই। তিনটি গল্পই প্রেমের, অথবা বিরহের; কিন্তু তার স্বাদ ভিন্ন। দীর্ঘতম গল্প, বইটির নাম যে গল্পের শিরোনামেই, এক যুবকের কথা বলে, যে শহরের এক যুবতীর প্রতি আকৃষ্ট, কিন্তু সে কথা তাকে বলে উঠতে পারে না। তার সফল সাহিত্যিক প্রেমিকের সঙ্গেও বন্ধুত্ব হয় যুবকের। এক দিন সেই যুবতীর বাড়িতে লোডশেডিংয়ে হারিকেনের আলোয় যুবকের চোখে পড়ে যায় তার অনাবৃত পা। সেটুকুই তার সম্বল। দ্বিতীয় গল্পটিতে আরও এক যুবক— পরিচয়ে সেও আগের যুবকের মতোই— দূর থেকে দেখে এক তরুণীকে। কালক্রমে সে যুবক লব্ধপ্রতিষ্ঠ সাহিত্যিক হয়, বহু দিন পরে ফিরে আসে শহরে, এবং সাক্ষাৎ হয় সেই তরুণীর সঙ্গে, যে এখন প্রৌঢ়া। তৃতীয় গল্পটি এক অসুস্থ কিশোরীর, যে নিজের যাবতীয় অপ্রাপ্তি প্রকাশ করে ছদ্মনামে লেখা গল্পে।
বন্ধুর প্রেমিকা, তার পায়ে
জয় গোস্বামী
৩০০.০০
ঋত
কোনও বই কেনার পর তাতে লেখকের সই সংগ্রহ করা অনেকের নেশা। কেউ আবার নতুন বইয়ে নিজের সই করে রাখেন, সঙ্গে তারিখ। কার বই, কার সই, তার উপরে নির্ভর করে সেই বই হয়ে উঠতে পারে অমূল্য সম্পদ। আমেরিকা-প্রবাসী বাঙালি চিকিৎসক মদনগোপাল মুখোপাধ্যায়ের সংগ্রহে ছিল এমনই কিছু বই। যেমন, রবীন্দ্রনাথের মাত্র সাত পাতার একটি লেখা, দ্য ট্রায়াল অব দ্য হর্স। স্যর এম ই স্যাডলরকে বইটি স্বাক্ষর-সহ দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আবার, স্যর আইজ়াক নিউটনের প্রামাণ্য জীবনী, নোবেলজয়ী পদার্থবিদ সুব্রহ্মণ্যম চন্দ্রশেখরের ব্যক্তিগত সংগ্রহে ছিল, তাঁর স্বাক্ষর-সহ। এমনই কিছু বইয়ের ছবি; সেই বই, লেখক ও ক্ষেত্রবিশেষে সংগ্রাহক সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে তৈরি আলোচ্য বইটি। তবে, এই সঙ্কলনে থাকা সব বই এবং সই সমান গুরুত্বের নয়, এ কথাও সত্যি।
স্বাক্ষরিত বইয়ের সন্ধানেমদনগোপাল মুখোপাধ্যায়
৫৯৯.০০
সৃষ্টিসুখ
তাঁর এক কথায় বিদেশে গবেষণা করতে যাওয়ার সুযোগ ছেড়ে কেউ যোগ দিয়েছিলেন পল্লি উন্নয়নের কাজে। আবার লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স থেকে পিএইচ ডি করে আসা অতি ধনী ব্রাহ্মণ পরিবারের তরুণ তাঁর নির্দেশে আশ্রমের খাটা পায়খানা পরিষ্কার করার ও মল বহন করার কাজ করেছিলেন। কেন গান্ধীর এই আপাত-অন্যায় নির্দেশও কেউঅগ্রাহ্য করতেন না? কেন নিজের যাবতীয় অহঙ্কারকে অনায়াসে বিসর্জন দিতেন? গান্ধীর সেবাশ্রম নিয়ে চার বিশিষ্ট মানুষের স্মৃতিচারণে এই প্রশ্নের একটা উত্তর খুঁজে পাওয়া সম্ভব— নিজে যা করতেন না, গান্ধী অন্যকে কখনও সেই কাজ করতে বলতেন না। তাঁর সঙ্গে ভিন্নমত হওয়া যায়, তাঁর যুক্তিকে প্রশ্ন করা যায়, কিন্তু তাঁকে অগ্রাহ্য করা অসম্ভব। শিবাজী আদকের স্বচ্ছন্দ অনুবাদ ও দিব্যেন্দু মজুমদারের অলঙ্করণ ক্ষীণায়তন বইটির আকর্ষণ বাড়িয়েছে।
সেবাগ্রাম: মহাত্মার সেবাগ্রাম আশ্রম নিয়ে অনবদ্য চার স্মৃতিকথন
অভয় বাং, অরুণ গান্ধী, শ্রীমান নারায়ণ, ই স্ট্যানলি জোন্স,
অনু: শিবাজী আদক
২০০.০০
দীপ
জীবনানন্দ প্রায়ই কবিতার খাতার এক প্রান্তে প্রস্তাবিত কিছু কবিতার বইয়ের নাম লিখে রাখতেন, তা থেকেই পছন্দমতো এ নামটি নির্বাচন করেছেন সম্পাদক, এই বইয়ের জন্য। কালানুক্রম রক্ষা করা হয়নি যদিও, তবুও মোটামুটি বলা যায়, ১৯৪৬-৫৪ কালপর্বে লেখা কবিতাগুলি। তখন তিনি বরিশাল থেকে এসে কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন। “পাণ্ডুলিপির খাতাতে মানসিক বিশৃঙ্খলার ছাপ স্পষ্ট... বারবার পরিমার্জনা করছেন,” জানিয়েছেন সম্পাদক। ছিন্নমূল হওয়ার জন্যে চাকরি কিংবা পারিবারিক জীবনে থিতু হতে পারছেন না বলেই কি? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, দাঙ্গা, দেশভাগের অভিঘাত পারছেন না এড়াতে? ৫৯ নং কবিতায় লিখছেন: “জাফরির ছায়াকাটা পূর্ণিমা চাঁদ হয়ে আসে/ বাঘিনীর গাঢ় মুখ সে কার তালাশে।” আমরা তাঁর আরও অপ্রকাশিত কবিতার অপেক্ষায় রইলাম।
জ্যোতিতিমির: অপ্রকাশিত জীবনানন্দ
সম্পা: গৌতম মিত্র
৬০০.০০
লা স্ত্রাদা
১৩৩৫ বঙ্গাব্দের কার্তিক সংখ্যা প্রবাসী-তে ‘নাম্নী’ শিরোনামে ১৭টি কবিতা বেরোল রবীন্দ্রনাথের, পরের বছর প্রকাশিত মহুয়া কাব্যে অন্তর্ভুক্ত হল সেগুলি। এ বারেও শিরোনাম ‘নাম্নী’, তবে যুক্ত হল উপশিরোনাম: শ্যামলী কাজলী খেয়ালী কাকলী পিয়ালী জয়তী মালিনী প্রতিমা নন্দিনী ঊষসী ইত্যাদি। সুকুমার সেন কবিতাগুলিকে বলেছেন ‘চিরকালের নায়িকা রত্নমালা’। এই কবিতাগুলিই অসিতকুমার হালদারের কল্পনায় অন্য রূপ পরিগ্রহ করল কিছু বছর পরে। ১৯৪১-এ, জীবিতাবস্থায় রবীন্দ্রনাথের শেষ জন্মদিনে লখনউ থেকে প্রকাশিত একটি পুস্তিকা ‘প্রণামী স্বরূপে উপহার’ পাঠালেন অসিতকুমার, নাম নাম্নীর নামে। সচিত্র কবিতার বই: রবীন্দ্রনাথের সতেরো নায়িকার বর্ণনা অবলম্বনে নতুন করে লেখা কবিতা, সঙ্গে চিত্রণ। তারই প্রাসঙ্গিক তথ্য, পাঠ, আলোচনা এই বইয়ে; জরুরি কাজ।
অরণ্যদেব
কৌশিক
৩৪৯.০০
নেচারিজ়ম
লেখক পেশাদার চিত্রগ্রাহক। বন্যপ্রাণ পর্যবেক্ষণই নেশা। চষে বেড়িয়েছেন ভারতের অরণ্য, আন্ডারওয়াটার ফোটোগ্রাফি করতে ডুব দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার জলে। সেই অভিজ্ঞতা, দুই মলাটে। ২২টি লেখায় বাঘ, সিংহী, কালো ভালুক, মরুশিয়াল, নীল তিমি, স্নো লেপার্ডের আচরণ বিশ্লেষণ করেছেন, তাদের ঘিরে থাকা কিংবদন্তিরও খোঁজ দিয়েছেন। কিছু নামকরণ ও মুদ্রণের ত্রুটি এড়ানো উচিত ছিল। ঘোষিত ভাবেই ‘জার্নাল’-এর লিখনশৈলীতে জোর দিয়েছেন। রঙিন ছবির সংখ্যা বাড়ালে, বড় পরিসরে ছাপলে দুর্মূল্য মুহূর্তের ছবিগুলির অভিঘাত বেশি হত। তবে, মানুষকে ‘এই গ্রহে না-মানুষ সহ-অধিবাসীদের বিষয়ে আরও একটু জিজ্ঞাসু’ করার উদ্দেশ্যটি সফল।
হেমন্ত: শতবর্ষ পেরিয়ে
সম্পা. ধ্রুবজ্যোতি মণ্ডল
৪০০.০০
দে বুক স্টোর
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের শতবর্ষ অতিক্রান্ত হয়েছে কয়েক বছর আগেই। সে সময় তাঁকে নিয়ে বই প্রকাশের ঢল নেমেছিল। তার পরও এই সঙ্কলনটিতে এমন কিছু তথ্য রয়েছে, যা আগে চোখে পড়েনি। যেমন, হেমন্তবাবু যে একাধিক নজরুলগীতি রেকর্ড করেছিলেন, সে তথ্যটি খুব পরিচিত নয়। তা ছাড়াও, বিশ্বনাথ বিশ্বাসের প্রবন্ধ জানাচ্ছে, ‘শুকনো পাতার নূপুর পায়ে’ গানটির সুর ভেঙে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তৈরি করেছিলেন তাজ (১৯৫৬) ছবির ‘ঝুম ঝুম কর চল অকেলি’ গানটি। বলিউডের গান নিয়ে সুপান্থ বসুর প্রবন্ধটিও মনোগ্রাহী। সঙ্কলিত হয়েছে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের লেখা চারটি নিবন্ধ, তাঁকে নিয়ে গুণিজনদের স্মৃতিচারণ, এবং বেশ কয়েকটি বিশ্লেষণাত্মক প্রবন্ধ।
নাম্নীর নামে অসিতকুমার হালদার, সম্পা: বিজন ঘোষাল
৬৫০.০০
খসড়া খাতা
এই সঙ্কলনের গল্পগুলির কোনও তাড়া নেই, কোথাও যাওয়ার নেই। এক-একটা অকিঞ্চিৎকর মুহূর্তকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় গল্প, হয়তো ফুরিয়েও যায় সেখানেই। তবু, রেশ থেকে যায়। ‘উত্তমকুমার মণ্ডল’ নামের গল্পটিতে যেমন এক চল্লিশোর্ধ্ব নারীর কথা আসে, মানসিক ভারসাম্য খুইয়েছেন তিনি। তাঁর ঘরে দেওয়াল-জোড়া উত্তমকুমারের ছবি, দেওয়ালে লিখে রাখা বিভিন্ন সিনেমার নাম। সন্তান হলে তাদের নাম হবে এইগুলো। এখানেই ফুরিয়ে যায় বইয়ের গল্প, কিন্তু পাঠকের মনে তার বিস্তার ঘটাই স্বাভাবিক। ‘প্রত্যক্ষদর্শী’ গল্পে রয়েছে এক অপ্রাসঙ্গিক খচ্চরের কথা, যে ঘাস খেতে খেতে ট্র্যাফিক পুলিশকে দেখে ভাবে, এই লোকটা এক দিন আমার পিঠে চড়তে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল। মূল গল্পের সঙ্গে এই অংশটুকু আপাত-সংযোগহীন। কিন্তু যে মানুষ দু’টির কথা এই গল্পের কেন্দ্রে, তারাও কি ওই খচ্চরটার মতোই নয়, সামান্য ক্ষমতাবান যে কেউ চড়ে বসতে পারে তাদের উপরে? অবশ্য, পড়েও যেতে পারে— সেটুকুই ভরসা।
গোরখপুর হসপিটাল ট্র্যাজেডি কাফিল খান,
অনু: অসীম চট্টোপাধ্যায়
৪৫০.০০
সেতু
এ সেই ভয়ঙ্কর সময়কে ফিরে দেখা, মৃত্যু আর আঘাতে যা পদে পদে দীর্ণ। গোরক্ষপুরের বাবা রাঘবদাস সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২০১৭-র অগস্টে বিপুল টাকা বাকি থাকার জেরে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, মৃত্যু হয় ৬৩ জন শিশু-সহ আরও বহু রোগীর। রোগীদের বাঁচাতে একা হাতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন চিকিৎসক শিক্ষক কাফিল খান, অথচ পরে তাঁকেই গ্রেফতার করে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ, দোষী সাব্যস্ত করে কারাবন্দি করেরাজ্য সরকার। মুক্তি মিলেছে, তবে ব্যক্তিগত পারিবারিক আর্থ-সামাজিক চরম মূল্যে। মামলা চলছে এখনও। কর্মচ্যুত চিকিৎসক হয়ে উঠেছেন পথের কর্মী, লিখেছেন সেই বিপন্ন সময়ের কথা। ইংরেজি সেই স্মৃতিকথাই এ বার বঙ্গানুবাদে।
অন্ধকারের শাহ জাহানবোধিসত্ত্ব ভট্টাচার্য
৩০০.০০
মান্দাস
উৎসর্গপত্রে রবীন্দ্র-কবিতা ভেঙে লেখা, ‘ব্যোমকেশের কর্মভূমি কলকাতার চেয়ে সত্য জেনো’। কারণ, অধিকাংশ গল্পই কলকাতার পটভূমিকায় লেখা হলেও বর্তমান বইটির লেখক দেখিয়েছেন, শরদিন্দু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বড় জোর নির্দিষ্ট এলাকাটি উল্লেখ করেছেন মাত্র, তার চেয়ে গভীরে যাননি কলকাতার। বহু ক্ষেত্রে ‘স্থানটা শহরের উত্তরাংশে, ভদ্র বাঙালী পল্লির কেন্দ্রস্থল’ গোছের কথা বলে দায় সেরেছেন। ব্যবহার করেছেন কাল্পনিক নাম, ল্যান্ডমার্ক। কাহিনিসূত্র ধরে লেখক সে সব এলাকা ঠিক কোথায় হতে পারে, অনুমানের চেষ্টা করেছেন। সেই অনুসন্ধান উপভোগ্য, তবে ব্যোমকেশের মতো অতি সুখপাঠ্য কাহিনির আলোচনা আর একটু রসগ্রাহী হলে ভাল হত। অনুসন্ধানের কাজে লেখক কোনও প্রতিষ্ঠিত কলকাতা-বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিলে ব্যোমকেশ-কাহিনিতে নিহিত শহরের আরও কিছু পরিচয় মিলত।
ব্যোমকেশ বক্সীর কলকাতা
প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত
৩০০.০০
রাবণ
কলকাতা মানেই শুধু ভিক্টোরিয়া পার্ক স্ট্রিট জাদুঘর চিড়িয়াখানা নয়। প্রিন্সেপ ঘাট মার্বেল প্যালেসের বাইরেও আছে এমন সব প্রাচীন ইতিহাসচিহ্ন, আজকের কলকাতাই যাদের জানে-চেনে কম। সাংবাদিকের অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে সেই চিহ্নগুলি খুঁজে বার করেছেন লেখক: নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার আঁতুড় তালতলার বাড়িটি, মল্লিকবাজারের গ্যাসচুল্লি, নিউ টাউনের কোচপুকুর ঢিবি, মুরারিপুকুরের বোমার মাঠ, দমদমে পিয়ার্স সাহেবের স্মৃতিস্তম্ভ ইত্যাদি। গল্পের ছলে ইতিহাসের সহজ বুনন।
কলকাতার অজানা হেরিটেজ
আর্যভট্ট খান
২৭৫.০০
বুক ফার্ম
ঔপনিবেশিক বাংলার ইতিহাস নিয়ে যাঁরা আজ গবেষণা করেন, তাঁরা যখন ছাত্রছাত্রী ছিলেন, এই বইয়ের ইংরেজি ভাষ্যটি ছিল তাঁদের অন্যতম প্রধান পাঠ্য। ১৯৯১ সালে প্রকাশিত সেই বই, কমিউনাল রায়টস ইন বেঙ্গল ১৯০৫-১৯৪৭ এত দিনে অনূদিত হওয়ায় বিশেষ উপকৃত হতে চলেছেন বাংলার ইতিহাস পড়ুয়ারা। এই গুরুত্বপূর্ণ বইটির মূলগত কোনও পরিবর্তন করা হয়নি, কিন্তু একটি সুলিখিত প্রাক্কথনে লেখক এমন ভাবে মাঝের এই পর্বটিকে ধরে দিয়েছেন, যা যা জরুরি কাজ হয়েছে সেগুলি উল্লেখ করে সংযোজন করেছেন, যা তাঁর মতো সুশিক্ষকই কেবল করতে পারেন। দেশভাগ অনিবার্য ছিল না, কিন্তু তাও যে ১৯৪০-এর দশকের বঙ্গ-রাজনীতির সাম্প্রদায়িক ধারা ক্রমে তা বাস্তব করে তুলল, এই বইয়ে সেই যাত্রাপথের দক্ষ বিশ্লেষণ। বাংলা অনুবাদের মাধ্যমে তা বৃহত্তর ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়বে, এ নিয়ে সন্দেহ নেই কোনও।
বাংলায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ১৯০৫-১৯৪৭
সুরঞ্জন দাস
৬০০.০০
কে পি বাগচী