অতিমারি হানা দেওয়ার আগে সংশোধিত নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে এক অভূতপূর্ব প্রতিবাদ দেখেছিল ভারত, তথা গোটা বিশ্বও। দিল্লির শাহিন বাগে দেশের সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন শয়ে শয়ে মেয়ে। ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর সংসদে পাশ হয় নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন, সংক্ষেপে ‘সিএএ’। চার দিন পরেই জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া-র ক্যাম্পাসে ঘটে দিল্লি পুলিশের ভয়ানক ‘আক্রমণ’। এই সব কিছুরই প্রতিবাদে শাহিন বাগে জড়ো হয়েছিলেন মূলত মুসলিম মহিলারা, সঙ্গে আরও অসংখ্য নাগরিক— সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। শাহিন বাগ আন্দোলনের সমস্ত ঘটনাকে দুই মলাটে ধরেছেন ইতা মেহরোত্রা। নয়া দিল্লির অধিবাসী ইতা পেশায় কমিক্সশিল্পী এবং গবেষক। সদ্য প্রকাশিত তাঁর এই বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের অধ্যাপিকা গজ়লা জামিল।
আলোচ্য বইটিকে যে ঘ-রানায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়, এক কথায় তা হল ‘কমিক্স জার্নালিজ়ম’। এ ক্ষেত্রে সাংবাদিক একের পর এক ছবি এঁকে এঁকে ঘটনার রিপোর্ট তৈরি করেন। উনিশ শতকের শেষ দিকে, ফোটোগ্রাফি পূর্ববর্তী জমানায় এই ধরনের সাংবাদিকতা ইউরোপে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজ়, দ্য গ্রাফিক, লে পেতি জার্নাল ইত্যাদি পত্রপত্রিকার হাত ধরে। ফোটোগ্রাফির যুগে এই ঘরানা একা হাতে পুনরুদ্ধার করেন কার্টুনিস্ট জো স্যাকো, নব্বইয়ের দশকের শুরুতে প্রকাশিত তাঁর বিখ্যাত বই প্যালেস্টাইন-এর মাধ্যমে। স্যাকোর পথেই হেঁটেছেন ইতা। তাঁর বইয়েও একের পর এক আঁকা ছবিতে জীবন্ত হয়ে উঠেছে শাহিন বাগ আন্দোলন। এবং, তাঁর এই বই ইতিমধ্যে খোদ স্যাকোর প্রশংসা কুড়িয়ে নিয়েছে। এই বইয়ে রয়েছে মোট চারটি অধ্যায়।
শাহিন বাগ আন্দোলনের নেপথ্যে থাকা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং বহু আন্দোলনকারীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তো আছেই, পাশাপাশি রয়েছে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে এই আন্দোলনের প্রভাবের কথাও। প্রতিবাদী, অস্থির সময়ের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে থাকবে এই কমিক্স বই।