আগুনের অবাক ফোয়ারা
মৃদুল দাশগুপ্ত
২৭০.০০
বোধশব্দ
দশ বছর পার করে একটা কবিতার বই। দশ বছর অনেকটা সময়— আরও একটা প্রজন্ম পড়ে ফেলেছে জলপাই কাঠের এসরাজ, সূর্যাস্তে নির্মিত গৃহ, ধানখেত থেকে, সোনার বুদ্বুদ। অপেক্ষা করেছে, কবে আবার ‘সহায়’ হবে কবিতা। শুনেছে, কবিতার সামাজিক দায় বা বার্তা নেই, আছে পাঠককে স্পর্শ করতে চাওয়ার ইচ্ছে। জেনেছে, মার্কেজ়ের সেই চিরন্তন পঙ্ক্তি— “কবিতাই একমাত্র পারে ভবিষ্যদ্বাণী করতে।” (সেল মাই ড্রিমস)
মৃদুল দাশগুপ্ত বলেন, “বছরে সাত-আটটি কবিতা লিখে ফেলতে পারলেই তুষ্ট থাকি।” এমন তিল তিল তুষ্টিতেই গড়ে উঠেছে এ কাব্যগ্রন্থ। কবিতা লিখে লিখে ঝুলিতে ভরে রাখতেন, মাঝেমধ্যে ওজন করে কবিতার সংখ্যা অনুমানের চেষ্টা করতেন— এমন করেই এক দিন তা একশো ছাড়িয়ে যায়। অতিমারির গৃহবন্দি দশায় সে ঝুলি উপুড় করেছিলেন কবি। অতঃপর জন্ম নেয় আগুনের অবাক ফোয়ারা। যদিও এ বইয়ের বিভাব কবিতা লেখা হয়ে গিয়েছিল সেই ২০১২ সালে। সিদ্ধান্তও হয়ে গিয়েছিল, কবিতার সংখ্যা একশো পেরোলে বই হবে। কবির ভাষায়: ‘আবার প্রভাতে হাসি খিলখিল— আমাদের একশত ছেলে/ তখন মুদ্রণে দিও, ওরা যেই চেঁচাবে— জননী’। তখনও জানা ছিল না, গ্রন্থ প্রকাশের কাল হবে এক অভূতপূর্ব অতিমারি— প্রতিটি প্রভাতই যখন রাতের মতো অন্ধকার। তবু, অজ্ঞাতেই মুক্ত আলো-বাতাসের খোঁজ দিতে থাকে কবিতাগুলি।
পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস (আদি পর্ব )
অমলেন্দু চক্রবর্তী
২০০.০০
সূত্রধর
পশ্চিমি পণ্ডিতদের অধিকাংশ গ্রিসকেই দর্শনশাস্ত্রের আদি জন্মভূমি মানেন। অমলেন্দু চক্রবর্তী তাঁর এই বইটিতে সে কথা উল্লেখ করে জানিয়েছেন, “মোটামুটিভাবে বলা যায়, গ্রীসে দার্শনিক আলোচনা শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে।... পাশ্চাত্য দর্শনের আদিপর্বের সূচনা আমরা দেখতে পাই গ্রীক-দর্শনের অভ্যুদয়ের মাধ্যমে। এখানে উল্লেখ্য এই যে প্রাচীনতম গ্রীক-দার্শনিক থালেস-এর সময়ে ভারতীয় দর্শনও অনেকটা পরিণতি লাভ করেছিল। ঐতিহাসিকদের মতে গ্রীক দর্শন প্রাচীন চৈনিক দর্শন ও মিশরীয় দর্শনের কাছে কিছু পরিমাণে ঋণী। গ্রীক দার্শনিকরা দর্শনের সমস্যাগুলিকে যে আকারে উপস্থিত করেছিলেন, সেগুলি ইউরোপে বর্তমান সময় পর্যন্ত অনেক পরিমাণ সেই আকারেই মনীষীদের চিন্তা প্রবাহিত করেছে।” দর্শনের প্রবীণ অধ্যাপক হিসাবে অমলেন্দুবাবু দর্শনপ্রিয় পাঠককে তাঁর অনুপুঙ্খ অথচ সাবলীল আলোচনার মাধ্যমে এক দিকে যেমন দর্শন শাস্ত্রের গূঢ়তায় পৌঁছে দিয়েছেন, অন্য দিকে তেমনই দর্শনের শাস্ত্রজনিত তর্ক ও তত্ত্বসূত্রগুলি উন্মোচন করেছেন। পিথাগোরাস, হেরাক্লিটাস, সক্রেটিস প্রমুখ বিভিন্ন দার্শনিকদের নিয়ে আলোচনার মধ্যে লেখক সবচেয়ে বেশি স্থান দিয়েছেন প্লেটো আর অ্যারিস্টটলকে। কারণ তিনি মনে করেন, “প্রাকৃতিক জগৎ এবং মানুষকে মিলিয়ে যে সত্য বিরাজ করে... সেই পরম সত্যের স্বরূপকে আবিষ্কার করাই দর্শনের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। এ কাজের ভার যাঁরা নিলেন, মানুষের ইতিহাসে তাঁরা চিরস্মরণীয়। তাঁদের নাম প্লাতো এবং তাঁর ছাত্র ও শিষ্য আরিস্তোতল।”
স্বাধীনোত্তর কালে মালদহ জেলার রাজনীতি ও নির্বাচন
সমর কুমার মিশ্র
৪০০.০০
রাজনীতিতে বাঙালির আগ্রহ সর্বজনবিদিত, হাটে-মাঠে-বাটে তারা বিশ্লেষকের ভূমিকায়। রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিলেও তার আগ্রহ স্বাভাবিক। বইয়ের উৎসর্গপত্রে লেখক জানান: ‘...রাজনীতি সচেতন সকল মানুষের উদ্দেশে গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হল’। বইয়ের বিষয়, স্বাধীনতা-উত্তর সাত দশকে মালদহের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি। সে কালের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের অধিকাংশই জীবিত নেই। বিভিন্ন সূত্র ও নিজের অভিজ্ঞতায় ভর করেই রাজনীতি ও নির্বাচনের তথ্য সাজিয়েছেন লেখক। জেলার বিধানসভা, লোকসভা ভোটের ফল বছরের ক্রম অনুযায়ী রয়েছে, আছে দল ও নেতা-মন্ত্রীদের পরিচয়ও। ২৫ বছর কংগ্রেস, ৩৪ বছর বামফ্রন্ট এবং ১০ বছরের বেশি তৃণমূলের শাসন চললেও, মালদহে আধিপত্যের ছবিটা ব্যতিক্রমী। ভরা বাম আমলেও সেখানে কংগ্রেসের দখল। যদিও জনমানসে মালদহ আর কংগ্রেস যতখানি অঙ্গাঙ্গি, তাতে অতিকথন আছে। সিপিএম তো বটেই, সিপিআই, আরএসপি-রও সাংগঠনিক জোর ছিল মালদহে। এ বইয়ে রাজনীতির বিশ্লেষণও আছে, তবে তা এত সরলরৈখিক যে, ভ্রান্তির আশঙ্কাও থেকে যায়। এমন শুষ্কং কাষ্ঠং পরিবেশনা সাধারণ পাঠককে কতটা ছুঁতে পারবে, সে প্রশ্ন থেকেই গেল।