প্রতীকী ছবি।
সাইবার স্পেসে নারীসুরক্ষা এবং এই বিষয়ে দেশের আইনি ব্যবস্থার ফাঁকফোকর নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন দুই লেখক। বইটি নেটমাধ্যমে নারীদের উপরে ঘটে চলা নিরন্তর হয়রানি বিষয়ে সমাজতত্ত্ব ও আইনের পরিসরে বাঁধা একটি গবেষণাধর্মী কাজ। লেখকরা স্পষ্ট করে বলছেন যে, যত দিন ভারতে এই বিষয়ে কোনও সাধারণ সর্বাত্মক আইন প্রণয়ন হচ্ছে না, এর কোনও স্থায়ী সমাধান হবে না। প্রতি মুহূর্তে বেড়ে চলা এই সমস্যার একটি কারণ: এ জাতীয় অপরাধের শিকার হওয়া মহিলারা বিষয়টা ভাল বোঝেন না, কোন পর্যায়ের পর চতুর আগ্রাসন অপরাধের আওতায় এসে পড়ে, সেই সচেতনতা অধিকাংশেরই নেই। ন’টি অধ্যায়ে বিশদে বাক্স্বাধীনতা, ট্রোলিং, ব্যক্তিপরিসরে আক্রমণ, বুলিয়িং, মর্ফিং, সেক্সুয়াল ডিফেমেশন, পর্নোগ্রাফি, স্পুফিং ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা রয়েছে। একেবারে শেষে রয়েছে আইনের সাহায্যে এর মোকাবিলা করার প্রসঙ্গটি। লেখকেরা এ ধরনের অপরাধের মোকাবিলা বিষয়ে দেশের ন্যায় ব্যবস্থায় চলতে থাকা বিভিন্ন বিতর্ক নিয়ে আলোচনা করেছেন, বুঝতে ও বোঝাতে চেয়েছেন সাইবার অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থায় আইন কী ভাবে সহায়ক হতে পারে। এই সংক্রান্ত তথ্য ও তার ব্যবহারযোগ্যতা এক জন সাধারণ মানুষের কাছে কী ভাবে পৌঁছচ্ছে, কিংবা আদৌ যথেষ্ট পৌঁছচ্ছে কি না, সে কথাও আলোচিত। বিষয় এবং উদ্দেশ্য যে হেতু একটি বহমান সামাজিক সমস্যার সমাধান, এর কাঙ্ক্ষিত পাঠকও কোনও বিশেষ গোষ্ঠী নন। এই বইটি পড়ে অনুসন্ধিৎসু পাঠক ও গবেষক সকলেরই নানান প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তর মিলতে পারে। কোভিড অতিমারি রুখতে লকডাউন ঘোষণা করল সরকার, আর পুলিশের সঙ্গে চোর-পুলিশ খেলা শুরু করল মানুষ। অধিকাংশই লকডাউনকে নিলেন অপ্রত্যাশিত ছুটি হিসেবে। নদীর চরে পিকনিক, থলে হাতে বাজার, পাড়ার আড্ডা, কিছুই থেমে রইল না। পুলিশ এসে তুলে দেয়, তাড়িয়ে দেয়, আবার শুরু হয় জমায়েত।
সাইবার ক্রাইমস এগেন্সট উইমেন ইন ইন্ডিয়া
দেবারতি হালদার, এইচ জয়শঙ্কর
৭৯৫.০০
সেজ
“লোকজনের এই রকম ব্যবহার দেখে কতবার মনে হয়েছে, দায় যেন শুধু পুলিশের একারই,” লিখছেন চয়নকুমার ঘোষ। তিনি তখন বাঁকুড়ার ইন্দাস থানায় কর্মরত। এর ক’দিন পরেই বদলে যায় পুলিশের ভূমিকা— নির্বাচনী জনসভা, আর টিকাকরণের শিবিরের সামনে ভিড় সামাল দেওয়া হয় তার ডিউটি। চিকিৎসক, আমলা, শিক্ষক, হকার, হস্তশিল্পী, দিনমজুর, পরিযায়ী শ্রমিক, গৃহবন্দি গেরস্তজন, নানা মানুষের চোখে নানা ভাবে এসেছে করোনাকালের বৃত্তান্ত। সম্পাদক বইটিকে সাজিয়েছেন আটটি ভাগে— স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামো, হতভাগাদের দল, মধ্যবিত্তের শৌখিনতা, মনের কথা, বিনোদন ও সংস্কৃতি, এবং বেঁচে থাকার গান। তাঁর ভাষায়, বইটি ভাঙাচোরা গল্পদের দস্তাবেজ। প্রথমে অগণিত মৃত্যুর আশঙ্কা, আর তার পর মৃত্যুগণনা অভ্যাস হয়ে যাওয়া, মৃত্যুর খবর ‘বোরিং’ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা— এই দোলাচলের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে এই সঙ্কলনটি।
করোনার কড়চা: মহামারির আলোআঁধারিতে বাংলার মুখচ্ছবি
সম্পা: অন্তরা মুখোপাধ্যায়
৫৫০.০০
রূপালী
“...জঙ্গলের ডাঁশ মৌমাছির সাথি পালা মাছির লড়াই নেগেছে। এই লড়াই তো যুদ্ধের চাইতেও বড় যুদ্ধ।” সত্যি, জীবনযুদ্ধের মতো বড় সংগ্রাম আর কী বা হতে পারে! কোন সংগ্রাম? সুন্দরবন ও সেখানকার বাসিন্দাদের বিচিত্র বিপদের কথা বহির্বিশ্বের কাছে অজ্ঞাত নয়, বিশেষত এই জলবায়ু সঙ্কটের দিনে, কিন্তু সসীমকুমার বাড়ৈ যে বাস্তবের প্রেক্ষিতে এই উপন্যাসের আখ্যান বুনেছেন, তার খবর হয়তো এখনও কলকাতা পর্যন্তও পৌঁছয়নি। মূল ভূখণ্ড থেকে মৌ-পালকদের বয়ে নিয়ে যাওয়া ‘অনুপ্রবেশকারী’ পোষা মৌমাছির (এপিস্ মেলিফেরা) সঙ্গে ইদানীং সংঘাত তৈরি হয়েছে সেই জঙ্গলের ভূমিপতঙ্গ ডাঁশ বা বাঘা মৌমাছির (এপিস্ ডরসাটা)। এই লড়াই প্রকৃতির পক্ষে বিপজ্জনক— তাতে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে বাদাবন। স্বভাবতই, তার ফলে ক্ষতির মুখে পড়ছে দ্বীপবাসী অন্ত্যজ মানুষের জীবন ও জীবিকাও। এই কাহিনি পাল্টা লড়াইয়ের— আপন অস্তিত্ব রক্ষার। চূর্ণী নামে এক সাধারণ যুবতী যখন ‘মহাল’-এ (মধু ভাঙার কাজ) গিয়ে জানতে পারে এই বিপদের কথা, মৌমাছির লড়াই থামাতে রুখে দাঁড়ায় সে— বহিরাগতদের বলের বিরুদ্ধে। অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই যে, এমন জীবন থেকে তুলে আনা কল্পকাহিনির উপস্থিতি এখনকার বাংলা সাহিত্যে বিরল।
সুন্দরবনের মহাল কইন্যা
সসীমকুমার বাড়ৈ
২০০.০০
একুশ শতক