কবির কৈফিয়ত
সম্পাদক: অভ্র বসু
মূল্য: ২৫০.০০
প্রকাশক: ছোঁয়া
বইটি রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য বিষয়ক ২৯টি রচনার সংকলন। সম্পাদক অভ্র বসু জানিয়েছেন, ‘সারা জীবন নানা প্রবন্ধে, বক্তৃতায় বা চিঠিপত্রে সাহিত্য বা নন্দনতত্ত্ব সম্পর্কে তিনি তাঁর ভাবনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। সেগুলি বরাবর একমাত্রিক থাকেনি, নিজেই নিজের ভাবনা থেকে সরে গেছেন, নিজের আচরণে নিজেরই কথার স্ববিরোধ ঘটেছে। কিন্তু তৎসত্ত্বেও একটা সামগ্রিক ঐক্য তাঁর রচনার মধ্যে থেকে পাওয়া যাবে, যার হয়তো একটি অনিবার্য লক্ষণ আগের কথার সঙ্গে সংগতি। কিংবা অসংগতি। রবীন্দ্রনাথ নিজেই একসময় জানিয়েছিলেন তাঁর বলিষ্ঠতা এবং দুর্বলতার জায়গা একটাই; inconsistancy।’
এ-বইয়ের লক্ষ্য রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য বিষয়ক ভাবনা সব শ্রেণির পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সাহিত্যের ছাত্রছাত্রীদের তো এ বিষয়ের মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট হতেই হয়, কৌতূহলী পাঠকরাও বিষয়টি জানার বা জানা বিষয়কেই ফিরে দেখার অবকাশ পাবেন। অভ্র বসু যে স্বচ্ছ ও পরিণত দৃষ্টিতে অনুধাবন করেছেন রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ভাবনা, সেই ভাবনার রস তাঁর অন্তরে যে ভাবে জারিত হয়েছে, সেই জ্ঞান ও অনুভব তাঁর ভূমিকাতেও সঞ্চারিত হয়েছে।
কবিতাসংগ্রহ
লেখক: বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত
মূল্য: ২৫০.০০
প্রকাশক: দে’জ পাবলিশিং
‘খকখক আর রান্নাঘরে উনুনের নীচে/ ছাইগাদা থেকে স্বপ্ন তাড়িতের মতো/ বেরিয়ে আসতে থাকে ছুঁচো/ ট্রামলাইনের ওপর থেকে দেখা যায় কবির বাড়িতে/ পটপট আলো জ্বলে ওঠে...’, কবিতার এই লাইনগুলিতে যেমন সত্তর দশক এসে পড়ে, তেমনই সময়ের ঘেরাটোপ পেরিয়ে জেগে ওঠে নির্জন রাজপথ, অলৌকিক মধ্যরাত, ট্রামস্টপের ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা ভয়ংকর একা কোনও কবির বাড়ি। যে বইয়ের কবিতা এটি, তার নামের মধ্যেও মিশে থাকে হিম হাতছানি— ‘কফিন কিংবা সুটকেশ’ (১৯৭২)। এরই সঙ্গে আরও চারটি কাব্যগ্রন্থ ‘গভীর এরিয়েলে’, ‘হিমযুগ’, ‘ছাতাকাহিনী’, ‘রোবটের গান’ মিলে বেরল বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের কবিতাসংগ্রহ (প্রথম খণ্ড)। শুরুতেই লিখেছেন কবি, ‘কিছু না বুঝেই কবিতা কখন যেন ঢুকে পড়েছিল আমার বেঁচে থাকার, বড়ো হওয়ার গভীরে।... কী হয় কবিতা লিখে— কবি লেখে, মরে যায় আর কবিতাও বাঁচে না। কিন্তু আমার হাতের আঙুলের নিশপিশানি বন্ধ হল না।’ ভাগ্যিস, গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে তাঁর এই নিশপিশানিই আলো করে রেখেছে বাংলা কবিতাকে। তাঁকে কবির আত্মপরিচয়ে না চিনলে তাঁর চলচ্চিত্রও পড়ে ওঠা যাবে না, তাঁর সিনেমার ম্যাজিক কিংবা রিয়ালিজম, কোনও কিছুই।
নীহাররঞ্জন
সম্পাদক: সত্যজিৎ চৌধুরী
মূল্য: ২৯৯.০০
প্রকাশক: দীপ প্রকাশন
‘যে-কোনো সত্যিকার বুদ্ধিজীবীর অন্তরে একটি কর্মশালা থাকে যেখানে অবিরত কাজ চলে, যেমন এক-একটি ছাঁচ— মডেল গড়ে তোলা, ভেঙে আবার তৈরি করা, নোট করা, অবান্তর ভেবে অনেক প্রসঙ্গ ছেঁটে ছড়িয়ে ফেলা, সেগুলিকেই আবার কুড়িয়ে আনা।’ এক আলাপচারিতে বলেছিলেন নীহাররঞ্জন রায়। পূর্ণতা অভিমুখে মনীষার সৃজন প্রক্রিয়া এমনই। গড়ে ওঠার পর্বে নীহাররঞ্জন পেয়েছিলেন প্রবাদপ্রতিম শিক্ষকদের সাহচর্য। তাঁদের সঙ্গে কাজ করলেন, কিন্তু কারও পথ অনুসরণ করলেন না। নিজে গড়ে তুললেন বিদেশের আমদানি করা ইতিহাসতত্ত্বের প্রভাবমুক্ত বিকল্প ইতিহাসতত্ত্ব, লিখলেন বাঙ্গালীর ইতিহাস/ আদিপর্ব। নন্দনতত্ত্বেও তিনি নতুন পথের দিশারী: তাঁর মনন ভারতীয় আধুনিকতার ভিত্তি দৃঢ় করেছে। রবীন্দ্র-চর্চাতেও তিনি অন্য পথের যাত্রী: সে পথ ‘সমাজতত্ত্বসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি’। রবীন্দ্রনাথ যে বাস্তবকে মেনেই বাস্তবের ভাষ্য তৈরি করেন, সেই কথাটা বড় প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠা করলেন নীহাররঞ্জন। রবীন্দ্রনাথকে অখণ্ডতায় দেখার লক্ষ্যে তাঁর অ্যান আর্টিস্ট ইন লাইফ লেখা। নীহাররঞ্জনের শততম জয়ন্তীতে ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। চৌদ্দো বছর পর সত্যজিৎ চৌধুরীরই সম্পাদনায় প্রকাশ পেল তাঁর গ্রন্থরূপ, অবশ্যই কিছু নতুন লেখা নিয়ে, সংশোধন ও সংযোজন সহ। স্মরণ, সমীক্ষণ ও আলাপচারি— তিনটি অংশে বইটি বিভক্ত। প্রতাপাদিত্য পাল, তপন রায়চৌধুরী, অরুণ ভট্টাচার্যের স্মৃতিচারণে নীহাররঞ্জনের চরিত্রের নানা দিক উদ্ভাসিত। সমীক্ষণ অংশে আলো পড়েছে তাঁর সৃষ্টির বিভিন্ন দিকে। আর সব শেষে আছে দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ও হিতেশরঞ্জন সান্যালের সঙ্গে তাঁর এক দীর্ঘ আলাপন (অনূদিত), আর তাঁর কিছু চিঠি, মূল হস্তাক্ষরের প্রতিলিপিতে। সব মিলিয়ে এক অখণ্ডতায় প্রকাশিত হলেন নীহাররঞ্জন রায়। এই বিস্মৃতিকালে এমন প্রকাশনা খুবই জরুরি ছিল।