মহাজীবন শ্যামাপ্রসাদ
লেখক: অনাথবন্ধু চট্টোপাধ্যায়
১০০.০০
ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে যতখানি চর্চা হওয়া উচিত ছিল, তা হয়নি, এ কথা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। আলোচ্য বইটিও সেই অভাব যে খুব পূরণ করতে পারল, তা নয়। লেখকের নিজের মতেই যা ‘শ্যামা-পূজার সলতে’ পাকানো, তাতে নিরপেক্ষ, নৈর্ব্যক্তিক বিশ্লেষণ থাকার আশা কম। শ্যামাপ্রসাদের রাজনীতির সম্যক আলোচনা পাওয়ার আশাকে বাদ রেখে যদি বইটি পড়া যায়, তবে ব্যক্তি শ্যামাপ্রসাদের একটি পরিচয় পাওয়া যায়। বালক বয়সেই তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রকাশ, পিতা আশুতোষের সঙ্গে সম্পর্ক ইত্যাদির কথা যেমন আছে, তেমনই আছে তাঁর পরিণত বয়সের কর্মজগতের বিভিন্ন অধ্যায়ের কথা। রাজনীতিক শ্যামাপ্রসাদকে চেনার জন্য এই ব্যক্তি শ্যামাপ্রসাদকে চিনতে হবে, তাতে সংশয় কী?
এই মাপের এক জন মানুষের জীবনী লেখার কাজটি পরিশ্রমসাধ্য, তা বিপুল গবেষণা-নির্ভর হওয়াই বাঞ্ছনীয়। আলোচ্য বইটিতে সেখানে ঘাটতির পরিমাণ অনেক। কাজেই, শ্যামাপ্রসাদের যথার্থ রাজনৈতিক জীবনীর জন্য প্রত্যাশা থেকেই গেল। সেই কাজ হয়তো কোনও দক্ষতর গবেষকের অপেক্ষায় থাকল।
ঠগী কাহিনী
সংকলক: প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়
৩০০.০০
অরুণা প্রকাশন
১৮৩৫-এ উইলিয়াম হেনরি স্লিম্যান এক কুখ্যাত ঠগিকে গ্রেফতার করেন এবং তাকে রাজসাক্ষী হতে রাজি করান। তার সাক্ষ্যের সূত্র ধরেই ঠগিদের নির্মূল করা সম্ভব হয়। ১৮৩৯-এ স্লিম্যান যখন ‘কমিশনার ফর দ্য সাপ্রেশন অব ঠগি অ্যান্ড ডেকয়টি’ পদে নিযুক্ত হচ্ছেন, সেই বছরেই ইংল্যান্ডে প্রকাশিত হল ঠগিদের নিয়ে ফিলিপ মেডোজ টেলরের লেখা উপন্যাস কনফেশনস অব আ ঠগ। এ কাহিনিতে আমির আলি নামে এক ঠগি লেখকের কাছে তার জীবনবৃত্তান্ত বর্ণনা করে এবং ঠগিদের নানা ভয়ংকর অভিযানের খুঁটিনাটি বিবরণ দেয়। প্রকাশিত হওয়ার পরই টেলরের উপন্যাস অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং সত্যি ঘটনার মতোই গুরুত্ব পায়। বাংলায় গোয়েন্দা গল্প রচনার অন্যতম পথিকৃৎ প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায় (১৮৫৫-১৯১৭) যিনি নিজে পুলিশে চাকরি করতেন এবং ‘দারোগার দপ্তর’ নামে মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন, তিনি টেলরের বইটি থেকে সংকলন করে প্রকাশ করেন ঠগী কাহিনী। তাঁর মতে, ‘ঠিক অনুবাদ নহে, তথাপি তদবলম্বনে লিখিত’। পুনর্মুদ্রিত বইটির নতুন ভূমিকার প্রয়োজন ছিল।
বাংলার ব্রতপার্বণ
লেখক: শীলা বসাক
৪০০.০০
আনন্দ পাবলিশার্স
শীলা বসাক লোকসংস্কৃতির তথ্য নিবন্ধীকরণ ও বিশ্লেষণমূলক যে কাজ করেছেন, তার মধ্যে বাংলার নকশি কাঁথা ও বাংলার ব্রতপার্বণ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর চর্চার বিষয়মুখিনতার সঙ্গে ক্ষেত্রসমীক্ষার একাগ্রতা সার্বিক অন্বেষণের স্বীকৃতি পেয়েছে। আর সেই চর্চার পরিসর উভয়বঙ্গেই বিস্তৃত। তাঁর জীবনকালেই এ সবের পর্যালোচনা মান্যতা পেয়েছিল। বাংলার ব্রতপার্বণ প্রায় দু’দশক আগে প্রথম প্রকাশিত হলেও সুমুদ্রিত, সাম্প্রতিক এই প্রকাশনার গুরুত্ব স্পষ্ট।
আরাধ্য দেবদেবীর কাছে প্রার্থনা, কামনা-বাসনার আড়ম্বরহীন নিভৃত আত্মনিবেদন ব্রতী-ব্রতিনীদের কাছে এক ঐকান্তিক অভিপ্রায়। কামনা পূরণে গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষের নিয়মাচারে নিহিত জীবনচর্যার অন্য লোকায়ত জগৎ। বাংলার আঞ্চলিক পটভূমিতে জনগোষ্ঠীর অনাদিকালের রীতি, ধ্যানধারণা মিশে আছে। লৌকিক দেবদেবীর পুজো-আচার-অনুষ্ঠানে মেশা ব্রতে বহু ক্ষেত্রেই প্রতীকরূপী আলপনার চিত্র ছাড়াও থাকে ছড়া, ব্রতকথা, নাচ ইত্যাদি। উপকরণ, প্রস্তুতি, স্থান নির্বাচন, ক্রিয়াচারে থাকে আয়োজনের অনাবিল আন্তরিক রূপ। এই গবেষণার চৌহদ্দি ব্রতের উৎস-সংজ্ঞা নির্ণয় থেকে সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, শ্রেণিবিভাগ, নারীর ভূমিকা, বৈচিত্রের স্বরূপ, মাসভিত্তিক ব্রতের তালিকা, জেলাভিত্তিক ব্রতপালন ইত্যাদি নানা বিষয়। বাংলার ব্রতের বৈশিষ্ট্য ও বিবরণের তুলনামূলক আলোচনায় তাই বিভিন্ন রাজ্যের প্রসঙ্গও উদাহরণসহ আলোচনায় এসেছে। সঙ্গে আছে ছয়শতাধিক ব্রতের তালিকা। অবশ্য এই তালিকাটি বর্ণানুক্রমিক হলে সুবিধা হত। আছে বাংলাদেশের বহু বিচিত্র ব্রতকথা যা অখণ্ড বঙ্গসংস্কৃতির হদিশ দেয়। বইটিতে ব্রত-আলপনার আলোকচিত্র যা আছে তা মূলত বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা এলাকার। সব মিলিয়ে বাংলার ব্রতপার্বণের আলোচনার এক অখণ্ড-বিস্তারি আঙিনা হয়ে উঠেছে এই বই। বাঙালির জীবনসংস্কৃতির ধারাপথের হারিয়ে যাওয়া মেদুর স্মৃতিবাহী কথা জানতেও এমন বই মূল্যবান।