পুস্তক পরিচয় ২

কবির এ-খাতাখানি সব থেকে পুরনো

দীপককুমার দাঁ সংকলিত বইটিতে সন্নিবেশিত লেখার বিষয়গুলোকে প্রধানত তিনটি ভাগে রাখা চলে। এক, সরাসরি বিজ্ঞানের তত্ত্ব, বিজ্ঞানীর জীবন ও কৃতি, ভূবিজ্ঞান ইত্যাদি। দুই, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন পরিকল্পনায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভূমিকা নিরূপণ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৭ ০৮:০০
Share:

মেঘনাদ সাহা রচনা সংগ্রহ

Advertisement

সম্পাদক: দীপককুমার দাঁ

মূল্য: ৩০০.০০

Advertisement

প্রকাশক: পত্রলেখা

বাংলা বিজ্ঞানলেখক হিসেবে মেঘনাদ সাহার ভূমিকা হয়তো ঠিক রামেন্দ্রসুন্দর-জগদানন্দের মতো খ্যাত নয়, বঙ্কিম-রবীন্দ্রের মতো বৈশিষ্ট্যচিহ্নিতও নয়, কিন্তু তাঁর বেশ কিছু রচনার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের উন্নয়ন ভাবনার ভেতর বিজ্ঞানের আসনটা ঠিকঠাক দাগিয়ে দেওয়ার কাজটা তিনি করেছিলেন। এবং সে চেষ্টার সূত্রপাত ভারত স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই। তাঁর বাংলা রচনাগুলি এর আগে শান্তিময় ও এণাক্ষী চট্টোপাধ্যায় সংকলন করেছিলেন। দীপককুমার দাঁ সংকলিত বইটিতে সন্নিবেশিত লেখার বিষয়গুলোকে প্রধানত তিনটি ভাগে রাখা চলে। এক, সরাসরি বিজ্ঞানের তত্ত্ব, বিজ্ঞানীর জীবন ও কৃতি, ভূবিজ্ঞান ইত্যাদি। দুই, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন পরিকল্পনায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভূমিকা নিরূপণ। তিন, হিন্দু সমাজের কুসংস্কার ও অতীতমুখী মনোভাবের সমালোচনা। ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকায় বিজ্ঞানী সাহার একটি বক্তৃতা মুদ্রণের জেরে প্রকাশিত দীর্ঘ বাদানুবাদের মধ্যে লুকিয়ে আছে তাঁর সেই উক্তি, ‘সবই ব্যাদে আছে’—মুখে মুখে আবৃত্ত হয়ে যা আজ এক প্রবাদ। ব্যস্ত বিজ্ঞানী হয়েও কিশোরদের জন্য তিনি লিখেছিলেন বেশ কিছু রচনা। সমুদ্রপথে স্পেনীয় ও পর্তুগিজদের অভিযানের ধারাবাহিক কাহিনি লিখেছিলেন এক কিশোর পত্রিকায়। তাঁর সব লেখাই নিরাভরণ কিন্তু স্পষ্ট। তাঁর ব্যবহৃত কিছু বাংলা পরিভাষা আজও ভাবাতে পারে। বাংলা রচনায় পারিভাষিক ইংরেজি শব্দটাকে বাংলা হরফে বসানো যদিও এখনকার স্বীকৃত এবং শ্রেয় চল, তবু মেঘনাদ সাহার ব্যবহৃত কিছু শব্দ অনায়াসে রচনায় বসানো চলে স্রেফ লেখাটিকে আলোকিত করার জন্য। ইলেকট্রন এখানে ‘তড়িৎরেণু’, ফোকাস ‘সন্ধি-বিন্দু’। তবে, পুরনো রচনার পুনর্মুদ্রণ পড়তে গিয়ে যে-সম্পাদকীয় ভূমিকা আমরা প্রত্যাশা করি এখানে তার দেখা মিলবে না। রচনায় উদ্ধৃত ব্যক্তি, ঘটনা প্রভৃতির টীকা ও প্রসঙ্গনির্দেশ আশা করা বৃথা, এমনকী কোন রচনাগুলো যে শান্তিময়-এণাক্ষীর সংকলন, কোনগুলি নতুন সংযোজন, তাও ভূমিকার ইঙ্গিত থেকে অনুমানসাপেক্ষ, নিশ্চিত বোঝার উপায় নেই। রচনাগুলির প্রথম প্রকাশ সংক্রান্ত তথ্য সবখানে পাওয়া যায় না, স্বল্প পরিচিত পত্রিকাগুলি সম্পর্কে পাঠকের জিজ্ঞাসা থেকে যায়, লোকসভার প্রশ্নোত্তর কেন মেঘনাদ সাহার রচনা হিসেবে ছাপা হবে সে প্রশ্নও ওঠে। পরিশিষ্ট হিসেবে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়কে লেখা দু’টি মাত্র চিঠির প্রাসঙ্গিকতা ধরা গেল না।

রবীন্দ্রনাথের মালতীপুঁথি

সম্পাদক: অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য

মূল্য: ২৫০.০০

প্রকাশক: সিগনেট প্রেস

অমিত্রসূদন ভট্টাচার্যর সম্পাদনায় এই প্রথম রবীন্দ্রনাথের মালতীপুঁথি-র সমগ্র পাঠ আমাদের সামনে এল। বলাবাহুল্য যথাযথ পাদটীকা এবং প্রান্তটীকা সহ। এ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের যত পাণ্ডুলিপি শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত হয়েছে সময়ের বিচারে কবির এই বাঁধানো খাতাখানি সব থেকে পুরনো। ১৯৪৩ সালে নতুন দিল্লির লেডি আরউইন স্কুলের শিক্ষক মালতী সেনের সংগ্রহ থেকে এটি বিশ্বভারতীতে আসে। উপহারদাতার নামানুসারে খাতাটির নামকরণ হয়েছিল ‘মালতীপুঁথি’। সম্পাদক যথাযোগ্য ভাবে আলোচনা করেছেন ‘মালতীপুঁথি’-র ইতিহাস। এই পাণ্ডুলিপি সম্পর্কে রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞদের পূর্ব-প্রকাশিত প্রবন্ধগুলির ইতিহাসও গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। মালতীপুঁথি-র পাতা উল্টাতে উল্টাতে যেন সুদূর অতীতে ফিরে যাই, ‘কবির তের-চোদ্দ থেকে পরবর্তী দশ বছরের মধ্যে রচিত বহু কবিতা, খণ্ড কাব্যের অংশ, গান, কিছু গদ্যরচনা, সংস্কৃত ও ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদের অনুশীলন; এবং তা ছাড়াও আছে প্রাত্যহিক রুটিন, পড়াশোনার ছোটোখাটো বিবরণ, দু’-একটি হিজিবিজি লেখা, কাব্য-কবিতার অন্তর্গত বহু কাটাকুটি, কবিতার সমাপ্তি বোঝাবার জন্য আঁকাবাঁকা লাইন, ইংরেজিতে লেখা R. N. Tagore এবং Rabindranath Tagore, একটি কার্যবিবরণীর মধ্যে সম্পাদক হিসেবে নিজের নাম শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নাগরী হরফ, আত্মীয়স্বজনের নাম এবং সর্বোপরি রবীন্দ্রনাথের শৈশবের হাতে-আঁকা দু’-একটি ছবি।’ পরিশিষ্টে ‘মালতীপুঁথি’-র কয়েকটি পাতার প্রতিলিপি গ্রন্থটির মর্যাদা বাড়িয়েছে।

উইমেন অ্যান্ড ওয়র্ক ইন প্রিকলোনিয়াল ইন্ডিয়া / আ রিডার

সম্পাদক: বিজয়া রামস্বামী

মূল্য: ১০৯৫.০০

প্রকাশক: সেজ

কোথায় যাবে আমার সুগন্ধ /যদি খাটতে খাটতে হয়ে যাই বুড়ি?/ তার জন্য কিন্তু থাকবে একজন ঘরে/ বাইরে আর একজন ছুঁড়ি/ ছেচল্লিশ, সাতচল্লিশ, আটচল্লিশ় ...’

মেয়েরা গান গাইতে গাইতে চাপ দিচ্ছে কাঠের পাটাতনে, জল উঠে আসছে চাকায় বাঁধা সার-সার বালতিতে। সময়টা তৃতীয় থেকে পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যে, যখন দক্ষিণ ভারতে চাষের জন্য জল তুলত বলদ, নইলে মেয়েরা। গানের কথায় উঠে আসত তাদের জীবনের ছবি। আন্দাজ করা যায় কী হাড়-খাটুনির জীবন ছিল সেই মেয়েদের। দরিদ্র, নিম্নবর্ণ, নইলে উচ্চবর্ণের সন্তানবতী বিধবা, এরাই মজুরিতে কাজ করত। ঘরের ভিতরে কর্মরত উচ্চবর্ণের মেয়েদের কোনও কথাই মেলে না। দেশের অর্ধেক কর্মী অদৃশ্য রয়ে গিয়েছে। নানা বৃত্তির মেয়েদের মুখে-মুখে বাঁধা গান যেটুকু টিকে গিয়েছে, তা থেকে মেয়েদের কাজের ছবি এঁকেছেন বিজয়া রামস্বামী। তাঁর প্রবন্ধটি রয়েছে তাঁরই সম্পাদিত নানা লেখকের পঁচিশটি প্রবন্ধের একটি সংকলনে, যা প্রাচীন ও মধ্যযুগের ভারতে মেয়েদের কাজের ছবি তুলে এনেছে। শ্রম ও দেহ, এই দুটির উপরেই যে মেয়েদের অধিকার ছিল অতি সীমিত, ফলে সম্পদের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ ছিল সামান্যই। বৈদিক যুগে দাসের চাইতে দাসীর প্রাচুর্য ছিল বেশি, মহাভারতেও সম্মান-দক্ষিণা হিসেবে দাসী উপহার দেওয়ার দৃষ্টান্ত ভূরি ভূরি। ষষ্ঠ-সপ্তম দশকে এসে দেখা গেল দাসবৃত্তি কমছে, বাড়ছে বেগার খাটা। মেয়েদের উত্তরাধিকার কোন যুগে কতটা স্বীকৃতি পেয়েছে, স্ত্রীধনের উপর তার কতটা অধিকার, তার আলোচনা রয়েছে বেদ, স্মৃতি, ধর্মশাস্ত্র ধরে। প্রাচীন ভারতে গণিকাবৃত্তি নিয়ে সুকুমারী ভট্টাচার্যের রচনাটিও আছে। প্রতিটি প্রবন্ধের সঙ্গে বিস্তারিত গ্রন্থসূচি বাড়তি পাওনা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement