পুস্তক পরিচয়  ২

রবীন্দ্রনাথের প্রস্তাবে সাহিত্য সম্মিলন শুরু

ভারতবর্ষের ইতিহাস মোড় ঘুরবার পরই সম্ভবত তাঁর মহত্তম কাব্যটি রচিত হবে।’ তাঁর বিষয়ে এমন লেখার সংখ্যা যেমন বিপুল তেমন বিচিত্র ও উন্নত মানের। ইতিমধ্যে ২০০৮-এ তাঁর জন্মশতবর্ষেরও সূচনা হয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share:

বিষ্ণু দে চর্চা/ বিষ্ণু দে বিষয়ক রচনার সটীক পঞ্জি

Advertisement

সম্পাদক: অরুণ সেন

২০০.০০

Advertisement

সাহিত্যপত্রগ্রন্থ

দৈনিক কালান্তর-এর রবিবারের পাতায় ২০ জুলাই ১৯৬৯-এ বিষ্ণু দে’র ষাট বছর পূর্তিতে তাঁর সম্পর্কে দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন ‘সামনে যে নতুন পরীক্ষার দিন আসছে, সেখানেও তাঁকে আমরা অর্জুনের ভূমিকায়ই দেখব। ভারতবর্ষের ইতিহাস মোড় ঘুরবার পরই সম্ভবত তাঁর মহত্তম কাব্যটি রচিত হবে।’ তাঁর বিষয়ে এমন লেখার সংখ্যা যেমন বিপুল তেমন বিচিত্র ও উন্নত মানের। ইতিমধ্যে ২০০৮-এ তাঁর জন্মশতবর্ষেরও সূচনা হয়েছে। তাঁর প্রতিভার সর্বাত্মক সৃজনের অনুপুঙ্খ হদিশ অরুণ সেনের বিষ্ণু দে চর্চা-য়। বিষ্ণু দে বিষয়ক রচনার এই সটীক পঞ্জিটিতে কবি সম্পর্কে লিখিত কালানুক্রমিক গ্রন্থিত/ অগ্রন্থিত রচনা, তাঁর বিষয়ে পত্রপত্রিকার বিশেষ সংখ্যা বা পুস্তিকার বা সংকলনগ্রন্থের কালানুক্রমিক তথ্য ও অন্তর্গত রচনার পঞ্জি, তাঁর বিষয়ে নানা সূত্রে প্রাসঙ্গিক আলোচনার পঞ্জি। বইটি অরুণবাবুর সারা জীবনের পরিশ্রম ও মেধার যোগফল, শুরুতেই জানিয়েছেন ‘বইটিও বিষ্ণু দে-র প্রতি আমার আজীবন কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনেরই অভিজ্ঞান।’ বিশিষ্ট কোনও বাঙালিকে নিয়ে এ ধরনের বই খুব কমই তৈরি হয়েছে।

বলিউড

লেখক: এম কে রাঘবেন্দ্র

২৭৫.০০

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস

ভিন্ন ধারার পরিচালকেরা যতই রাগারাগি করুন, ভারতীয় চলচ্চিত্রের মানচিত্রে বলিউডের সিনেমার পাকাপাকি ঠাঁই অনস্বীকার্য। আঞ্চলিক ফিল্মের ছবি-করিয়েদের বলিউডি ছবিকে ‘ভারতীয়’ বলতে প্রবল আপত্তি, তাঁদের যুক্তি-তর্ককে যোগ্য মান্যতা দিয়েও মেনে নিতেই হবে যে বহুকাল ধরেই বলিউড আমাদের অন্দরমহলে মায় রান্নাঘর অবধি সেঁধিয়ে গিয়েছে। বলিউডের হাতযশে আমাদের বাণিজ্য-বিপণন শাসিত জীবনে যে ভাবে প্রতিনিয়ত প্রতিভাত হতে দেখা যায় ভারতীয় সংস্কৃতিকে— নিঃসন্দেহে তা এক অভিঘাত আমাদের মূল্যবোধেও। এ সমস্তই সংক্ষিপ্তাকারে তত্ত্বসূত্রে পেশ করেছেন সুচিন্তক সমালোচক এম কে রাঘবেন্দ্র। অক্সফোর্ড ইন্ডিয়া-র এই ‘শর্ট ইনট্রোডাকশনস’ সিরিজটা বিদ্যাচর্চার জন্যে বেশ জরুরি। কোনও একপেশে ধারণার বশবর্তী না হয়ে স্বচ্ছন্দ ইতিহাসবোধে রাঘবেন্দ্র দেখিয়েছেন বম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সিনেমা নব্বইয়ের দশক থেকে উদার অর্থনীতির কল্যাণে কী ভাবে ‘বলিউড’ ব্র্যান্ডটি নিজের গায়ে জড়িয়ে নিল, সারা দুনিয়ায় নিজস্ব বিনোদনকে আদরণীয় করে তুলল। ভুবনায়নের এই ধরনটিকে বোঝাতে গিয়ে বলিউডের ছবির বহুবিধ রকমসকম, সে সবের ন্যারেটিভ-টেকনোলজি-স্টার সিস্টেম সব কিছু নিয়েই আলোচনা করেছেন লেখক। তাতে যেমন এদেশের রাজ্য-রাজনীতির পাঠ, পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রির প্রযোজনা-পরিবেশনাজনিত অর্থনীতির পাঠ, সর্বোপরি এই ‘পপুলার’ ফিল্মের ব্যাকরণ-নন্দনতত্ত্বেরও পাঠ। বলিউডের ভক্ত ও বিরোধী— দুই শিবিরেরই মননের খোরাক বইটি।

সৌরশক্তি/ প্রয়োগ বৈচিত্র্য

লেখক: মিহিররঞ্জন দত্তমজুমদার

১৫০.০০

আনন্দ পাবলিশার্স

বরিষ্ঠ বিজ্ঞানী মিহিররঞ্জন দত্তমজুমদারের সৌরশক্তি/ প্রয়োগ বৈচিত্র্য বইটির আলোচ্য বিষয় মূলত সৌরশক্তি বিষয়ে সীমাবদ্ধ, যা উপযুক্ত প্রযুক্তির সাহায্যে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা সম্ভব। এর ফলে সক্রিয় ভাবে শক্তিরূপে বিদ্যুৎ উৎপাদন অথবা নিষ্ক্রিয় ভাবে প্রয়োগের দ্বারা মানুষের জীবনধারা, শক্তি সমস্যা সমাধান এবং বিশ্বউষ্ণায়ন হ্রাস করা সম্ভব হতে পারে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, বর্তমান মানবজাতির প্রগতি ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য নগরায়ন এবং শিল্পায়নের প্রয়োজন। স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রয়োজন মেটাতে বিভিন্ন ধরনের শক্তির ব্যবহার দরকার। আর এই শক্তির চাহিদা মূলত পূরণ হয় জীবাশ্ম-জ্বালানি (ফসিল ফুয়েল) থেকে। এর ফলে সমস্ত জীবজগৎ এবং জলবায়ুতে দ্রুত পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া জীবাশ্ম-জ্বালানি ভাণ্ডারও ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। উপরন্তু সভ্যতা বিকাশের ফলে বনাঞ্চলের পরিধিও ছোট হচ্ছে। আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য বিকল্প শক্তি উৎসের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। যা মূলত বৃহদায়তন পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন অথবা সৌরশক্তির প্রয়োগ দ্বারা ভবিষ্যতে হতে পারে। এই বইয়ে আছে সৌরশক্তি উৎসের স্বরূপ থেকে সালোকসংশ্লেষ, কৃত্রিম সালোকসংশ্লেষ, প্রচলিত বা অত্যাধুনিক সৌরতাপীয় ব্যবহার বিষয়ে আলোচনা। এক দিকে সূর্যালোক, কৃত্রিম আলোক উৎসের সমন্বয়, অন্য দিকে আধুনিক সৌর ফোটোইলেকট্রিক বিদ্যুৎ তৈরির কথা লেখক জানিয়েছেন। আছে সৌরশক্তির মাধ্যমে পরিবেশ সমস্যা এবং সমাধানরূপে পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানি, পরিবেশ-বান্ধব গৃহাদি পরিকল্পনা এবং শক্তি উৎপাদন চিন্তার বিষয়গুলিও।

সভাপতির অভিভাষণ/ বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মিলন ১৯০৭-১৯৩৯

সম্পাদক: অমরনাথ করণ

৫০০.০০

লালমাটি

‘মাতৃপূজার এই প্রথম উদ্বোধন আমাদের চেষ্টায় ও যত্নে নয়, সেই নিখিল আনন্দময়ের ইচ্ছায় সুসম্পন্ন হইল। জননী বঙ্গভাষার সেবার জন্য তাঁহার কুটীর-দ্বারে আমরা যেন এমনি করিয়া সকলে মিলিত হইতে— তাঁহার চরণকমলে যেন এমনি করিয়া পুষ্পাঞ্জলি দিতে সমর্থ হই।’ বহরমপুরে কাশিমবাজার রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে প্রথম বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে (৩-৪ নভেম্বর ১৯০৭) তাঁর অভিভাষণে বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বস্তুত স্বদেশি আন্দোলনের সময় রবীন্দ্রনাথের প্রস্তাবে ও সভাপতিত্বে বাংলার জেলায় জেলায় ‘বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মিলন’-এর সূচনা হয় (১৯০৭)। প্রথম সম্মেলনের উদ্যোক্তা ছিল বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ। এর পর সম্মেলনের বার্ষিক অধিবেশনগুলি অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন জেলায় এবং বিহারের দু’একটি স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অধিবেশনে ওই সমস্ত জেলার পুরাবৃত্ত, ভাষাতত্ত্ব, লোকবিবরণ প্রভৃতি আলোচনা হত। ‘বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মিলন’ নামে ১৩১৪-১৩৪৫ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত বাইশটি অধিবেশন হয়। তারপর ১৩৬৬ বঙ্গাব্দ থেকে নবপর্যায়ে ‘বঙ্গ সাহিত্য সম্মিলন’ নামে অধিবেশন শুরু হয়। প্রতিটি অধিবেশনে বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সভাপতিত্ব করেছেন এবং অভিভাষণ দিয়েছেন। এই সব অভিভাষণ সাহিত্য সম্মিলনের কার্যবিবরণী ছাড়াও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হত। কিন্তু এর অধিকাংশই এখন দুষ্প্রাপ্য। পুরনো পত্রিকার পাতা থেকে প্রথম পর্যায়ের সভাপতির অভিভাষণগুলি উদ্ধার করেছেন অমরনাথ করণ। সাহিত্য সম্মিলনের ইতিবৃত্ত উদ্ধারে তিনি দীর্ঘদিন ধরে সচেষ্ট। এ বারে মুর্শিদাবাদ, রাজশাহি, ভাগলপুর, ময়মনসিংহ থেকে কৃষ্ণনগর, কুমিল্লা ইত্যাদি জায়গায় অনুষ্ঠিত বাইশটি অধিবেশনের সভাপতি হিসাবে রবীন্দ্রনাথ থেকে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র, জগদীশচন্দ্র, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, হীরেন্দ্রনাথ দত্ত, দীনেশচন্দ্র সেন, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখের মূল্যবান অভিভাষণগুলি দুই মলাটে পাওয়া গেল। সম্পাদকের ভূমিকায় বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মিলনের ইতিহাসের রূপরেখাটি দেওয়া আছে, আছে নানা বিরোধ-বিতর্ক বাদ-বিসংবাদের কথাও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement