রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধের পরিস্থিতি বিশ্ব জুড়ে শেয়ার বাজারের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তার উপর আমেরিকা অর্থনৈতিক অবরোধ জারি করা নিয়ে রাশিয়াকে সতর্ক করায় অবস্থা আরও ঘোরালো। আর এ সবের জেরে সোমবার এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকার প্রায় সব শেয়ার বাজারই পড়েছে। বাদ যায়নি ভারতও। এ দিন সেনসেক্স ১৭৩ পয়েন্ট পড়ায় সূচক ফের নেমে এসেছে ২০ হাজারের ঘরে। দিনের শেষে তা থিতু হয়েছে ২০,৯৪৬.৬৫ অঙ্কে।
এ দিন টাকাও ২৯ পয়সা পড়েছে। এক ডলার দাঁড়িয়েছে ৬২.০৪ টাকা। যুদ্ধ বাধলে সরবরাহে ঘাটতির আশঙ্কায় বেড়েছে অশোধিত তেলের দাম। তা বিশ্ব বাজারে ব্যারেলে ১০৪ ডলার ছাড়িয়েছে। তবে নিরাপদ লগ্নির মাধ্যম হিসেবে ৪ মাসে সর্বোচ্চ দর ছুঁয়েছে সোনা।
গত সপ্তাহের টানা পাঁচ দিনেই মোট ৫৮৩ পয়েন্ট উঠেছিল সেনসেক্স। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এ দিন সূচকরে পতনের পিছনে আরও দু’টি কারণ কাজ করেছে। একটি হল, শেয়ার বেচে মুনাফা ঘরে তোলার প্রবণতা। গত পাঁচ দিনে সূচকের উত্থানের ফলে এ দিন মুনাফা তুলে নেওয়ার সুযোগ পেয়ে যান লগ্নিকারীরা। যা তাঁরা হাতছাড়া করেননি বলে বাজার সূত্রের খবর। দ্বিতীয় কারণটি হল, এই অর্থবর্ষের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর, এই তিন মাসে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি মাত্র ৪.৭ শতাংশে দাঁড়ানো। এটা লগ্নিকারীদের হতাশ করেছে। ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি এবং স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখ বলেন, “এর ফলে চলতি অর্থবর্ষে ৪.৯% বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে কি না, তা নিয়েই লগ্নিকারীদের মনে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।”
এই অবস্থায় শেয়ার বাজারের হাল আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে ফেরার সম্ভাবনা নেই বলেই বিশেষজ্ঞদের মত। কমলবাবু বলেন, “দেশে কার্যত মন্দার অবস্থা চলছে। রিয়েল এস্টেট, গাড়ি পরিকাঠামো-সহ অধিকাংশ শিল্পেরই হাল খারাপ। কেন্দ্র কার্যত অচলাবস্থায় রয়েছে। তাই নির্বাচনের আগে বাজারের অবস্থা ফিরবে বলে মনে হচ্ছে না।” তার উপর যুদ্ধের পরিস্থিতি আরও বেশি আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।
তবে ভারতের বাজারে একমাত্র যে খবরটি লগ্নিকারীদের উৎসাহ দিচ্ছে তা হল, বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির এখনও এখানে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখা। বাজার সূত্রের খবর, গত শুক্রবারও ওই সব সংস্থা ভারতের বাজার থেকে ৫০০ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে। কমলবাবু বলেন, “বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলিই ভারতের শেয়ার বাজারকে ধরে রেখেছে। না-হলে এর মধ্যেই সেনসেক্স ১৯ হাজারের নীচে নেমে যেত।”