ভারতে এখন পৌষ মাস হলেও সব দেশে কিন্তু তা নয়। একই সময়ে কোনও কোনও দেশ দেখতে পাচ্ছে ‘সর্বনাশের’ কালো ছায়া।
বিশ্ব জুড়ে যখন তেলের দাম কমতে শুরু করেছিল, তরতরিয়ে বেড়েছিল বেশির ভাগ শেয়ার বাজার। ভারতের মতো বেশি মাত্রায় তেল আমদানিকারী দেশে সূচক ওঠার গতি অবশ্য ছিল অন্যদের তুলনায় একটু বেশি। এই ঊর্ধ্বচাপে ভর করে সেনসেক্স পার করেছিল ২৮ হাজারের বাধা। কিন্তু সে উত্থান দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
অশোধিত তেলের দাম একনাগাড়ে কমে যখন ব্যারেল পিছু ৫০ ডলারেরও নীচে তলিয়ে যায়, তখন দ্রুত আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। এক শ্রেণির মানুষ মনে করলেন, বিশ্ব অর্থনীতি আবার মন্দা কবলিত হচ্ছে। সেই কারণেই দ্রুত চাহিদা কমছে তেলের এবং তার জন্যই এই পতন। দাবানলের মতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় শেয়ারে ধস নামে বিশ্ব জুড়ে। মঙ্গলবার একটি কাজের দিনে সেনসেক্সের পতন হয় ৮৫৫ অঙ্ক। বাজার নামে পরের দিনও। এর পরদিনই বাজার ভাল রকম ঘুরে দাঁড়ায়। তখন বলা হয়, মন্দার কারণে নয়, তেলের দাম পড়ছে অধিক উৎপাদন তথা সরবরাহের কারণে।
দাম এতটা নামায় অবশ্যই বিপাকে পড়েছে তেল উৎপাদনকারী কোনও কোনও দেশ। ‘ত্রাহি ত্রাহি’ রব উঠেছে রাশিয়ায়। দাম কমতে থাকলেও এরা উৎপাদন ছাঁটাই করতে পারছে না, কারণ তাতে আয় মার খাবে। ভারত সরকার ও তেল ব্যবহারকারীদের অবশ্য যথেষ্ট আনন্দের কারণ আছে এই পতনে। তবে তেলের দাম কমায় যে-সব দেশের অর্থনীতি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, সেই সমস্ত দেশে ভারতের রফতানি মার খাবে। অসুবিধায় পড়বে ভারতের তেল উৎপাদন এবং বিপণন সংস্থাগুলিও। তবে মোটের উপর এই পতন থেকে বড় আকারের ফায়দা তুলবে ভারতের মতো দেশ। এর প্রভাবে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির হার। কমবে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি। ডলারের বহির্গমন কমবে, ফলে বাড়বে ডলারে টাকার দাম। ভাল রকম লাভ হবে সেই সব শিল্পের, যারা পেট্রোপণ্য কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করে। এই কারণে ভারতের রং সংস্থাগুলিরও ‘পৌষ মাস’ দীর্ঘায়িত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তেলের দরে এতটা পতন নরেন্দ্র মোদীর সরকারকেও আর্থিক দিক থেকে বড় সুবিধা করে দেবে। অর্থনীতির জন্য নতুন বছরে এটি বড় উপহার। সাধারণ মানুষ ছাড়াও এতে উপকৃত হবে বহু কোম্পানি।
তেলের দাম কমা গাড়ি শিল্পের কাছে বড় আশীর্বাদ হলেও মনে রাখতে হবে, উৎপাদন শুল্কছাড় বাবদ অতিরিক্ত সুবিধা আর এই শিল্প জানুয়ারি থেকে পাচ্ছে না। এই কারণে এরই মধ্যে গাড়ির দাম বাড়িয়েছে বেশির ভাগ গাড়ি সংস্থা। ফলে সাময়িক চাহিদা কমতে পারে ছোট গাড়ির।
আশঙ্কা ছিল, বছরের তৃতীয় তিন-মাসে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প তেমন ভাল ফল প্রকাশ করবে না। এই আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণ করে ফলাফলের মরসুমের গোড়াতেই তাক-লাগানো ফল প্রকাশ করেছে এই শিল্পের অগ্রণী সংস্থা্ ইনফোসিস। শেষ তিন মাসে কোম্পানির আয় ১৩,০২৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে পৌঁছেছে ১৩,৭৯৬ কোটি টাকায়। নিট লাভ ১৩ শতাংশ বেড়ে স্পর্শ করেছে ৩,২৫০ কোটি টাকা। শেয়ার পিছু আয় বা ইপিএস ২৫.১৬ টাকা থেকে বেড়ে উঠে এসেছে ২৮.৪৪ টাকায়। কোম্পানির নতুন ক্লায়েন্টের সংখ্যা এখন ৫৯। গত তিন মাসে কর্মী সংখ্যা বেড়েছে ১৩,১৫৪ জন। এখন তা ১,৬৯,৬৩৮। ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও কোম্পানি আগের প্রত্যাশা বহাল রেখেছে। বলা হয়েছে গোটা বছরে তাদের আয় ৭ থেকে ৯% পর্যন্ত বাড়তে পারে। এত ভাল ফলাফলে শুধু ইনফোসিস-ই নয়, বাজারে উজ্জীবিত হয়েছে অগ্রণী সব ক’টি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাই। ফলাফল প্রকাশ এখন চলবে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। অর্থাৎ আগামী এক মাস এর প্রভাব থাকবে শেয়ার সূচকের উপর।
গত মঙ্গল-বুধবারের সংশোধন সুযোগ করে দিয়েছিল অপেক্ষাকৃত কম দামে শেয়ার কেনার। বর্তমান পরিস্থিতির বিচারে এটা বলা যায়, আগামী দিনে ভারতের শেয়ার বাজারের মাঝেমধ্যে সর্দি-জ্বর হলেও হার্ট অ্যাটাকের তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। যে-সব শর্ত ভারতের শেয়ার বাজারের অনুকূলে, সেগুলি হল:
• উঠতি অর্থনীতিগুলির মধ্যে ভারতই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রথম পছন্দ
• তেলের দামে বড় পতন
• মূল্যবৃদ্ধি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে, ফলে সুদ কমার সম্ভাবনা
• বাজেট ঘিরে প্রত্যাশা
• এখনও সংসদে পাশ না-হলেও অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে আর্থিক সংস্কারে গতি আনা
• আগামী মার্চের মধ্যে নতুন করে বিলগ্নিকরণ। স্পেকট্রাম এবং কয়লাখনি বণ্টনের জন্য পদক্ষেপ।