সাধ আছে। সাধ্য নেই। দুইয়ের ফারাক ঘোচাতে এ বারের রেল বাজেট বাণিজ্যিক। সঙ্গে লগ্নিমুখীও। দুই মিলিয়ে রেল বাজেটের দিশা মোদী সরকারের কাছে শিল্পমহলের প্রত্যাশা বাড়িয়েছে। তবে প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তব ছবি মিলিয়ে নিতে সরকারের আগামী ঘোষণাগুলির দিকে তাকিয়ে রয়েছে তারা।
রেল বাজেট মানেই ভোট ব্যাঙ্কের তোষামোদ। প্রচলিত এই ধারণা কিছুটা হলেও বদলে দিয়েছেন সদানন্দ গৌড়া। এমনই বলছে শিল্পমহল। তাদের মতে এ দিনের বাজেট বক্তৃতায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছে কর্পোরেট সংস্থার এক লক্ষ ৪৭ হাজার কোটি টাকার পরিষেবা পরিকল্পনা। অ্যাসোচ্যামের প্রেসিডেন্ট রানা কপূর এ প্রসঙ্গে জানান, এটি সম্পূর্ণ ভাবে বাণিজ্যিক ও ঝকঝকে বাজেট। তিনি বলেন, “এই বাজেট নরেন্দ্র মোদীর আর্থিক মডেলের স্পষ্ট প্রতিফলন। দেশি ও বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগের উপর অনেকটাই নির্ভর করেছেন গৌড়া।” একই সুরে সিআইআই-এর ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট তথা রেল-এর স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান সুমিত মজুমদার ও সিআইআই-এর প্রেসিডেন্ট অজয় শ্রীরামের বক্তব্য, জনপ্রিয়তার লাইনে না-হেঁটে বাজেট প্রস্তাবে এই প্রথম কোনও রেলমন্ত্রী ভারতীয় রেলের সমস্যাগুলি চিহ্নিত করার সাহস দেখালেন।
রেলের বাণিজ্যিক দিকটির উপর জোর দেওয়ায় বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছেন পরামর্শদাতা সংস্থা কেপিএমজি-র অন্যতম কর্তা অরবিন্দ মহাজন। তবে এখনই পুরো নম্বর দিতে চাননি তিনি। কারণ, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেল ও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের উল্লেখ থাকলেও তার বিশদ ব্যাখ্যা নেই। ইন্ডিয়ান চেম্বারের মতে, এই বাজেটে যেমন উচ্চাশা রয়েছে, তেমনই তার দিশা ও অভিমুখও একেবারে নির্দিষ্ট। আসলে রেল পরিচালনার খরচ তোলার দিকে জোর দেওয়া এবং জনমোহিনী চমক থেকে রেলমন্ত্রী সরে আসাতেই খুশি শিল্পমহল।
সেই যুক্তিতেই বাজেটকে ইতিবাচক হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট দিব্যেন্দু বসু ও এমসিসি চেম্বারের প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় অগ্রবাল। তবে এ রাজ্যের জন্য নতুন কোনও প্রকল্প না-থাকায় হতাশ তাঁরা। বিশেষত চলতি প্রকল্প ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের জন্য কোনও ঘোষণা না-থাকায় হতাশ ফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন্স-এর মহেশ সিংহানিয়া।
যৌথ উদ্যোগে বন্দরের সঙ্গে রেলের যোগসূত্র গড়ে তোলা কিংবা কয়লা খনি থেকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত দ্রুত কয়লা পৌঁছে দেওয়ার পরিকাঠামো গড়ে রেলের আয় বাড়ানোর ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছেন শিল্প-কর্তারা। বন্দরের সঙ্গে যোগসূত্র বাড়লে গাড়ি শিল্পও লাভবান হবে বলে জানিয়েছে তাদের সংগঠন সিয়াম।
বাজেটকে বাস্তববাদী আখ্যা দিয়েছে ছোট ও মাঝারি শিল্পের সংগঠন ফসমি ও ফ্যাক্সি-ও। তবে ছোট-মাঝারি শিল্পের জন্য রেলমন্ত্রী সে ভাবে আশার আলো দেখাননি বলেই অভিযোগ তাদের।