প্রতীকী চিত্র।
কল-কারখানার উৎপাদনে জোয়ারের ইঙ্গিত। উৎসবের মরসুমে কেনাকাটার হাওয়া জিএসটি সংগ্রহের পালে। তবু ভাটার ভরা টান দেশের চাকরির বাজারে। উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র হিসেব, চাহিদা কিছুটা চাঙ্গা হওয়ার ইঙ্গিত মেলা অক্টোবরেও দেশে বেকারত্বের হার ৭% ছুঁইছুঁই।উৎপাদন শিল্পের গতিবিধি মাপে যে নিক্কেই-পিএমআই সূচক, তা অক্টোবরে ৫৮.৯। সেপ্টেম্বরের ৫৬.৮ পয়েন্টের তুলনায় তো বটেই, ২০১০ সালের মে-র পরে সর্বোচ্চ। লকডাউনে কল-কারখানা বন্ধ থাকায় ৫০-এর নীচে নেমেছিল উপদেষ্টা সংস্থা আইএইচএস মার্কিটের ওই সূচক। যার অর্থ, উৎপাদন সরাসরি কমে যাওয়া। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে এক দশকের সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছনোর মধ্যে তাই অর্থনীতির ছন্দে ফেরার লক্ষণ খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে।
সম্ভাবনার পালে বাতাস জুগিয়েছে আরও একটি তথ্য— অক্টোবরে জিএসটি আদায় হয়েছে ১.০৫ লক্ষ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারির পর থেকে সর্বোচ্চ তো বটেই, ২০১৯ সালের অক্টোবরের তুলনাতেও ১০% বেশি। কেনাকাটার অঙ্ক বৃদ্ধি ছাড়া যা অসম্ভব। আইএইচএস মার্কিটের কর্তা পলিআন্না দে লিমার কথায়, “করোনার ধাক্কা কাটিয়ে কারখানায় বাড়ছে বরাত এবং উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণ। বিভিন্ন সংস্থা কাঁচামাল কেনা এবং উৎপাদিত পণ্য মজুতে যে ভাবে মন দিচ্ছে তাতে স্পষ্ট, দীর্ঘ মেয়াদে চাহিদা চাঙ্গা থাকার বিষয়ে আশাবাদী তারা।” অর্থাৎ, আস্থা বাড়ছে উৎসবের মরসুমের পরেও চাহিদা বহাল থাকা নিয়ে।
কিন্তু পিএমআই সূচক তৈরির সূত্রে সংগৃহীত তথ্যের সম্পূর্ণ উল্টো ছবি কাজের বাজারের। সেখানে দেখা যাচ্ছে, বড় সংখ্যায় নিয়োগ তো দূর, এই নিয়ে টানা সাত মাস কর্মী ছাঁটাই-ই চলছে বিভিন্ন সংস্থায়। সিএমআইই-ও বলছে, অক্টোবরে ভারতে বেকারত্বের হার পৌঁছেছে ৬.৯৮ শতাংশে। যা সেপ্টেম্বরের (৬.৬৭%) তুলনায় বেশি। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, লকডাউনের সময়ের ২৫% ছুঁইছুঁই বেকারত্বের হার দ্রুত ৮-১০ শতাংশে নেমেছিল ঘরবন্দি দশা শিথিল হতে শুরু করার পরেই। কিন্তু এখন এই ৬-৭ শতাংশকে আরও নামাতে চাহিদার গাঙে অনেক বেশি বান আসা জরুরি। তার জন্য অর্থনীতির ইঞ্জিন পুরোদমে চালু করতে মোটা সরকারি লগ্নি-সহ বিভিন্ন নীতি মারফত বিস্তর কসরত করতে হবে কেন্দ্রকে। উল্লেখ্য, অক্টোবরে রাজ্যে বেকারত্ব ১০%।
আরও পড়ুন: আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি ভাল কথা নয়, বলছে সমীক্ষা
তথ্য বলছে, যত মানুষ করোনার কামড়ে কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরেছেন, তার তুলনায় ১০০ দিনের কাজে নিয়োগ বা প্রধানমন্ত্রী রোজগার অভিযানে শামিল হওয়ার সুযোগ যথেষ্ট কম। তাই গ্রামাঞ্চলে বেকারত্বের হার সেপ্টেম্বরের ৫.৮৬% থেকে বেড়ে অক্টোবরে হয়েছে ৬.৯%। বরং শহরে কল-কারখানার চাকা ঘোরায় ৮.৪৫% থেকে তা কমে হয়েছে ৭.১৫%। সুতরাং, গ্রামে বেকারত্বের ছোবল আরও বিষাক্ত হওয়ার প্রতিফলন দেশের সার্বিক হারে স্পষ্ট।
অক্টোবরে
উৎপাদন শিল্পের
গতিবিধি জরিপ করা নিক্কেই-পিএমআই সূচক পৌঁছেছে ৫৮.৯-এ। সেপ্টেম্বরের (৫৬.৮) তুলনায় তো বটেই, ২০১০ সালের মে-র পরে তা সর্বোচ্চ। লকডাউনের সময়ে অধিকাংশ কল-কারখানার ঝাঁপ বন্ধ থাকায় ৫০-এর নীচে নেমে গিয়েছিল উপদেষ্টা সংস্থা আইএইচএস মার্কিটের ওই সূচক। যার অর্থ, উৎপাদন সরাসরি কমে যাওয়া।
• জিএসটি সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ১.০৫ লক্ষ কোটি টাকা। জনতা কার্ফুর আগের মাস ফেব্রুয়ারি থেকে তা সর্বোচ্চ তো বটেই, ২০১৯ সালের অক্টোবরের তুলনাতেও ১০% বেশি।
কিন্তু...
অক্টোবরে ভারতে বেকারত্বের হার পৌঁছেছে ৬.৯৮ শতাংশে।
আবার কর্মী সংগঠনগুলির মতে, উৎসবের মরসুমে উৎপাদন বাড়ালেও, কম কর্মীতেই কাজ চালাচ্ছে অধিকাংশ কল-কারখানা। নতুন নিয়োগ নামমাত্র। কাজে ফেরেননি পুরনোদের অনেকে। সিএমআইই-র কর্ণধার মহেশ ব্যাসের বক্তব্য, ভারতে ফি মাসে যে বিপুল সংখ্যায় ছেলে-মেয়েরা কাজের বাজারে পা রাখেন, তাতে পর্যাপ্ত নতুন চাকরির দরজা না-খুললে বেকারত্বের হার নামা কঠিন। কারণ, পুরনো কাজে লোক ফেরার পাশাপাশি প্রয়োজন নতুন লগ্নিতে নতুন চাকরির সুযোগ খোলাও। সেই আবহ তৈরি না-হলে অর্থনীতিতে এমন তুমুল বৈপরীত্যের ছবি বদলানো শক্ত বলেই ধারণা তাঁর।