প্রতীকী ছবি।
পূর্ব ঘোষণা মতোই আজ, নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে উঠে যাচ্ছে ‘ইন্টারকানেকশন ইউসেজ চার্জ’ (আইইউসি)। দেশে মোবাইল পরিষেবা দেওয়ার জন্য দু’টি সংস্থার মধ্যে কল সংযোগের ক্ষেত্রে যা চালু হয়েছিল বহুদিন আগেই। রিলায়্যান্স-জিয়ো জানিয়েছে, এর ফলে অন্য সংস্থার নম্বরে ফোন করলে সেই খরচ বাবদ যে মাসুল তারা এতদিন তাদের গ্রাহকের কাছ থেকে নিচ্ছিল, তা-ও উঠে যাচ্ছে। অর্থাৎ অন্য সংস্থার সংযোগে জিয়ো থেকে করা কল হয়ে যাচ্ছে সম্পূর্ণ নিখরচার। কিন্তু টেলিকম শিল্পের একাংশের মতে, আইইউসি শূন্য হওয়ার প্রভাব সার্বিক ভাবে মাসুল হারে সত্যিই কতটা পড়বে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ সংস্থার মোট খরচের মধ্যে ওই খাতে গুনতে হত বেশ কমই। ফলে তা উঠে গেলে সংস্থার খুব কিছু সাশ্রয় হবে, এমন নয়। তার উপরে এখন কার্যত সব ক্ষেত্রেই ডেটা পরিষেবার সঙ্গে সীমাহীন (আনলিমিটেড) সময় কথা বলার সুযোগ দেয় সংস্থাগুলি। যা কার্যত নিখরচারই নামান্তর।
মূলত পুরনো টেলিকম সংস্থার গ্রাহক সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের পরিকাঠামোও বড়। দীর্ঘ দিন ধরে তা তৈরির খরচের অন্তত কিছুটা সংগ্রহের যুক্তিতেই আনা হয় আইইউসি। তা ছাড়া, জিয়ো শুধু ৪জি প্রযুক্তিতে পরিষেবা দিলেও, ভোডাফোন-আইডিয়া (ভিআইএল), এয়ারটেল ও বিএসএনএল-কে ২জি এবং ৩জি, দু’টিই চালু রাখতে হয়েছে। কারণ দেশের এখনও বহু গ্রাহকের স্মার্টফোন কেনার সামর্থ্য নেই। যে কারণে পুরনো সংস্থাগুলি আরও কিছু দিন আইইউসি চালানোর পক্ষে ছিল। যদিও আইইউসি-র জন্যই মাসুল কমছে না বলে জিয়ো পাল্টা দাবি করে, তা কেন্দ্রের ডিজিটাল ভারত গড়ার পরিকল্পনার পরিপন্থী তো বটেই, গ্রাহক স্বার্থেরও বিরোধী। তবুও ট্রাই তা বহাল রাখায় গ্রাহকদের কাছ থেকে জিয়ো আইইউসি বাবদ আলাদ মাসুল নিতে শুরু করে এবং আমজনতার অসন্তোষের মুখে পড়ে। শেষে ট্রাই আইইউসি প্রত্যাহারের সময়সীমা এক বছর বাড়িয়ে করে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি।
জিয়ো-র দাবি, আইইউসি উঠে গেলে তারাও ওই মাসুলের ‘প্যাক’ প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ফলে আজ থেকেই তাদের গ্রাহকেরা সম্পূর্ণ নিখরচায় কথা বলার সুবিধা পাবেন। কিন্তু শিল্পমহলের একাংশের দাবি, জিয়ো সকলকে নিখরচায় কথা বলার সুবিধা দেবে বলে দাবি করছে ঠিকই, কিন্ত কল তো হয় ডেটা পরিষেবার মাধ্যমে। যার জন্য মাসুল গুণতে হয় গ্রাহককে। বস্তুত, এখন কার্যত ডেটা পরিষেবা নির্ভর মাসুল হারের সব ক্ষেত্রেই সীমাহীন কথা বলার সুযোগের দাবি করে সংস্থাগুলি। এ দিন ভোডাফোন-আইডিয়াও সেই যুক্তি-ই দিয়েছে। দাবি করেছে, তাদের গ্রাহকদের আগেও আইইউসি-র জন্য আলাদা কোনও মাসুলের ‘প্যাক’ নিতে হয়নি। এখনও আগের মতোই নিখরচায় কথা বলার সুযোগ পাবেন তাঁরা। এয়ারটেল অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
বিতর্ক যেখানে
• ‘ক’ মোবাইল সংস্থার নম্বর থেকে ‘খ’ মোবাইল সংস্থার নম্বরে কল করা হলে ‘ক’ ইন্টারকানেকশন ইউসেজ চার্জ (আইইউসি) দিত ‘খ’-কে। মিনিটে ৬ পয়সা।
• নতুন টেলিকম সংস্থার তুলনায় পুরনোগুলির গ্রাহক বেশি হওয়ায় তাদের পরিকাঠামো গড়ার খরচ তোলার পথ হিসেবে তা চালু হয়েছিল।
• ট্রাইয়ের পরিকল্পনা ছিল, গ্রাহক সংখ্যার ফারাক কমলে তা প্রত্যাহারের।
• গোড়ায় ভোডাফোন, এয়ারটেলের গ্রাহক বেশি হওয়ায় জিয়োকে তাদের বেশি আইইউসি দিতে হত। পরে জিয়ো বৃহত্তম সংস্থা হিসেবে উঠে আসার ফলে ছবিটা উল্টে যায়।
• শেষে ২০২১ সাল থেকে তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত।
• আইইউসি উঠলেও মাসুলের তার প্রভাব পড়া নিয়ে সংশয় থাকছেই।
• এখন কার্যত সব ক্ষেত্রেই ডেটা পরিষেবার সঙ্গে সীমাহীন সময় কথা বলার সুযোগ দেয় সব সংস্থা, কার্যত নিখরচাতেই।
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, আইইউসি ওঠার প্রভাব মোবাইলের মাসুলে তেমন না-পড়লেও, সংস্থাগুলির হিসেবের খাতার জটিলতা কিছুটা কমবে। জিয়োর তুলনায় ভোডাফোন, এয়ারটেলের সেই বাবদ অল্প হলেও বাড়তি অর্থ সাশ্রয় হবে। তবে সেই টাকা পরিকাঠামোয় কতটা খরচ করা হয়, সেটাই দেখার।