করোনা সতর্কবার্তা সত্ত্বেও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখার সামনে ভিড়।
প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনায় উপভোক্তাদের সরাসরি টাকা পাঠানো শুরু করেছে কেন্দ্র। প্রায় ২০ কোটি মহিলা জনধন অ্যাকাউন্টে প্রথম কিস্তির ৫০০ টাকা জমা পড়েছে। এসএমএসের মাধ্যমে তা জেনেওছেন গ্রাহকেরা। শুক্রবার ছিল সেই টাকা তোলার প্রথম দিন। তার উপর মাসের শুরুতে পেনশন তোলার ভিড়ও থাকে। ফলে লকডাউনের মধ্যেও ব্যাঙ্কগুলিতে ব্যাপক ভিড়ের আশঙ্কা করেছিলেন প্রশাসনিক কর্তারা। সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। করোনা আতঙ্ক, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম, অ্যাকাউন্ট নম্বর অনুযায়ী দিন বেঁধে ব্যাঙ্কে আসতে বলার নির্দেশ— সব কিছুকে উড়িয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বহু ব্যাঙ্কের শাখায় দিনভর দেখা গেল ঠাসাঠাসি ভিড়। অনেক ক্ষেত্রে গণ্ডি কেটেও লাভ হয়নি। তবে ভিড় কম ছিল কলকাতা, হাওড়ার শাখাগুলিতে।
কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সচিব রাজ্যের মুখ্যসচিবদের দেখতে বলেছিলেন, লকডাউনের সময়কার দূরত্ব বিধি যাতে টাকা তোলার চক্করে শিথিল না-হয়। তবে ভিড় আটকানো যায়নি। নবান্নের কর্তারা জানাচ্ছেন, আগামী পাঁচ দিন জনধনের টাকা বিলি চলবে। ফলে ভিড় বহাল থাকারই আশঙ্কা।
এ দিন হুগলি, পুরুলিয়া, বর্ধমান শহরের বহু ব্যাঙ্কে মাত্রাছাড়া ভিড় দেখা গিয়েছে। বহু ক্ষেত্রে গ্রাহকেরা দূরত্ব বজায় রেখেও দাঁড়াননি লাইনে। উত্তরপাড়া, চুঁচুড়া, চন্দননগরেও এক ছবি। বাঁকুড়ার ব্যাঙ্কগুলিতে প্রবীণ মানুষ বেশি ছিলেন। হাত ধোয়ার সাবান, বসার জন্য শামিয়ানা প্রভৃতির আয়োজন ছিল অনেক জায়গায়। পুরুলিয়ায় বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ হাতজোড় করে বারবার বলেও লাইন ফাঁকা করতে পারেননি।
বর্ধমান শহরের বেশ কিছু ব্যাঙ্কে চক দিয়ে দাঁড়ানোর জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। অভিযোগ, এতটাই কাছাকাছি দাগ দেওয়া হয়েছিল যে, গায়ে গায়ে দাঁড়াতে হচ্ছিল। বহরমপুরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির বহু শাখায় লাইন পড়ে সকাল ৮টা থেকে। সব ব্যাঙ্কই গ্রাহকদের নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়াতে অনুরোধ করলেও, বাস্তবে ছবিটা ছিল উল্টো। বীরভূমের সিউড়ি, রামপুরহাট, বোলপুর, সাঁইথিয়া, দুবরাজপুর-সহ নানা প্রান্তে ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা গিয়েছে পেনশনভোগী, বেতনভোগী ও ডিরেক্ট বেনিফিট স্কিমের উপভোক্তাদের।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গাদাগাদি ভিড় দেখা যায় মালদহের কালিয়াচক, সুজাপুর, গাজোলে। বালুরঘাট, রায়গঞ্জ শহরের ব্যাঙ্কগুলিতেও। মেদিনীপুরে ব্যাঙ্কের শাখাগুলিতে পেনশন, জনধন, একশো দিনের কাজের টাকা তুলতে আসেন বহু মানুষ। সামাজিক দূরত্বের বিধি শিকেয় ওঠে নদিয়ার বহু ব্যাঙ্কে। ভিড় করেন পেনশনভোগী বয়স্করা। করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে যাঁদের জীবনের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।