ক্ষমতায় আসার পর থেকে বারবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোর দিয়েছেন ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্পের (এমএসএমই) উপরে। রাজ্যের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে মূলত এই শিল্পকেই পাখির চোখ করেছেন তাঁরা। তৃণমূল সরকারের দ্বিতীয় দফার শেষ বাজেট প্রস্তাবেও তুরুপের তাস সেই ছোট শিল্প। যেখানে এই শিল্পের জন্য একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করলেন রাজ্যের অর্থ তথা শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র। তাতে সার্বিক ভাবে খুশি শিল্প মহল। তবে বড় শিল্পের কথা কার্যত অনুচ্চারিত থেকে যাওয়ায় ছোট-মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রের বাড়বৃদ্ধি আদতে কতটা হবে, তা নিয়ে সংশয়ও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকে।
রাজ্যে এই শিল্পের প্রসারের লক্ষ্যে নতুন শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে যে উৎসাহ প্রকল্প পাঁচ বছর ধরে চালু ছিল, তার মেয়াদ ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ শেষ হয়ে গিয়েছিল। ফলে তার পর যে সব সংস্থা লগ্নি করেছিল, তারা কোনও আর্থিক সুবিধা পাচ্ছিল না। এ দিন ‘বাংলাশ্রী’ নামে বাজেটে নতুন একটি উৎসাহ প্রকল্প চালু করার কথা ঘোষণা করেছেন অমিতবাবু। নিয়ম অনুযায়ী, আগামী ১ এপ্রিল থেকে সেই সুবিধা কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও, অমিতবাবু তা গত বছরের এপ্রিলের পরে চালু সংস্থাকেও তা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি এই শিল্পের জন্য পরিকাঠামো গড়তে আরও নতুন পার্ক তৈরির কথা জানিয়েছেন তিনি। দু’টি প্রস্তাবের ক্ষেত্রেই মূল লক্ষ্য যে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন অমিতবাবু।
অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাব এই শিল্পের পক্ষে ভাল খবর খবর বলেই মনে করছে ছোট শিল্পের সংগঠন ফ্যাকসি ও ফসমি। নতুন কোনও কর না-বসিয়েও বাড়তি ব্যয়-বরাদ্দের প্রস্তাব উল্লেখযোগ্য, মত ফ্যাকসির। বণিকসভা ইন্ডিয়ান চেম্বার ও ভারত চেম্বারও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রীর ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছে।
তবে বাজেট প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও, আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখার উপর জোর দিয়েছেন বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের প্রত্যক্ষ কর কমিটির চেয়ারম্যান তিমিরবরণ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, শুধু পার্কের সংখ্যা বাড়ালেই যে শিল্প বাড়বে, তা না-ও হতে পারে। এখন চালু পার্কগুলির সবক’টিতেই শিল্প গড়ে উঠেছে, এমনও নয়। তাই পরিকাঠামো তৈরির পরে সেখানে লগ্নি টানতে সমান ভাবে উদ্যোগী হতে হবে। লগ্নির উপযুক্ত শিল্প পরিবেশ ও বিপনণ পরিকাঠামো গড়ে তোলাও জরুরি।
তিনি আরও জানান, বাজেটে বড় শিল্প নিয়ে কিছু বলা হয়নি। অথচ ছোট শিল্পের প্রসারের জন্য বড় শিল্প জরুরি। কারণ বড়ই তাদের পণ্যের বাজার। তাই সেগুলি না-থাকলে শুধু এমএসএমইর সংখ্যা বাড়লেই সেই অনুপাতে তাদের আয় তেমন বাড়বে কি না, তা নিয়ে সংশয় থাকছে।