কেন্দ্রের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরন। —ছবি : সংগৃহীত
নীতি তৈরির সময়ে দেশের আর্থিক বাজার বা ফিনান্সিয়াল মার্কেটকে এড়িয়ে চলা জরুরি বলে মনে করেন কেন্দ্রের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরন। সোমবার বণিকসভা সিআইআই-এর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের মধ্যে ভারতের আর্থিক অগ্রগতির সম্ভাবনাই সব থেকে বেশি। শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত সংস্থাগুলির মোট বাজার দরের (মার্কেট ক্যাপিটালাইজ়েশন) দেশের অর্থনীতির মাপকে ছাপিয়ে যাওয়াও বিচিত্র নয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সাধারণ মানুষের প্রয়োজনগুলির থেকে বেশি গুরুত্ব পাবে বাজারের প্রয়োজন। বিশেষত যখন এতে অসাম্য বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। উপদেষ্টার এই মন্তব্যের পরেই বিরোধী কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশের এক্স-এ বক্তব্য, নাগেশ্বরন ঠিক কথাই তুলে ধরেছেন। বাজারকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় ইতিমধ্যেই দেশে বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার ঘটনা নজরে এসেছে। সেই অবস্থা বদলের জন্য নীতি দরকার।
নীতি নির্ধারণের প্রসঙ্গে আজ নাগেশ্বরনের বক্তব্য, “এই ক্ষেত্রে ‘ফিনান্সিয়ালাইজ়েশনের’ কথা উল্লেখ করতে চাইছি। যার অর্থ হল, সামগ্রিক অর্থনীতির থেকে আর্থিক বাজারকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। বিশেষত ভারত যখন ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হয়ে ওঠার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে, তখন বাজার অর্থনীতি সামগ্রিক অর্থনীতিকে প্রভাবিত করলে সমস্যার তৈরি হতে পারে।’’ সেই সঙ্গে বর্তমানে এক্সচেঞ্জে নথিভুক্ত সংস্থাগুলির মার্কেট ক্যাপ যে ভারতের জিডিপি-র ১৪০%, তা মনে করিয়ে তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে কর্পোরেট সংস্থাগুলির চড়া মুনাফার মতো বিষয়গুলির উপর কড়া নজর রাখা জরুরি। দেখা দরকার সেই বাজারের লাভ-ক্ষতির হিসাব যেন নীতি স্থির করার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। তবে এই সমস্ত বক্তব্যই তাঁর ব্যক্তিগত মত বলে দাবি করেছেন নাগেশ্বরন। সংশ্লিষ্ট মহল অবশ্য এই প্রেক্ষিতে ভোটের বাজারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তব্য মনে করাচ্ছেন। যখন তাঁরা সরকারি পদে থেকেই ভাল রিটার্নের আশায় মানুষকে শেয়ারে লগ্নিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আজ উপদেষ্টা যদিও আরও বেশ কিছু উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন। বলেছেন, সরকারি এবং বেসরকারি ঋণের অঙ্ক সমস্ত নজির ছাড়িয়ে গিয়েছে। ওই ঋণের পুরোটাই যে নিয়ন্ত্রকদের নজরে রয়েছে, তা-ও নয়। এ ছাড়া, সম্পদের দাম বৃদ্ধির উপরে ভিত্তি করে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি গতি স্থির হওয়াও উদ্বেগের। যা অসাম্য বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ।
এই প্রসঙ্গে নাগেশ্বরন বলেন, উন্নত দেশগুলি এখন ওই সমস্যার মোকবিলা করছে। তাদের দেখে ভারতের শিক্ষা নেওয়া দরকার। কারণ, ওই সব দেশ উন্নত হওয়ার পরে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। সেখানেই মাথাপিছু আয়ের নিরিখে ভারত এখনও নিম্ন আয়ের দেশ।