উর্জিত পটেল—ফাইল চিত্র
করোনার জেরে মাথা তোলা আর্থিক সঙ্কটে ব্যাঙ্কে অনুৎপাদক সম্পদ আরও বাড়বে বলে যে দিন হুঁশিয়ারি দিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সে দিনই সামনে এল প্রাক্তন গভর্নর উর্জিত পটেলের বই। যার প্রতিপাদ্য বিষয়ও ব্যাঙ্কের সমস্যাই। যেখানে এর জন্য দক্ষ পরিচালনার অভাব নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির সমালোচনা করেছেন। সমস্যার শিকড় হিসেবে আঙুল তুলেছেন আমলতন্ত্রের অসাড়তার দিকে। নিশানা করেছেন অবাঞ্ছিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকেও। ব্যক্তিগত ও ছোট সংস্থার ঋণকে অনুৎপাদক সম্পদ হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া নিয়ে উর্জিতের তীব্র কটাক্ষ, যখন বলেছেন, ‘‘তিনটে ‘সি’-র ভয় (সিবিআই, সিএজি, সিভিসি) যেন সকলকে বিভ্রান্ত করা বা বাড়িয়ে বলার চেষ্টা, যার পেছনে ব্যাঙ্কাররা আশ্রয় নেয় স্রেফ ন্যায্য কাজটা না-করার জন্যই। যে কাজটা আসলে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা।’’
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, মোদী সরকারের সঙ্গে মতান্তরের কারণেই আচমকা ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে গভর্নরের পদ ছেড়েছিলেন উর্জিত। ‘ওভারড্রাফ্ট: সেভিং দ্য ইন্ডিয়া সেভার’ বই নিয়ে তাই আগ্রহের অন্ত ছিল না। তবে প্রাক্তন গভর্নরের দাবি, যা চলে গিয়েছে তা নিয়ে লিখতে তিনি আগ্রহী নন। বরং ঠিক ভাবে আলোকপাত করতে চান এমন কিছু আর্থিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতির উপরে, যেগুলি জাতির ভাগ্য তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনুৎপাদক সম্পদের বাড়তে থাকা বোঝা। তার উপরে সেই খাতে আর্থিক সংস্থান করতে গিয়ে নগদ জোগানের অভাব। দুইয়ের চাপে ওষ্ঠাগত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। করোনার আবহে তা যে আরও বাড়তে পারে, সেই হুঁশিয়ারি শুক্রবার দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আর আজই সকলে জেনেছে পটেল বইয়ে বলেছেন, ব্যাঙ্কের জন্য মূলধন নিশ্চিত করার দায়িত্ব কেন্দ্রের।
ব্যাঙ্কে অনাদায়ী ঋণ বা অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যা তুঙ্গে উঠেছিল উর্জিত গভর্নর থাকাকালীনই। কোন কৌশলে তিনি তার মোকাবিলা করেছেন, সেটাও
লিখেছেন বইয়ে। তবে সঙ্গে মন্তব্য, ‘‘২০১৪ সালের আগের প্রভাবশালী মালিক সরকারি ব্যাঙ্কে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোনও প্রশ্নই তুলতেন না...বহু ব্যাঙ্কে ঊচ্চপদস্থ কর্তা না-থাকায় পরিচালনায় সমস্যা হয়। আমলাতন্ত্রের অসাড়তা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের প্রেক্ষিতে যা ব্যাঙ্কগুলির বরাবরের খামতি।’’ উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের আগে দিল্লিতে ছিল ইউপিএ সরকার।
বইয়ের পাতায় উর্জিতের তোপ, বহু ধারকে ঠিক সময় অনুৎপাদক সম্পদের তকমা দিতে গিয়ে সরকারি ব্যাঙ্কগুলি সরকারের তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই, সিএজি ও সিভিসি-র কোপে পড়ার যুক্তি খাড়া করে। অথচ নিমেষে ব্যক্তিগত ঋণ বা ছোট ঋণগ্রহীতার নেওয়া অগ্রিমকে অনুৎপাদক সম্পদ ঘোষণা করতে ও তাদের বন্ধকী বিক্রি করে প্রাপ্য আদায় করতে ডরায় না। পটেলের প্রশ্ন, সঙ্কটে থাকা কর্পোরেট সংস্থার বড় ঋণেও ওই তিন ‘সি’-র জিজ্ঞাসাবাদকে ব্যাঙ্কগুলির একটু বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয় কি?