গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আগামী অর্থবর্ষের জন্য কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করলেন নির্মলা সীতারামন। দেশের বাজেটের ইতিহাসে দীর্ঘতম ভাষণে কী কী বললেন, সবিস্তারে দেখে নেওয়া যাক:
আগামী অর্থবর্ষে ২২ লক্ষ ৪৬ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা। আর্থিক বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ।
এলআইসি-র অংশীদারিত্ব বিক্রি করবে সরকার। আইডিবিআই ব্যাঙ্কেরও শেয়ার বিক্রি করবে সরকার।
পেনশনের জন্য নতুন ট্রাস্ট গঠনের সিদ্ধান্ত।
জিএসটি-তে আরও সংস্কার আনা হবে। এর আওতায় আয়কর জমা দেওয়া আরও সহজ হবে। বললেন অর্থমন্ত্রী। বলেন, আমরা নতুন একটি প্রক্রিয়া চালু করব, যাতে করদাতা আবেদনের সঙ্গে সঙ্গে আধার ও প্যান কার্ড পেতে পারেন।
নতুন কর ব্যবস্থায় বছরে ২.৫ লক্ষ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ। বছরে ৫ লক্ষ টাকা থেকে ৭.৫ লক্ষ টাকা আয়ের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। বছরে ৭.৫ লক্ষ টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকা আয়ের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ কর। বছরে ১০ লক্ষ টাকা থেকে ১২.৫ লক্ষ টাকা আয়ের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ কর। বছরে ১২.৫ লক্ষ টাকা থেকে ১৫ লক্ষ টাকা আয়ের ক্ষেত্রে কর কমে ২৫ শতাংশ। বছরে ১৫ লক্ষ টাকা বেশি আয়ের ক্ষেত্রে কর আগের মতোই ৩০ শতাংশ।
তবে নতুন আয়কর কাঠামোয় ৭০টি ছাড় তুলে দিলেন নির্মলা।
পুরনো হারে আয়করে ছাড়ের সুবিধা থাকছে। নতুন হারে কর দিলে মিলবে না আয়করে ছাড়ের সুবিধা। তবে করদাতা বেছে নিতে পারবেন তিনি নতুন হারে আয়কর দেবেন না পুরনো হারেই কর দেবেন।
ব্যাঙ্কগুলিকে চাঙ্গা করতে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ।
ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ১ লক্ষ থেকে বেড়ে দাঁড়াল ৫ লক্ষ টাকা। ব্যাঙ্ক বন্ধ হলে ৫ লক্ষ টাকা বিমার সুবিধা। বিমা হিসাবে সেই টাকা পাবেন গ্রাহকেরা।
জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ। লাদাখে উন্নয়নে ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ।
করদাতাদের হেনস্থা আটকাতে আইন তৈরির ঘোষণা করলেন নির্মলা। করদাতাদের অধিকার লিপিবদ্ধ করা হবে। সিবিডিটি তা নথিবন্ধ করবে।
নির্মলা বলেন, সরকার চায় না, করদাতারা নাজেহাল হোক বা কোনও ভাবে তাঁদের বিব্রত করা হোক, করদাতাকে নাজেহাল করা ফৌজদারি অপরাধ। তা ঠেকাতে আইন তৈরি করবে সরকার।
পরিবেশকে স্বচ্ছ রাখতে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ।
হরিয়ানা, তামিলনাড়ু, অসম, গুজরাত ও উত্তরপ্রদেশে প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হবে। ঝাড়খণ্ডে আদিবাসী মিউজিয়ম গড়ে তোলা হবে।
কলকাতায় জাতীয় সংগ্রহালয় (ন্যাশনাল মিউজিয়ম)-এর সংস্কার করা হবে। সে জন্য বাড়তি বরাদ্দ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের আরও ৪টি সংগ্রহালয়েরও সংস্কার হবে।
মহিলাদের উন্নয়নে ২৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ। ১০ কোটি অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। জনজাতিদের উন্নয়নে ৫৩ হাজার কোটি টাকা। প্রবীণ নাগরিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য ৯০০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ।
পরিবহণ পরিকাঠামোয় ১.৭ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ।
২০১৩-এর মধ্যে দিল্লি-মুম্বই এক্সপ্রেস হাইওয়ে। আমদাবাদ-বেঙ্গালুরু নতুন রেল প্রকল্প।
দেশি মোবাইল ফোন উৎপাদনে জোর। ন্যাশনাল টেক্সটাইল মিশন প্রকল্প চালুর প্রস্তাব। ’২৪-এর মধ্যে ১০০টি নতুন বিমানবন্দর। সেই সঙ্গে নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। ১ লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতে অপটিক্যাল ফাইবার।
আমরা ৩ বছরের মধ্যে প্রি-পেড স্মার্ট মিটার প্রতিটি বাড়িতে নিয়ে আসতে চাই। উপভোক্তা কার কাছে বিদ্যুৎ কিনবেন, তা বেছে নিতে পারবেন। এর জন্য ২২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হল।
প্রতিটি জেলায় রফতানি হাব তৈরির লক্ষ্য। রফতানির জন্য ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। শিল্প-বাণিজ্য উন্নয়নে ২৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
আরও ৬ হাজার কিলোমিটার জাতীয় সড়ক তৈরি করা হবে ২০২৪-এর মধ্যে। রেলের খালি জমিতে গড়ে তোলা হবে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। পর্যটকদের পছন্দের জায়গায় তেজসের মতো আরও সুপারস্পিড ট্রেন চালু করা হবে।
প্রতিটি জেলায় এক্সপোর্ট হাব তৈরি করা হবে। পরিকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ ১০০ লক্ষ কোটি টাকা। পর্যটনে ২৫০০ হাজার কোটি টাকা।
মেডিক্যাল যন্ত্রপাতির উপর স্বাস্থ্য সেস-এর প্রস্তাব। নতুন সিস্টেম চলতি মাস থেকেই চালু করা হবে।
ইনভেস্টমেন্ট ক্লিয়ারেন্স সেল চালু করা হবে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের জন্য শীঘ্রই নতুন শিক্ষানীতি তৈরি করা হবে।
চাকরিভিত্তিক শিক্ষায় জোর দেওয়া হবে। এসবিআইকে শিক্ষা-ঋণ বাড়ানোর অনুরোধ। অনলাইনে স্নাতকোত্তর শিক্ষা চালু করার চেষ্টা করা হবে।
জাতীয় ফরেন্সিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব রাখছি। স্যাট-এ বসতে পারবেন এশিয়া-আফ্রিকার পড়ুয়ারা।
১২টি রোগ নির্মূল করতে ‘মিশন ইন্দ্রধনুষ’, সংসদে ঘোষণা অর্থমন্ত্রীর। ১২২টি জেলায় নতুন হাসপাতাল।
যক্ষ্মা সম্পূর্ণ নির্মূল করতে চাই ২০২৫-এর মধ্যে। জানালেন অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী জনআরোগ্য যোজনা জোর দেওয়া হবে। আয়ুষ্মান ভারতের অন্তর্গত হাসপাতাল পিপিপি মডেলে তৈরি করা হবে। স্বচ্ছ ভারত অভিযানে বরাদ্দ ১২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ৩ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ জলজীবন প্রকল্পে।
২০২২-এর মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে চায় সরকার, বললেন নির্মলা।
‘সাগরমিত্র’ নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে মৎস্যচাষে গ্রামের যুবকদের যুক্ত করা হবে। কৃষিপণ্য মজুতে আরও হিমঘর তৈরি করা হবে। উত্তর-পূর্বে চালু হবে কিষাণ-রেল। অনলাইনে কৃষিপণ্য বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, বলেও জানালেন তিনি।
বিশ্ব জুড়ে আর্থিক মন্দা চলছে। আমরা বাইরের ঝড় সামলে উঠেছি। দাবি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ দেশে ২৮ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে বলে দাবি তাঁর।
জলকষ্ট রয়েছে এমন ১০০টি জেলাকে চিহ্নিত করা গিয়েছে বলে জানালেন অর্থমন্ত্রী। ২০ লক্ষ কৃষককে নতুন পাম্প দেওয়া হয়েছে।
২৭ কোটি মানুষকে দারিদ্রসীমার উপরে আনা গিয়েছে বলে দাবি নির্মলার।
পেনশন-বিমায় সামাজিক সুরক্ষা জরুরি। বললেন নির্মলা।
গরিবের হাতে যাতে সরাসরি টাকা পৌঁছয়, সেই উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্র।
জিএসটি-র ফলে করের বোঝা কমেছে। ৪০ কোটি করদাতাদের মধ্যে ৬০ লক্ষ নতুন করদাতা। কর দেওয়ার পদ্ধতি এখন সরল হয়েছে, দাবি অর্থমন্ত্রীর।
নারীরা যাতে নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে পারেন, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য, বললেন নির্মলা। বলেন, আমরা এমন একটা ভারতবর্ষ দেখব যেখানে কেন্দ্র-রাজ্য একসঙ্গে চলবে। এর জন্য কিছু ঐতিহাসিক সংস্কার প্রয়োজন ছিল।
আগামী অর্থবর্ষের জন্য কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, আর্থিক বৃদ্ধিতে সরকার বিশেষ নজর দিয়েছে। বাজেট ভাষণের শুরুতেই, তাঁর আগের অর্থমন্ত্রী প্রয়াত অরুণ জেটলির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন নির্মলা।
আরও পড়ুন: এ বার বৃদ্ধি, ‘দাবি’ সমীক্ষার
আরও পড়ুন: চাকরির চিন্তায় উদ্বিগ্ন সমীক্ষাও