—প্রতীকী চিত্র।
অর্থনীতি তলানিতে ঠেকে গিয়েছে। আর নামার জায়গা নেই। এ বার ওঠার পালা। এই যুক্তিতেই আগামী অর্থ বছরে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে দাবি করল মোদী সরকারের আর্থিক সমীক্ষা।
কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের ২৪ ঘণ্টা আগে আজ মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যনের ভবিষ্যৎবাণী, আগামী অর্থ বছরে বৃদ্ধির হার ৬ থেকে ৬.৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে। কিন্তু কোন জাদুবলে আগামী বছরেই বৃদ্ধির হার এক লাফে ৬.৫ শতাংশে পৌঁছবে, তার সদুত্তর মেলেনি।
গত জুলাইয়ে দ্বিতীয় মোদী সরকারের প্রথম আর্থিক সমীক্ষায় পূর্বাভাস করা হয়েছিল: ‘চলতি বছরে বৃদ্ধির হার ৭% ছোঁবে। বৃদ্ধির হার কমলেও ভারত এখনও বৃদ্ধির হারে বিশ্ব সেরা। অর্থনীতির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। ২০১৯-২০-তেই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। বেসরকারি লগ্নি বাড়বে। কেনাকাটা বাড়বে।’ মাত্র ৭ মাস পরে সেই আর্থিক সমীক্ষাই আজ মেনে নিল, এ বছর বৃদ্ধির হার ৫ %-এ আটকে থাকবে। ফলে ২০২৪-২৫-এর মধ্যে অর্থনীতির বহরকে ৫ লক্ষ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার যে প্রতিশ্রুতি মোদী দিয়েছেন, তা-ও চ্যালেঞ্জের মুখে বলে আর্থিক সমীক্ষা মেনে নিয়েছে।
আইএমএফ বলেছে, আগামী বছর বা ২০২০-২১-এ ভারতের বৃদ্ধির হার ৫.৮ শতাংশ ছুঁতে পারে। তা হলে আর্থিক সমীক্ষা কীসের ভিত্তিতে ৬.৫% বৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছে? সুব্রহ্মণ্যনের জবাব, ‘‘অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর কিছু আগাম লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ব্যবসার ওঠানামার নিয়মে একেবারে তলানিতে ঠেকার পরে ওঠার পালা আসে। তা ছাড়া, আমরা তো ৭.৫%-র ভবিষ্যৎবাণী করছি না।’’ আজই পরিসংখ্যান এসেছে, চার মাস ধরে কমার পরে পরিকাঠামো ক্ষেত্রের উৎপাদন ডিসেম্বরে ১.৩% বেড়েছে। তা দেখিয়েও সরকার যুক্তি, অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পালা শুরু হয়েছে।
মোদী জমানায় ২০১৬-১৭-য় বৃদ্ধির হার ৮.২% ছুঁয়েছিল। তার পর থেকেই তা নিম্নমুখী। ২০১৭-১৮-য়বৃদ্ধির হার নেমে আসে ৭.২%-এ। পরের বছর এ ৬.৮%-এ। আজ পরিসংখ্যান মন্ত্রক হিসেব সংশোধন করে জানিয়েছে, ওই দুই বছর বৃদ্ধির হার আসলে আরও কম ছিল। যথাক্রমে ৭.১% ও ৬.১%।
বৃদ্ধির হার নামার পিছনে সুব্রহ্মণ্যনের যুক্তি, ২০০৮ থেকে ২০১২-র মধ্যে কর্পোরেট সংস্থাগুলি বিপুল ঋণ নিয়েছিল। কিন্তু ২০১৩ থেকে ২০১৭-র মধ্যে কম লগ্নি করেছে। চার বছর লগ্নি না-হওয়াতেই বৃদ্ধি কমতে শুরু করেছে। বিশ্ব বাজারের আর্থিক ঝিমুনিও এর জন্য দায়ী। আজ বাজেট অধিবেশনের শুরুতে মোদীও বলেন, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে ভারত কী ভাবে ফায়দা তুলতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। কিন্তু প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের মন্তব্য, ‘‘রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় খোঁজার চেষ্টা করছিলাম, অর্থনীতির পতন ঠেকাতে সরকারের নীতি কী? তেমন কিছুই পেলাম না।’’