—প্রতীকী ছবি।
বছরে দু’কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির মসনদে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ন’বছর বাদে দেশ যখন আরও একটি লোকসভা নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে, তখন বেকারত্ব ১০% পেরিয়ে গেল। উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র পরিসংখ্যান বলছে, অক্টোবরে সেই হার ছিল ১০.০৫%। যা দু’বছরেরও বেশি সময়ে সব থেকে বেশি। সংস্থার দাবি, এর জন্য দায়ী মূলত গ্রামাঞ্চলে প্রায় ১১ শতাংশের কাছে পৌঁছে যাওয়া বেকারত্ব। শহরে একটু কমলেও, তা ৮ শতাংশের বেশি।
পটনা আইআইটি-র অর্থনীতির অধ্যাপক রাজেন্দ্র পরামানিকের দাবি, বৃষ্টির ঘাটতি গ্রামাঞ্চলে কৃষিকাজে ধাক্কা দিয়ে কাজ কেড়েছে। অন্যান্য জায়গাতেও চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট কর্মসংস্থান হচ্ছে না। তবে কল-কারখানায় উৎপাদন বাড়ায় শহরে কাজ কিছুটা বেড়েছে।
চড়া বেকারত্বের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পরেই আক্রমণ শানিয়েছে বিরোধী কংগ্রেস। দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের কটাক্ষ, মন্দা এবং মূল্যবৃদ্ধির মধ্যেই কেন্দ্র এমন ‘বেকারত্বের মেলা’ আয়োজন করেছে, যা দেশের কোটি কোটি তরুণ-তরুণীকে দরজায় দরজায় ঘুরতে বাধ্য করবে। তাঁর দাবি, গ্রামীণ ভারতের পরিস্থিতি বেশ খারাপ। ১০০ দিনের কাজের চাহিদা বৃদ্ধি স্পষ্ট চড়া বেকারত্বের হিসাবে।
রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ বলছেন, জিনিসের চড়া দামে এমনিতেই অসন্তুষ্ট আমজনতা। কাজের অভাব তরুণ প্রজন্মকেও ক্ষুব্ধ করছে। ব্যালট বাক্সে বিজেপিকে এর মাসুল গুনতে হবে কি না, সেটা সময় বলবে। তবে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
সিএমআইই-র হিসাবে, অক্টোবরের ১০.০৫% বেকারত্ব ২০২১-এর মে মাসের পরে সর্বাধিক। গত দু’বছরের অক্টোবরে তা ছিল ৭.৭৫%। সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, আর্থিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে। সরকার অর্থনীতির উন্নতি তুলে ধরে সাফল্য দাবি করছে। আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬ শতাংশের উপরে। ভারতের মাথায় উঠছে বিশ্বের দ্রুততম বৃদ্ধির অর্থনীতি হওয়ার শিরোপা। কিন্তু এ সবের ছাপ কাজের বাজারে তেমন পড়ছে না। বরং তীব্র অনিশ্চয়তা এবং মূল্যবৃদ্ধির আবহে খরচে রাশ টানতে বহু সংস্থা এখন নিয়োগ বন্ধ রেখেছে।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এক্স-এ লিখেছেন, ভারতে মোদীর তৈরি আর্থিক সঙ্কট ক্রমশ হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে। বেকারত্বের হার দু’বছরে সর্বোচ্চ এমন এক সময়ে, যখন তা ৫০ বছরে সর্বাধিক। খাড়্গের দাবি, সরকারি সমীক্ষাতেও (পিএলএফএস) স্নাতক পাশ যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে বেকারত্ব ১৩.৪%। ভোটে তারা এর প্রতিশোধ নেবেই। কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তুলে রমেশের অভিযোগ, কোভিডের আগের (২০১৯) থেকেও বেশি পরিবার এখন কাজ চাইছে। এতেই পরিষ্কার, অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন নিয়ে সমস্ত কথা ‘পুরোপুরি প্রহসন।’