—প্রতীকী চিত্র।
বিশ্ব অর্থনীতির গতি কমলেও ভারতের আর্থিক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা যে বজায় থাকবে, সে বিষয়ে মোটামুটি সমস্ত আর্থিক ও মূল্যায়ন সংস্থা একমত। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সমীক্ষাও বলছে সে কথা। তবে তাদের উদ্বেগ, এই কর্মকাণ্ডের সম্পূর্ণ প্রভাব কাজের বাজারে পড়বে না।
২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল থেকে উন্নত দেশের স্বীকৃতি পেতে চায় ভারত। মোদী সরকারের লক্ষ্য অন্তত তেমনই। অর্থনীতিবিদদের বড় অংশের বক্তব্য, এই লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে গেলে আগামী ২৫ বছর জিডিপির বৃদ্ধি ধারাবাহিক ভাবে ৮ শতাংশের আশপাশে থাকতে হবে। যে সম্ভাবনা এখনই দেখা যাচ্ছে না। গত ১৩-২১ জুলাই ৫৩ জন অর্থনীতিবিদের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়েছিল রয়টার্স। সেখানে উঠে এসেছে, চলতি অর্থবর্ষে ভারতের বৃদ্ধির হার হতে পারে ৬.১%। যা নিজেদের সম্ভাবনার তুলনায় কম হলেও অন্যান্য বড় অর্থনীতিগুলির নিরিখে সম্মানজনক। আগামী অর্থবর্ষে তা হতে পারে ৬.৫%। শিল্পপতি কুমারমঙ্গলম বিড়লার কথায়, ‘‘সরকার পরিকাঠামোয় খরচ বাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে নিয়ে এসেছে উৎপাদন ভিত্তিক ভর্তুকি (পিএলআই) প্রকল্প। এর ফলে বেসরকারি পুঁজির লগ্নি বাড়ছে। সারা বিশ্বে চাহিদা কমলেও আগামী বেশ কয়েক বছর ভারতের ভারতীয় অর্থনীতি গতিশীল থাকবে।’’
কিন্তু কর্মসংস্থানে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে কি? অর্থনীতিবিদেরা ততটা আশাবাদী নন। এই প্রশ্নে ২৫ জন অর্থনীতিবিদের মধ্যে ১৭ জনের বক্তব্য, আর্থিক কর্মকাণ্ডের গতির সঙ্গে তাল রেখে কাজ তৈরির সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। ডিএএম ক্যাপিটাল অ্যাডভাইসরসের মুখ্য অর্থনীতিবিদ রাধিকা পিপলানির কথায়, ‘‘বেকারত্বের অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি। কৌশল শিক্ষাও তেমন হচ্ছে না। সে কারণে শ্রমের চাহিদা এবং জোগানের মধ্যে ফারাক থেকে যাচ্ছে।’’ পিএলআই প্রকল্প যে বিদেশের লগ্নিকারীদের টানতে সফল হচ্ছে তা মেনে নিয়েছেন ২৭ জন অর্থনীতিবিদের মধ্যে ২১ জন। কিন্তু সেই সঙ্গে পিপলানির বক্তব্য, ‘‘যে সমস্ত ক্ষেত্রে পিএলআই প্রকল্প চালু হয়েছে, সেখানে বৃদ্ধির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তবে কর্মসংস্থানের উপরে এর ইতিবাচক প্রভাব এখনও তেমন একটা পড়েনি।’’ এই প্রসঙ্গে অনেকে মনে করাচ্ছেন, ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ভারতে বেকারত্বের হার ৬.১ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। যা সেই সময়ে ছিল চার দশকের সর্বোচ্চ। এই নিয়ে রাজনৈতিক তরজা কম হয়নি। লকডাউনের সময়ে তা দুই অঙ্কে পৌঁছে যায়। আর্থিক কর্মকাণ্ডে গতি ফেরার পরে সরকার দাবি করেছিল যে, কাজের বাজার অতিমারির আগের অবস্থায় পৌঁছেছে। কিন্তু সিএমআইই-সহ বিভিন্ন বেসরকারি পরামর্শদাতা সংস্থা তো বটেই, এমনকি সরকারি পরিসংখ্যানেও উঠে এসেছে অন্য কথা। বেকারত্বের হার এখনও চড়া।
রয়টার্সের সমীক্ষায় অর্থনীতিবিদদের ব্যাখ্যা, বৃদ্ধির গতিকে ৮ শতাংশের কাছাকাছি তুলে নিয়ে যেতে হলে শিক্ষা, পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আরও সংস্কার প্রয়োজন। এএনজ়েড রিসার্চের অর্থনীতিবিদ ধীরাজ নিম বলেন, ‘‘এই দশকে যদি বৃদ্ধিকে ৮ শতাংশে নিয়ে যেতে হয়, তা হলে কৃষি ক্ষেত্রের উদ্বৃত্ত শ্রমিকদের অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে হবে। যাতে উৎপাদন বাড়ে। তাতে কর্মসংস্থানও বাড়বে। কিন্তু সংস্কারের গতি না বাড়ালে তা হবে না।’’
এই প্রসঙ্গে কেউ কেউ বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। বঙ্গা সম্প্রতি বলেছেন, বদলে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতিতে বহুজাতিক সংস্থাগুলি চিনের পাশাপাশি, বিকল্প একটি উৎপাদন তালুক খুঁজছে। ভারতকে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। কর্মসংস্থানও হতে পারে সেই পথেই।