প্রতীকী ছবি।
চড়া মূল্যবৃদ্ধি এখন বিশ্ব জুড়ে সব থেকে বড় সমস্যা। তাকে রুখতে ভারত-সহ প্রায় সব দেশ লাগাতার সুদের হার বাড়িয়ে চলেছে। কিন্তু তার পরেও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক জিনিসপত্রের দামে লাগাম পরাতে পারেনি। উল্টে পণ্য সরবরাহ যখন স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না, তখন সুদ বাড়িয়ে টাকার জোগানে রাশ টানার ফলে মার খাচ্ছে শিল্প ক্ষেত্রের উৎপাদন। ইতিমধ্যেই দেশে তা শূন্যের নীচে তলিয়ে গিয়েছে। সুদ বাড়ায় চাপে পড়েছেন ঋণগ্রহীতারা।
সেপ্টেম্বরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার আরও মাথা তুলে ৭.৪১% হয়েছে। খাদ্যপণ্যে তা ৮.৪% ছুঁয়ে ২২ মাসে সর্বাধিক। আরবিআই দু’বছরের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধিকে ৪ শতাংশে নামানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু শুধু সুদ বাড়িয়ে এটা সম্ভব কি না, সংশয় আছে। বরং সে জন্য বাড়াতে হবে পণ্যের সরবরাহও। অর্থ ব্যবস্থায় কালো টাকা ভারতের বড় সমস্যা। এতে সরকারের তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই। এই টাকার যথেচ্ছ ব্যবহার বহু পণ্যের দামকে ঠেলে তুলছে।
দেশ যেখানে দাঁড়িয়ে
• সেপ্টেম্বরে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার কমে হয়েছে ১০.৭%।
• ১ এপ্রিল থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহ ২৪% বেড়ে হয়েছে ৮.৯৮ লক্ষ কোটি টাকা।
• সেপ্টেম্বরে শেয়ার ভিত্তিক (একুইটি) ফান্ডগুলিতে মোট লগ্নির অঙ্ক ১৪,১০০ কোটি টাকা। অগস্টের দ্বিগুণেরও বেশি।
• বিশ্ব বাজারে ফের অশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম নেমেছে ব্যারেল পিছু ৯১.৬৩ ডলারে, ডব্লিউটিআই ৮৫.৬১ ডলার।
• সেপ্টেম্বরের খুচরো মূল্যবৃদ্ধি মাথা তুলে ৭.৪১ শতাংশে।
• খুচরো বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে।
• পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি এ বারও ১০ শতাংশের নীচে নামেনি। আনাজের দর বিপুল চড়া।
• শিল্পোৎপাদন অগস্টে বৃদ্ধির পরিবর্তে শূন্যের নীচে নেমেছে, সঙ্কোচনের হার ০.৮%।
• আরও সুদ বৃদ্ধির আশঙ্কায় অক্টোবরের প্রথম দু’সপ্তাহে শেয়ার বাজার থেকে ৭৫০০ কোটি টাকার লগ্নি তুলে নিয়েছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি।
আরবিআই মোট ১৯০ বেসিস পয়েন্ট সুদ (রেপো রেট, যে সুদে তারা অন্যান্য ব্যাঙ্ককে ধার দেয়) বাড়িয়েছে। তার হার এখন ৫.৯০%। আশঙ্কা, ডিসেম্বরে আরও ৩৫-৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়বে। এতে আরও ধাক্কা খেতে পারে শিল্পোৎপাদন। তবে ব্যাঙ্ক আমানতে সুদ বাড়েনি সে ভাবে। ফলে মধ্যবিত্ত এবং সুদ নির্ভর প্রবীণ মানুষ বিপাকে।
এই মুহূর্তে
• রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ (রেপো রেট): ৫.৯০%
• টাকার সাপেক্ষে ডলারের দাম: ৮২.১৯ টাকা
• সেনসেক্স এবং নিফ্টি: ৫৭,৯১৯.৯৭ এবং ১৭,১৮৫.৭০
• বেকারত্ব: ৭.৯% (উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র হিসেব)
• পাকা সোনা (কলকাতায়, ১০ গ্রাম): ৫০,৮৫০ টাকা
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আইএমএফ-সহ অনেকেই চলতি অর্থবর্ষে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছাঁটছে। কারও কারও মতে তা ৭% পেরোবে না, একাংশের আশঙ্কা আরও কম। শেয়ার বাজার এখনও যথেষ্ট উঁচুতে। তবে ভবিষ্যৎ যে নড়বড়ে সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট।
তার মধ্যেই শুরু হয়েছে জুলাই-সেপ্টেম্বরের আর্থিক ফল প্রকাশ। ইনফোসিসের নিট লাভ ১১% বেড়ে হয়েছে ৬০২১ কোটি টাকা। ৮.৪% বেড়ে টিসিএসের মুনাফা এই প্রথম ছাড়িয়েছে ১০,০০০ (১০,৪৩১) কোটি। এইচসিএল টেক-এর ৭% বেড়ে ৩৪৮৯ কোটি। উইপ্রোর ৯.২৭% কমে হয়েছে ২৬৫৯ কোটি টাকা। বজাজ অটোর মুনাফাও ১৬% কমে হয়েছে ১৭১৯ কোটি টাকা। এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের ২০% বেড়ে ১০,৬০৫ কোটি।
(মতামত ব্যক্তিগত)