প্রতীকী ছবি।
মানসিক বা জিনঘটিত-সহ একাধিক রোগের চিকিৎসাকেও এ বার স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনার নির্দেশ দিলেন দেশের বিমা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আইআরডিএ)। ওই সব রোগের বেশির ভাগই এত দিন স্বাস্থ্য বিমার আওতায় ছিল না। বছরখানেক আগে সুপ্রিম কোর্ট মানসিক রোগকে স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনার নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ মাথায় রেখেই আইআরডিএ এই নতুন সার্কুলার দিয়েছে।
আইআরডিএ-র সার্কুলারে মানসিক রোগের পাশাপাশি আরও প্রায় ১০টি রোগকে স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রোগগুলি যুক্ত করে নতুন স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প মাস দুয়েকের মধ্যেই বাজারে আনবে সাধারণ বিমা সংস্থাগুলি। তবে সেই সব প্রকল্পের প্রিমিয়ামের হারও বাড়বে বলে জানিয়েছে ওই সব বিমা সংস্থা।
অবশ্য বর্তমানে পরিবর্তিত আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে ওই সব রোগকে বিমার আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছেন বিমা সংস্থার কর্তারা। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁরা জানাচ্ছেন, ওই সব রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে খরচ কেমন হয়, সে ব্যাপারে তাঁদের কোনও অভিজ্ঞতা নেই। তাই ওই সব রোগকে কী ভাবে বিমার আওতায় আনা হবে এবং তার প্রিমিয়ামের হারই বা কী হবে, তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে। বাজাজ অ্যালায়েঞ্জ স্বাস্থ্য বিমার কর্তা ভাস্কর নেরুলকরের কথায়, ‘‘রোগগুলি পলিসির আওতায় আনার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু সেগুলি কী ভাবে পলিসিতে যুক্ত করা হবে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
খরচ মিলবে যে সব রোগে
• মানসিক রোগ
• বয়ঃসন্ধিকালীন ও ঋতুবন্ধজনিত অসুখ
• অ্যাডভেঞ্চার বা ঝুঁকিপূর্ণ খেলার কারণে হওয়া রোগ
• ওষুধ ব্যবহারের ফলে বুদ্ধি বা মেধা সংক্রান্ত ক্ষতি
• ভেন্টিলেটরের মতো যন্ত্রের মাধ্যমে কৃত্রিম ভাবে জীবিত রাখার পরে রোগী সুস্থ না হলে পরবর্তী পর্যায়ের চিকিৎসা (খরচ মিলবে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত)
• বয়সের কারণে চোখের অসুখ
• প্রাপ্তবয়স্কের ব্যক্তিত্বের বিকাশ না হওয়ার সমস্যা
• কথা বলার সমস্যা
• খাদ্যনালির পূর্ণ বিকাশ না হওয়ার সমস্যা
• জিন সংক্রান্ত অসুখ
• সব রকম পরীক্ষা সত্ত্বেও রোগ ধরা না-গেলে চলতে থাকা চিকিৎসা
ভাস্করবাবু আরও বলেন, ‘‘আইআরডিএ যে-সব রোগকে বিমার আওতায় এনে প্রকল্প বাজারে ছাড়তে বলেছে, সে ব্যাপারে আমাদের তেমন কোনও অভিজ্ঞতা নেই। আমাদের দেশে ওই ধরনের পলিসি নেই বললেই চলে। বিদেশে অবশ্য রয়েছে। আমরা বিদেশের বিমা সংস্থার কাছ থেকে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছি।’’
ওই সব রোগকে পলিসিতে যুক্ত করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যাও রয়েছে। সমস্যাগুলি কী ধরনের, তা বিমা সংস্থাগুলির কাছে জানতে চেয়েছে আইআরডিএ। এ প্রসঙ্গে স্টার হেল্থের আঞ্চলিক কর্তা এস এন গুহ বলেন, ‘‘আইআরডিএ যে-সব রোগকে স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনতে বলেছে, তার মধ্যে কয়েকটিকে ঘিরে কিছু আইনি প্রশ্নও রয়েছে। যেমন, বিমার পলিসি বিক্রির সময় গ্রাহকের সঙ্গে বিমা সংস্থার একটা চুক্তি হয়। তাতে গ্রাহককেই স্বাক্ষর করতে হয়। মানসিক রোগীর ক্ষেত্রে চুক্তিতে কে সই করবে? এই প্রশ্ন নিয়ে আইআরডিএ-র সঙ্গে আলোচনা জরুরি।’’
সাধারণ বিমা সংস্থাগুলির সংগঠন জেনারেল ইনসিয়োরেন্স কাউন্সিল পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। নতুন রোগ যুক্ত করার ফলে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে, বিমা সংস্থাগুলি তা কাউন্সিলকে জানিয়েছে। কাউন্সিল এ ব্যাপারে খুব শীঘ্রই আইআরডিএ-র সঙ্গে বৈঠকে বসবে। সমস্যাগুলি নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর পরেই নতুন বিমা প্রকল্প অনুমোদনের জন্য আইআরডিএ-র কাছে জমা দেবে বিমা সংস্থাগুলি। প্রিমিয়ামের হার বাড়ানোর জন্যও আইআরডিএ-র সম্মতি জরুরি।
নতুন রোগগুলিকে যুক্ত করতে হলে পলিসির প্রিমিয়াম কত বাড়বে? ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে বলে আমার ধারণা। মানসিক রোগ-সহ কিছু ক্ষেত্রে তা আরও একটু বাড়তে পারে। ’’