বাজেটে নজর জলে বরাদ্দের স্বচ্ছতায়

ছরের পর বছর শুধু পানীয় জলের একই প্রকল্পে বরাদ্দ কী ভাবে বাড়ছে, তাতে ধাঁধা যথেষ্ট।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৯ ০৩:০১
Share:

কোনও বাজেটে যৌথ বরাদ্দের ভাগীদার হিসেবে পানীয় জলের টাকা ‘শুষে নিয়েছে’ শৌচাগার। কোনওটাতে বরাদ্দের সিংহভাগ গিয়েছে নেটের জালে গ্রাম জুড়তে। ফলে পাইপ বেয়ে পানীয় জল বাড়িতে পৌঁছতে কত টাকা তুলে রাখা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয় বহু ক্ষেত্রেই। আর যেটুকু স্পষ্ট, তা প্রয়োজনের তুলনায় নস্যি। তাই এ বার সংশ্লিষ্ট একাধিক মন্ত্রককে মিলিয়ে জলশক্তি মন্ত্রক তৈরির পরে পানীয় জলে বরাদ্দের ছবিও বাজেটে স্পষ্ট হয় কি না, তাতে চোখ সকলের।

Advertisement

২০২৪ সালের মধ্যে প্রতি ঘরে পানীয় জল পৌঁছনোর পণ করেছেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু গত দেড় দশকের বাজেটে চোখ বোলালেই স্পষ্ট, ইউপিএ জমানা, এমনকি মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম পাঁচ বছরেও সে কথা বলা হয়েছে। কিন্তু নিখাদ তার জন্য যে টাকা বরাদ্দ হয়েছে, তাতে চিঁড়ে ভেজা শক্ত। জটিলতা বেশি জল রাজ্যের আওতায় হওয়ায়। এক-এক রাজ্য তাতে একেক রকম গুরুত্ব দেওয়ায়, এক তরফা বিপুল বরাদ্দ করা কেন্দ্রের পক্ষেও অসম্ভব। কারণ, এতে সাধারণত সমান টাকা দেয় রাজ্যগুলি।

প্রথম ইউপিএ সরকারের প্রথম চার বছরের সঙ্গে মোদী সরকারের প্রথম দফার তুলনা টানলে দেখা যায় মূল্যবৃদ্ধির হিসেব ধরে গ্রামে পানীয় জল খাতে বরাদ্দ দশক পেরিয়েও তেমন বাড়েনি। যদিও এনডিএ সরকার ২০১৮-১৯ সালের বাজেটে যেমন অম্রুত প্রকল্পে ৫০০ শহরে পানীয় জলের ব্যবস্থার কথা বলেছে, তেমনই ২০১৬-১৭ সালে ১ লক্ষ কোটিরও বেশি বরাদ্দ করেছে গ্রামোন্নয়নে। যার অন্যতম অঙ্গ পানীয় জল সরবরাহ। কিন্তু সমস্যা হল, কতটা শুধু পানীয় জলের জন্য, তা ঠাওর করা শক্ত।

Advertisement

জল-ছবি

মনমোহন জমানার প্রথম চার বছরে (২০০৪-০৫ থেকে ২০০৭-০৮) বাজেটে গ্রামীণ পানীয় জল প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল যথাক্রমে ৩,৩০০ কোটি, ৩,৬০০ কোটি, ৪,৬৮০ কোটি এবং ৫,৮৫০ কোটি টাকা। মোদীর প্রথম দফায় ২০১৪-১৫ সালে বরাদ্দ ৩,৬০০ কোটি। ২০১৬-১৭ থেকে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত তা ৬,০০০ কোটি (সংশোধিত), ৬,০৫০ কোটি ও ৭,০০০ কোটি টাকা।

সিএজির রিপোর্ট

২০১৮-এর রিপোর্ট বলছে, ২০১৭ সালের শেষ পর্যন্ত জাতীয় গ্রামীণ পানীয় জল প্রকল্পে গ্রামের সব বাড়ি, সরকারি স্কুলের কাছে পানীয় জল পৌঁছনোর কথা ছিল। তা পৌঁছেছে যথাক্রমে ৪৪% ও ৮৫ শতাংশের কাছে। কথা ছিল, ৫০% গ্রামীণ এলাকায় পাইপে মাথাপিছু ৫৫ লিটার জল পৌঁছোনোর। হয়েছে ১৮%। যেখানে ৩৫% বাড়িতে জলের সংযোগ যাওয়ার কথা, সেখানে তা পৌঁছেছে মাত্র ১৭ শতাংশে।

সমস্যা কোথায়

জেটে পানীয় জলের সঙ্গে শৌচাগার তৈরি, নিকাশি আবার কখনও গ্রামে নেট জোড়ার বরাদ্দের কথা ঘোষণা হয়েছে। ফলে আদতে কত অর্থ শুধু পানীয় জলে গিয়েছে, এক ঝলকে বোঝা কঠিন।বা বাজেটে প্রকল্পের নাম বদলে যাওয়ার কারণেও বছরের সঙ্গে বরাদ্দের বৃদ্ধির চট করে হিসেব কষা কঠিন।

ইউপিএ আমলেও ২০১১-১২ সালের বাজেটে ৫৮ হাজার কোটি বরাদ্দ হয়েছিল গ্রামে জল এবং অন্তত আড়াই লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতে ইন্টারনেট দিতে। ফলে নিখাদ জলের জন্য কতটা, বোঝা কঠিন। জটিলতা বেড়েছে বাজেটে প্রকল্পের নামও বার বার পাল্টানোয়। সত্তরের দশকে যা দ্রুত গতিতে গ্রামে জল সরবরাহ প্রকল্প (এআরডব্লিউএসপি) ছিল, আশি ও নব্বইয়ের দশকে তা-ই যথাক্রমে জাতীয় পানীয় জল প্রকল্প ও রাজীব গাঁধী জাতীয় পানীয় জল প্রকল্প। ২০০৯ সালে জাতীয় গ্রামীণ পানীয় জল প্রকল্প এসেছে নয়া কলেবরে। ফলে বছরের পর বছর শুধু পানীয় জলের একই প্রকল্পে বরাদ্দ কী ভাবে বাড়ছে, তাতে ধাঁধা যথেষ্ট।

অনেকে বলছেন, জল ছাড়া শুধু বাড়ি বা শৌচাগার তৈরি অর্থহীন বুঝেই পানীয় জলের জন্য ঝাঁপাতে চাইছেন মোদী। বিশেষত নানা জায়গায় জলের জন্য হাহাকার সামনে আসার পরে। গ্রামীণ কর্ম নিশ্চয়তা প্রকল্পের সিংহভাগ কাজ চাইছেন পুকুর কাটার মতো জল সংরক্ষণের জন্য। তাঁদের মতে, জল সঙ্কট রুখতে কেন্দ্র কতটা আন্তরিক, তার কিছুটা আঁচ মিলবে বাজেটে। বোঝা যাবে, সব কিছুর পরে বরাদ্দ কি আদৌ কিছুটা স্বচ্ছ হল, নাকি রইল সেই অথৈ জলেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement