শক্তিকান্ত দাস।
ছ’বছরের তলানি ছোঁয়া বৃদ্ধির হারকে টেনে তোলার বার্তা দিয়ে শুক্রবার ফের সুদ (বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে যে সুদে ঋণ দেয় শীর্ষ ব্যাঙ্ক, সেই রেপো রেট) ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এই নিয়ে চলতি অর্থবর্ষে টানা পাঁচ বারে তা কমল মোট ১৩৫ পয়েন্ট। দাঁড়াল প্রায় এক দশকের সবচেয়ে নীচে। শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস জানালেন, যত দিন না বৃদ্ধির রথের চাকায় গতি আসছে, তত দিন সুদ কমানোর রাস্তা খোলা রাখছে ঋণনীতি কমিটি। মূল্যবৃদ্ধির লক্ষ্যের মধ্যে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেই। যাকে আগামী দিনে আরও সুদ কমার ইঙ্গিত বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
তবে এ দিন বৃদ্ধির পূর্বাভাস আগের ৬.৯% থেকে কমিয়ে ৬.১% করেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। যার জেরে জোর ধাক্কা খেয়েছে শেয়ার বাজার। সেনসেক্স প্রায় ৪৩৪ পয়েন্ট পড়ে নেমে গিয়েছে ৩৭,৬৭৩.৩১ অঙ্কে।
এ দিন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দাবি, অর্থনীতি চাঙ্গা করতে কেন্দ্রের করা পদক্ষেপগুলিতে বাজারে চাহিদা ও বেসরকারি লগ্নি বাড়বে ঠিকই। তবে অর্থনীতির গতি ক্রমাগত শ্লথ হওয়ায় সুদ বাবদ খরচ কমিয়ে অবিলম্বে ঋণের চাহিদা বাড়ানোর চেষ্টা করছে তারাও। যাতে উৎসবের মরসুমে গাড়ি ও বাড়ি কিনতে ধার নেওয়ার আগ্রহ বাড়ে মানুষের। আর তার হাত ধরে অক্সিজেন পায় বিক্রিবাটা। বিশেষত এখন যেহেতু এই সব ঋণ রেপো রেটের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। অর্থাৎ তা কমলে ঋণে সুদ কমতে বাধ্য। ফলে রেপো রেটের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে এ বার বাড়ি, গাড়ি-সহ বেশ কিছু খুচরো ঋণে সুদও সরাসরি ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমার কথা। একই ভাবে ঋণে সুদের খরচ কমবে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পেরও।
তবে এই পদক্ষেপ দেশে চাহিদা কতটা বাড়াতে পারবে, তা নিয়ে অবশ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। এক দিকে, ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর সঞ্জয় কুমারের মতো ব্যাঙ্কিং মহলের একাংশ বলছেন, ‘‘চাহিদা বাড়ানোর ক্ষেত্রে রেপো রেট ছাঁটাই অবশ্যই ইতিবাচক ফল দেবে। বিশেষত আবাসন এবং গাড়ি শিল্পে যেখানে নাগাড়ে বিক্রি কমছে। এতে ওই দুই ক্ষেত্রে চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা।’’
এক ঝলকে
রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমে ৫.১৫%। একই হারে কমে রিভার্স রেপো ৪.৯০%। এ নিয়ে ২০১৯ সালে টানা পাঁচ বার ঋণনীতিতে সুদ কমাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। খোলা রাখল ভবিষ্যতে আরও কমানোর রাস্তাও। মূল্যবৃদ্ধি চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধে ৩.৫%-৩.৭% এবং পরের বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ৩.৬% হবে ধরা হয়েছে। ফের ছাঁটাই করা হয়েছে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে বৃদ্ধির পূর্বাভাস। ৬.৯% থেকে এক ধাক্কায় কমে ৬.১%।
এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর কে রামচন্দ্রনেরও মত, ‘‘উৎসবের মরসুম শুরু হয়েছে। এই সময়ে বিভিন্ন সংস্থা দামে ছাড় দেয়। তার উপর সুদ কমা চাহিদা বৃদ্ধিতে জ্বালানি জোগাবে বলেই মনে করি আমি।’’ গাড়ি সংস্থাগুলির সংগঠন সিয়াম রেপো রেট কমানোর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের প্রেসিডেন্ট রাজন ওয়াধেরা বলেন, ‘‘আশা করব ব্যাঙ্কগুলি রেপো রেট কমানোর পুরো সুবিধা গ্রাহকদের দেবে। ঋণের সুদ কমবে। উৎসবের মরসুমে সস্তায় ঋণ পেলে গাড়ি কেনার চাহিদা বাড়বে।’’
কিন্তু তবে রেপো রেট কমায় চাহিদা কতটা বাড়বে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ বি কে দত্ত। বলেছেন, ‘‘এর আগে রেপো চার বার কমেছে। কই চাহিদা তো বাড়েনি? তা হলে এ বার বাড়বে, তার নিশ্চয়তা কোথায়! বরং আয়করের হার কমালে সাধারণ মানুষের হাতে খরচের জন্য অর্থের জোগান বাড়ত। চাহিদা কমার মূল কারণগুলি খুঁজে বার করে পদক্ষেপ করা জরুরি।’’
আরবিআইয়ের এ দিনের সিদ্ধান্ত ঋণের ক্ষেত্রে পুরোপুরি কার্যকর করতে ব্যাঙ্কগুলির কাছে আর্জি জানিয়েছেন রফতানিকারীদের সংগঠন ফিয়োর প্রেসিডেন্ট শরদ কুমার শরাফ। লগ্নি ও চাহিদা বাড়াতে এই পদক্ষেপ সাহায্য করবে বলে তাঁর আশা।
কিছুটা আশার আলো দেখছে আবাসন শিল্প মহলও। ক্রেডাইয়ের জাতীয় চেয়ারম্যান জাক্সে শাহের মতে, ‘‘কর্পোরেট কর ছাঁটাই ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ কমানো, দুইয়ে মিলে উৎসবের মরসুমে আবাসন ক্ষেত্রে চাহিদা বাড়তে পারে।’’
এ দিকে, কেন্দ্র রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে চলতি অর্থবর্ষে ৩০,০০০ কোটি টাকা অন্তর্বর্তী ডিভিডেন্ড চাইতে পারে যে জল্পনা ছড়িয়েছে, এ দিন তা উড়িয়েছেন শক্তিকান্ত। তাঁর দাবি, এ নিয়ে তিনি কিছু জানেন না।