হর্ষবর্ধন নেওটিয়া। ছবি: প্রেম সিংহ
পরিকাঠামোয় সরকারি খরচে আরও গতি এলে বেসরকারি লগ্নি আসতে শুরু করবে।
বেসরকারি লগ্নিতে ভাটার টান যখন কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের দুশ্চিন্তার কারণ, তখন বণিকসভা ফিকি-র নতুন সভাপতি হর্ষবর্ধন নেওটিয়ার দাবি, সরকারি খরচ বাড়লেই বেসরকারি লগ্নি আসতে শুরু করবে।
মনমোহন জমানার সিদ্ধান্তহীনতার জেরে এ দেশের শিল্পপতিরা দেশের অর্থনীতিতে লগ্নি করাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ শিল্পমহলের একাংশের। নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে পরিস্থিতি শোধরাবে বলে আশা ছিল। কিন্তু গত ১৯ মাসে তা হয়নি। ফিকি সভাপতির বক্তব্য, ‘‘মোদী সরকারের কাছ থেকে দ্রুত বেশি কিছু আশা করাটা অবাস্তব ছিল। কারণ সরকারি পদক্ষেপ বাস্তবে কার্যকর হতে সময় লাগে। তবে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির ইঙ্গিত মিলেছে। সিমেন্ট, বিটুমিনের চাহিদা বাড়ছে। আগে দিনে ৭-৮ কিলোমিটার সড়ক তৈরি হচ্ছিল। এখন তা বেড়ে ১৫ কিলোমিটারে পৌঁছেছে।’’
প্রত্যাশার তুলনায় আর্থিক বৃদ্ধির হার কম হওয়াকেই লগ্নি না-আসার প্রধান কারণ বলে মনে করছেন নেওটিয়া। তাঁর যুক্তি, ৭-৮ শতাংশ বৃদ্ধি হবে ধরে নিয়ে শিল্পে উৎপাদন ক্ষমতা তৈরি হয়েছিল। গত ৩-৪ বছরে তা হয়নি। চাহিদার থেকে বেশি উৎপাদন ক্ষমতা তৈরি হওয়ায় শিল্প সংস্থাগুলির ব্যালান্স শিট-ও ধাক্কা খেয়েছে। মন্দার জেরে বাজার দরও কম ছিল। এখন ফের শিল্পে উৎপাদন ক্ষমতাকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে। ফলে নতুন লগ্নি শুরু হবে। কিন্তু আগে সরকারি লগ্নি দরকার।
সরকারি খরচ বাড়াতে রাজকোষ ঘাটতির রাশ আলগা করা নিয়ে অর্থ মন্ত্রকে চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়েছে। নতুন ফিকি সভাপতির বক্তব্য, ‘‘তার পাশাপাশি আসন্ন কেন্দ্রীয় বাজেটে আর্থিক সংস্কারের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, বিলগ্নিকরণ এবং করের আওতা বাড়ানোর দিকে জোর দেওয়া হোক।’’ এখন জনসংখ্যার মাত্র ৩ শতাংশের থেকেও কম মানুষ কর দেন। এই বার অন্তত ৫ শতাংশ হওয়া দরকার। পাশাপাশি লগ্নির পরিবেশ আরও সহজ করা বা ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’-এর দিকে নজর দেওয়া দরকার। এ বিষয়ে বণিকসভাগুলিও সরকারকে সাহায্য করবে।
আক একটি বিষয়েও গুরুত্ব দিচ্ছেন বণিকসভাটির সভাপতি। নেওটিয়ার দাবি, ‘‘নতুন লগ্নি আসার পরিস্থিতি তৈরি হলেই ব্যাঙ্কগুলি থেকে ঋণ নেওয়া বাড়বে। তার জন্য অনুৎপাদক সম্পদের ভারে ধুঁকতে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মূলধন জোগান বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে সরকারের অংশীদারি কমিয়ে ব্যাঙ্কগুলির বেসরকারি অংশীদারি বাড়াতে হবে।’’
শিল্পকে সুবিধা দিতে মোদী সরকার জমি অধিগ্রহণ বিলে সংশোধন করতে চাইলেও সেই চেষ্টা সফল হয়নি। নেওটিয়া বলেন, এখন শিল্পমহলও বুঝতে পারছে, জোর করে জমি অধিগ্রহণ বিকল্প নয়। যদি বিক্ষোভ চলতে থাকে তা হলে কারখানা তৈরি করে লাভ হবে না। যে-সব কারখানার জন্য বড় জমি দরকার, তারা এখন যেখানে জমি সহজলভ্য, সেখানেই যেতে রাজি। শুধু সড়ক-বিদ্যুৎ-জলের মতো প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর দরকার।
আর্থিক মন্দার জেরে পশ্চিমবঙ্গে লগ্নির ক্ষেত্রেও আশানুরূপ সাফল্য আসেনি বলে দাবি কলকাতা ভিত্তিক অম্বুজা নেওটিয়া গোষ্ঠীর কর্ণধারের। তাঁর যুক্তি, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার প্রথম দিকে পাহাড় ও মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকার আইন-শৃঙ্খলা সমস্যার দিকে নজর দিয়েছিল। পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে গত দু’আড়াই বছরে শিল্পায়নের চেষ্টা শুরু হয়েছে। শিল্পের অনুকূল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সার্বিক ভাবেই মন্দার দশার জন্য অর্থনীতির উন্নতি হয়নি। তাই তা শিল্পের সহায়ক হয়নি। ফলে আশানুরূপ সাফল্য মেলেনি।’’ অর্থনীতির মোড় ঘুরতে শুরু করলে পশ্চিমবঙ্গেও লগ্নি আসবে বলে নেওটিয়ার আশা।