বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ।
অর্থনীতির অবস্থা যা-ই হোক না কেন, শেয়ার বাজার কিন্তু গত কয়েক দিন শক্তি ধরে রেখেছে করোনা আতঙ্ককে কার্যত তোয়াক্কা না-করেই। ওঠাপড়ার পরে সেনসেক্স থেকে যাচ্ছে ৩৮ হাজারের উপরে। আর নিফ্টি ১১,৩০০-র আশেপাশে। অবশ্য শুধু ভারতে নয়, একই চিত্র দেখা যাচ্ছে বিশ্বের অনেক দেশেই। এপ্রিল-জুনে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের অর্থনীতিই যখন ভাল রকম সঙ্কোচনের মুখে তখন শেয়ার বাজার কী ভাবে চাঙ্গা রয়েছে, এই প্রশ্নেই ভাবিত সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষ।
শেয়ার বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, করোনা উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে বেশিরভাগ দেশই আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। কোনও কোনও দেশে এই প্যাকেজের আকার বেশ বড়। ফলে অর্থ ব্যবস্থায় নগদের জোগান বেড়েছে ভাল রকম। আর সেটাই ইন্ধন জোগাচ্ছে শেয়ার সূচককে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসও বলেছেন একই কথা। কিন্তু সেই সঙ্গে তাঁর সতর্কবার্তা, বাজারের এই শক্তি অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এই বাজারে সংশোধন আসবে। তবে সেটা কবে হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। শক্তিকান্তের ইঙ্গিত, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কিছু দিন সুদ কমানো স্থগিত রাখতে পারে।
বস্তুত, সম্ভাব্য এই সংশোধন নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে লগ্নিকারীদের একাংশের মধ্যেও। হয়তো সেই কারণেই সম্প্রতি শেয়ার নির্ভর ফান্ডগুলিতে লগ্নি কমেছে। এই পরিস্থিতিতে শেয়ার বাজার থেকে কিছুটা লগ্নি সরিয়ে নেওয়ার কথাও ভাবতে শুরু করেছেন কেউ কেউ।
এখন প্রশ্ন হল, শেয়ার বাজার থেকে সরে মানুষ যাবেন কোথায়? ব্যাঙ্ক, ডাকঘরে সুদ তলানিতে। পণ্যমূল্য লাগামছাড়া হওয়ায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক হয়তো এখনই আর সুদ কমানোর পথে হাঁটবে না— এই সম্ভাবনার ফলে ভাটা এসেছে ঋণপত্রের চাহিদাতেও। ফলে তার দাম কমেছে এবং বেড়ে উঠেছে ইল্ড। কমছে ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডের ন্যাভও। ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ডের ইল্ড গত সোমবার ছিল ৫.৯৭%। শুক্রবার তা বেড়ে হয়েছে ৬.১৪%। সব মিলিয়ে গত সপ্তাহে ভাল রকম ধাক্কা খেয়েছে ঋণপত্রের বাজারও। ফলে অবসরের পরে একটু বেশি আয়ের লক্ষ্যে এবং করের সুবিধার জন্য যাঁরা মোটা টাকা ঋণপত্র এবং ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডে লগ্নি করেছিলেন, এখন তাঁদের কপালে চওড়া ভাঁজ।
তেজি শেয়ার, দুর্বল বন্ড বাজার
• দিন সেনসেক্স নিফ্টি বন্ড ইল্ড (%)*
• ১৭ অগস্ট ৩৮,০৫১ ১১,২৪৭ ৫.৯৭
• ১৮ অগস্ট ৩৮,৫২৮ ১১,৩৮৫ ৫.৯৮
• ১৯ অগস্ট ৩৮,৬১৫ ১১,৪০৮ ৬.০
• ২০ অগস্ট ৩৮,২২০ ১১,৩১২ ৬.০
• ২১ অগস্ট ৩৮,৪৩৫ ১১,৩৭২ ৬.১৪
(১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ডের)
সমস্যা রয়েছে অন্যত্রও। কয়েক দিন আগে পর্যন্তও শোনা যাচ্ছিল, অন্যান্য ক্ষেত্রের অবস্থা যা-ই হোক না কেন, ভাল বর্ষার উপরে নির্ভর করে এ বছর দু’হাত ভরিয়ে দেবে কৃষি ক্ষেত্র। অথচ এখন দেশের কোনও কোনও অঞ্চলে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় কৃষিকাজ বেশ মার খাচ্ছে। এর ফলে আগামী দিনে ডাল এবং আনাজের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা থাকছেই। অর্থাৎ, মূল্যবৃদ্ধির চাপ সহ্য করতে হতে পারে আরও কিছু দিন। ঠিক সেই সময়ে, যখন ব্যাঙ্ক ও ডাকঘর জমায় সুদ কমছে। রয়েছে বেতন হ্রাস, কাজ হারানোর আশঙ্কা। সঙ্গে করোনাজনিত অতিরিক্ত খরচও।
এই অবস্থায় শেয়ার এবং ঋণপত্রের বাজারের অনিশ্চয়তার কারণে সুদ অনেকটা কমা সত্ত্বেও বহু মানুষ ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরের স্থির আয়ের প্রকল্পে ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছেন। গত সাড়ে তিন মাসে বিভিন্ন মেয়াদি জমা প্রকল্পে মানুষ লগ্নি করেছেন ৫.৮ লক্ষ কোটি টাকা। স্থির আর প্রকল্পের প্রতি মানুষের ঝোঁক বাড়ায় বিভিন্ন বিমা সংস্থাও বাজারে আনছে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুত আয়যুক্ত প্রকল্প। বিমা এবং করের সুবিধার পাশাপাশি, এই প্রকল্পগুলিতে থাকছে ৫% থেকে ৬% আয়ের নিশ্চয়তা।
(মতামত ব্যক্তিগত)