Mutual Funds

হাওয়া অর্থনীতির পক্ষে, সূচক কার্যত বাধাহীন

ব্রিটেনের নামী ব্যাঙ্ক বার্কলেজ়ের অনুমান, ৭.৬% নয়, ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার হবে আরও বেশি। ৭.৮ শতাংশের কাছাকাছি। এ ছাড়াও অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে একাধিক সুখবর পায় বাজার।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৪ ০৭:৩৪
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

লগ্নিকারীদের হাতের মুনাফা ঘরে তোলার ফলে মাঝেমধ্যে শেয়ার বাজারের সূচক মাথা নামাচ্ছে বটে, কিন্তু অর্থনীতির বিভিন্ন মাপকাঠি চাঙ্গা থাকায় বড় বিপদের সম্ভাবনা
আপাতত নেই।

Advertisement

গত বুধবার ভারতীয় শেয়ার বাজারের দুই সূচকে অপ্রত্যাশিত ধস নামায় গেল গেল রব উঠেছিল লগ্নিকারীদের একাংশের মধ্যে। ছোট ও মাঝারি মাপের (স্মলক্যাপ ও মিডক্যাপ) শেয়ারগুলির দাম অত্যধিক চড়ে থাকাকে কেন্দ্র করে মিউচুয়াল ফান্ডগুলি সংস্থাগুলিকে সতর্ক করেছিল শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি। তার জেরে বাজার কিছুটা সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। ফলে ওই দিন বড় রকম পতন হয় স্মলক্যাপ এবং মিডক্যাপ সূচকের। সেনসেক্সও এক ঝটকায় ৭৯০ পয়েন্ট নেমে যায়। তবে এই পতন স্থায়ী হয়নি। পরের দিন থেকে অর্থনীতি সম্পর্কে এক এক করে ভাল খবর আসতে থাকায় বৃহস্পতিবার থেকেই ঘুরে দাঁড়ায় বাজার। সে দিন সন্ধ্যায় গত অক্টোবর-ডিসেম্বরের জিডিপি বৃদ্ধির পরিসংখ্যান যখন প্রকাশিত হয় তার আগে বাজার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জানা যায়, ওই তিন মাসে অর্থনীতির অগ্রগতির হার ছিল ৮.৪%। প্রত্যাশার তুলনায় অনেকটাই বেশি। এই খবরে পরের দিন অর্থাৎ শুক্রবার বিরাট লাফ দেয় শেয়ার বাজার। অর্থনীতি এতটা ভাল ফল করায় জাতীয় পরিসংখ্যান দফতর (এনএসও) ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৭.৩% থেকে বাড়িয়ে করে দেয় ৭.৬%। এর ফলে সব আশঙ্কাকে পিছনে ফেলে লগ্নিকারীরা প্রবল উৎসাহে শেয়ার কিনতে শুরু করেন। সে দিন সেনসেক্স এক লাফে ১২৪৫ পয়েন্ট এগিয়ে যায়। ৩৫৬ পয়েন্ট বাড়ে নিফ্‌টি। দুই সূচকই তৈরি করে নতুন নজির। এর পরে শনিবারও বিশেষ লেনদেন উপলক্ষে কিছুক্ষণের জন্য বাজার খোলা ছিল। সে দিনও সেনসেক্স এবং নিফ্‌টি যথাক্রমে ৬১ পয়েন্ট ও ৫৬ পয়েন্ট এগিয়ে নতুন শিখরে পা রাখে।

ব্রিটেনের নামী ব্যাঙ্ক বার্কলেজ়ের অনুমান, ৭.৬% নয়, ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার হবে আরও বেশি। ৭.৮ শতাংশের কাছাকাছি। এ ছাড়াও অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে একাধিক সুখবর পায় বাজার। জানা যায়, ফেব্রুয়ারিতে জিএসটি সংগ্রহ পৌঁছেছে ১.৬৮ লক্ষ কোটি টাকায়। চলতি অর্থবর্ষে গত এপ্রিল থেকে গত মাস পর্যন্ত এই খাতে সরকারের সংগ্রহ পৌঁছেছে ১৮.৪০ লক্ষ কোটি টাকায়। যা আগের অর্থবর্ষের প্রথম ১১ মাসের তুলনায় ১১.৭% বেশি।

Advertisement

এর পাশাপাশি ফেব্রুয়ারিতে ভারতের শিল্পোৎপাদন সংক্রান্ত পিএমআই সূচক বেড়ে হয়েছে ৫৬.৯। যা পাঁচ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এই সূচক ৫০-এর উপরে থাকা বৃদ্ধিকে ইঙ্গিত করে। তার কম হওয়া মানে সঙ্কোচন। ফেব্রুয়ারি মাসটা ছোট হলেও তখন বিভিন্ন গাড়ি কারখানা থেকে ৩.৭৩ লক্ষ গাড়ি বেরিয়েছে। নতুন রেকর্ড সেটিও। একই মাসে কয়লার উৎপাদন বেড়েছে ১১.৩%। ভারতীয় রেলের পণ্য পরিবহণ বাবদ মাসুল সংগ্রহ বেড়েছে ১০.১%। মাথা তুলেছে বিদ্যুতের চাহিদাও। এই সব তথ্য ইঙ্গিত দেয় দেশের অর্থনীতি এখন বেশ মজবুত জায়গায় দাঁড়িয়ে।

সামনেই সাধারণ নির্বাচন। দিনক্ষণ ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত দেশব্যাপী চলছে বিভিন্ন প্রকল্পের শিলান্যাস এবং উদ্বোধন। এই সবের থেকেও ভবিষ্যৎ অর্থনীতি সম্পর্কে কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ফলে বাজারে এখন নিরাশার কোনও স্থান নেই। তবে সূচক কম সময়ে বেশি উঠলে বিক্রির চাপ আসবেই। আসলে মুনাফা ঘরে তোলাই তো লগ্নিকারীদের মূল লক্ষ্য। ফলে মাঝেমধ্যে বাজারে সংশোধনও আসবে। তবে তা দীর্ঘ সময় ধরে বাজারকে দুর্বল রাখতে পারবে বলে মনে হয় না।

শেয়ার বাজারের পাশাপাশি উত্থানের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে ঋণপত্রের (বন্ড) বাজারও। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমাতে শুরু করলেই চড়তে থাকবে ঋণপত্রের দাম। পড়বে ইল্ড। সরকার এ বার বাজারে কম ঋণপত্র ছাড়বে ইঙ্গিত মেলায় ইতিমধ্যেই তার দাম খানিকটা বেড়েছে। ফলে ১০ বছর মেয়াদি সরকারি ঋণপত্রের ইল্ড ৭.১৪% থেকে নেমে এসেছে ৭.০৬ শতাংশে। শেয়ার এবং ঋণপত্র এই দুই লগ্নি ক্ষেত্রই ভাল জায়গায় থাকায় সুদিন চলছে ফান্ডের জগতেও। বেশিরভাগ শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডের ন্যাভ এখন সর্বকালীন উচ্চতায়। ফলে ফান্ডের জগতে হু হু করে ঢুকছেন নতুন লগ্নিকারী। ভাল ভাবে উতরে যাচ্ছে নতুন ইসুগুলিও (এনএফও)। সম্প্রতি বাজারে ছাড়া এসবিআই মিউচুয়াল ফান্ডের এনার্জি অপরচুনিটিজ় ফান্ডে ৬৭০০ কোটি টাকার ইউনিটের জন্য আবেদন জমা পড়েছে। তবে স্মলক্যাপ এবং মিডক্যাপ ফান্ডে নতুন করে লগ্নির ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে কিছুটা সতর্ক থাকতে হবে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement