অতীতে যাঁরা অনেকগুলি বড় পতন দেখেছেন তাঁরা জানেন, অর্থনীতি ঠিক থাকলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। —প্রতীকী চিত্র।
আগের সপ্তাহে (৬-১০ জানুয়ারি) ১৮৪৪ পয়েন্ট খোয়ানোর পরে গত সোমবার সেনসেক্স আরও ১০৪৯ তলিয়ে যাওয়ায় আতঙ্ক ছড়ায় বাজারে। মাত্র কয়েক মাস আগে প্রায় ৮৬ হাজারে ওঠা সূচক সপ্তাহ শেষে হয় ৭৬,৬১৯। সাড়ে তিন মাসে তা নেমেছে ১০.৭৪%। যাঁরা গত ক’বছরে শেয়ার-ফান্ডে লগ্নি করেছেন, তাঁরা শঙ্কিত এমন পতন আগে না দেখায়। তবে বহু দিনের লগ্নিকারীদের একাংশের প্রতিক্রিয়া উল্টো। বিপুল চড়ে থাকার পরে এতটা নিচু বাজার তাঁদের কাছে বিনিয়োগের সুযোগ।
অতীতে যাঁরা অনেকগুলি বড় পতন দেখেছেন তাঁরা জানেন, অর্থনীতি ঠিক থাকলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। প্রতিটি পতনের পরেই সূচক ঘুরে দাঁড়াতে খুব বেশি সময় নেয়নি। দুর্বল বাজারে সাহস করে ভাল শেয়ার কিনলে এবং ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলে লাভ হতে পারে। ২০০৬-এ সেনসেক্স ১০,০০০ ছোঁয়। পরের ১৮ বছরে বেশ কিছু বড় পতন এলেও, সবক’টিকে কাটিয়ে গত সেপ্টেম্বরে সেনসেক্স পৌঁছেছিল ৮৬ হাজারের দোরগোড়ায়।
২০০৮-এ আমেরিকায় আর্থিক মন্দার কারণে মহাপতন গ্রাস করেছিল ভারত-সহ গোটা বিশ্বকে। এক বছরে সেনসেক্স ২০,৬৪৫ থেকে ৫০ শতাংশেরও বেশি তলিয়ে গিয়ে নেমেছিল ৯৭১৬ অঙ্কে। ২০১৫-এ একই ঘটনা ঘটে ব্রেক্সিট এবং চিনের মুদ্রা ইউয়ানের অবমূল্যায়নের কারণে। ২০১৬-এ ভারতের বিভিন্ন ব্যাঙ্কে অনুৎপাদক সম্পদ বৃদ্ধি এবং বিশ্ব অর্থনীতির কিছুটা ঝিমিয়ে পড়া বিরাট পতনে ডেকে আনে। ওই বছরেরই আরও এক বড় পতনের কারণ ছিল নভেম্বরে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিল। এর পরের মহাপতন এসেছিল ২০২০-র মার্চে। করোনা রুখতে লকডাউন ২৩ মার্চ এক দিনে সেনসেক্সকে ৩৯৩৪ বা ১৩% ফেলে দেয়। তা নামে ২৫,৯৮১-এ। বড় কয়েকটি শেয়ারের দামে ধস নেমেছিল ১৩% থেকে ২৮%। তবে প্রত্যেক বার বাজার সমস্ত ধাক্কা কাটিয়ে নতুন করে মাথা তুলেছে। গড়েছে নতুন নজির।
পরিসংখ্যানে স্পষ্ট ভারতের অর্থনীতি কিছুটা ঝিমিয়ে। মূল্যবৃদ্ধি এখনও চড়ে। টাকার দাম পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতির চাকা ঘোরানো সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তারা বাজেটকে হাতিয়ার করে ঠিক পথে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করলে তার সঙ্গে শেয়ার বাজারও ফের উর্ধ্বমুখী হতে পারে। অর্থনীতির হাল কিছুটা আন্দাজ করা যায় সংস্থার আর্থিক ফলে। এখনও পর্যন্ত অক্টোবর-ডিসেম্বরের ফল খুব উৎসাহজনক না হলেও হতাশাব্যাঞ্জক নয়। টিসিএস, রিলায়্যান্স, ইনফোসিস, উইপ্রো, এইচডিএফসি লাইফ, এসবিআই লাইফ, এইচডিএফসি এএমসি ভাল করেছে। কিছুটা হতাশ করেছে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, হ্যাভেলস ইন্ডিয়া ইত্যাদি। ফল প্রকাশ, বাজেট এবং আরবিআইয়ের ঋণনীতি পেরোলে বোঝা যাবে বাজার কোন পথে যাবে। তত দিন অস্থিরতা বহাল থাকার আশঙ্কা।
(মতামত ব্যক্তিগত)