প্রতীকী চিত্র
আশঙ্কার ছবিটা একই। অর্থাৎ সেই জিডিপি-র সঙ্কোচন, প্রচুর লোকের কাজ হারানো এবং এমন বেশ কিছু রোজগারের হারিয়ে যাওয়া, যেগুলি আর কখনও ফিরবে না। তবু সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, রাষ্ট্রপুঞ্জের ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্টে এ বছর ভারতের ৫.৯% জিডিপি সঙ্কোচনের পূর্বাভাস যেন সামান্য স্বস্তিরই। কারণ, কেয়ার রেটিংস থেকে ক্রিসিল, ফিচ, এডিবি, এসঅ্যান্ডপি, মুডি’জ়, ইন্ডিয়া রেটিংস, গোল্ডম্যান স্যাক্স— বিভিন্ন মূল্যায়ন ও আর্থিক সংস্থার দেওয়া সঙ্কোচনের পূর্বাভাস (চলতি অর্থবর্ষে) আরও বেশি, সব মিলিয়ে প্রায় ৮%-১৪.৮%। যার অন্তত চারটি ১০ শতাংশের বেশি।
রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে অবশ্য হুঁশিয়ারি এসেছে একগুচ্ছ। যেমন, অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর নীতিতে গলদ থাকলে, খেসারত দিতে হতে পারে অনেক বেশি। ২০২১ সালে অর্থনীতির কিছুটা উন্নতি হওয়ার কথা, কিন্তু এগিয়ে চলার পথটা থাকতে পারে এবড়োখেবড়ো ও অনিশ্চয়তায় ভরা। বেকারত্ব আরও মাথা তুলতে পারে। দেউলিয়া হতে পারে বহু সংস্থা। দুর্বলতা বহাল থাকতে পারে চাহিদা ও জোগান শৃঙ্খলে। সব মিলিয়ে আত্মবিশ্বাসও থাকতে পারে নড়বড়ে।
তবে এখনও বাড়তে থাকা করোনা সংক্রমণের মধ্যে দাঁড়িয়ে বিশ্ব অর্থনীতি যে গভীর মন্দায়, তা স্পষ্টই বলেছে ইউএন কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ইউএনসিটিএডি) রিপোর্ট। তাদের অনুমান, এ বছর তা সঙ্কুচিত হবে ৪.৩%। করোনা ছড়াতে শুরু করার আগে যা আশা করা হয়েছিল, তার তুলনায় গোটা পৃথিবীতে উৎপাদন কম হবে ৬ লক্ষ কোটি ডলারেরও বেশি। টাকার অঙ্কে প্রায় ৪৪১ লক্ষ কোটি। তাদের বক্তব্য, কড়া লকডাউনে যাবতীয় উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হওয়ায় এ বছর মন্দার আঁচ ভারতেও। তাদের দাবি বহু দেশ, যারা অতিমারির মত সঙ্কটের মোকাবিলার জন্য তৈরি থাকে না, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো পলকা, তাদের মানুষের জীবন রক্ষার তাগিদে ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সচল রাখতে পূর্ণ, কঠোর লকডাউন ছাড়া উপায় থাকে না। ফলে ভাইরাসের মতোই দ্রুত ছড়ায় আর্থিক সঙ্কট।
আশঙ্কার ছবি
• করোনা রুখতে কঠোর লকডাউনের জেরে ২০২০ সালে ভারতের জিডিপি সঙ্কুচিত হতে পারে ৫.৯%।
• ঘুরে দাঁড়িয়ে পরের বছর বৃদ্ধির হার ৩.৯% হতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে স্থায়ী ভাবেই হারাবে আয়।
• এ বছরের প্রথম ছ’মাসে ২০০৮-০৯ সালের বিশ্ব মন্দার চেয়েও দ্রুত হারে সঙ্কুচিত হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। পুরো বছরে সেই হার হবে ৪.৩%।
• সব দেশ মিলিয়ে মুছবে ৬ লক্ষ কোটি ডলার। যা ভারত, মেক্সিকো ও ব্রাজিলের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের সমান।
• আমদানি-রফতানি কমবে পাঁচ ভাগের এক ভাগ, প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি ৪০%।
• লেনদেন কমবে ১০,০০০ কোটি ডলারেরও বেশি।
• উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ৯-১২ কোটি মানুষ নামবেন অতি দারিদ্র সীমার নীচে। ৩০ কোটির সামনে দেখা দেবে খাদ্য সঙ্কট।
• একমাত্র অর্থনীতি হিসেবে এ বছর ১.৩% বৃদ্ধির মুখ দেখবে চিন। পরের বছর তা দাঁড়াতে পারে ৮.১%।
• ২০২১ সালে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও, বিশ্ব অর্থনীতির সামনে সব চেয়ে বড় সমস্যা তৈরি করবে বেকারত্ব, আয়ে অসাম্য, চাহিদায় ধাক্কা, সরবরাহ সঙ্কট ও সংস্থাগুলির দেউলিয়া হয়ে পড়া।
• চিন্তায় রাখবে সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রের বিপুল ঋণ। উন্নত দেশগুলির থেকেও উন্নয়নশীল দেশের কাছে যা বেশি মাথাব্যথার।
• সব দেশ মিলে ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা তৈরি করলে, কাজ তৈরি, নিশ্চিত ও বেশি আয়ে জোর দিলে এবং অপ্রচলিত বিদ্যুৎ, গণপরিবহণ, পরিকাঠামোয় আরও বেশি লগ্নি করলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।
রিপোর্টে সতর্কবার্তা, আর্থিক ও সামাজিক ভাবে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশ। যেখানে অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করে অগুনতি মানুষ, বিদেশি মুদ্রার অন্যতম বড় উৎস যেখানে পর্যটন। তাদের খরচের রাস্তা আটকাতে পারে ধারের পাহাড়ে।ইউএনসিটিএডি-র সেক্রেটারি জেনারেল মুকিসা কিতুই-এর দাবি, ‘‘এই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার উপায় বিভিন্ন দেশের সরকারের চটজলদি ও সাহসী পদক্ষেপ। আগামী ক’মাসে আমরা কোন পথে হাঁটব, তার উপরে নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবন।’’