ফাইল চিত্র।
লাইফ ইন্সিওরেন্স কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া— বর্তমানে শেয়ার বাজারে এই শব্দবন্ধনী প্রায় প্রত্যেকের মুখে মুখে ঘুরছে। সপ্তাহখানেক আগেও দেশের এই সর্ববৃহৎ আইপিও নিয়ে বাজারে তুমুল শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। পাবলিক ইস্যু কেনার জন্য মুখিয়ে ছিলেন ছোট, বড় বিনিয়োগকারীরা। কোন দিকে মোড় নিতে পারে আইপিও, তা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল তুঙ্গে। আশা ছিল ভাল রিটার্নের। কিন্তু সেই সব জল্পনাকে কার্যত নস্যাৎ করে দিয়েছে এই মুহূর্তের বাজার। লাভ তো দূরের কথা, এই সময়ে দাঁড়িয়ে বেশ গুরুতর লোকসানের ভার বইতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের।এলআইসি-র শেয়ার বাজারে আসার পরে লিস্টিংয়ের সময় থেকেই এর দর ছিল নিম্নমুখী। প্রদেয় ইস্যুর মূল্যের তুলনায় প্রায় ৭.৭৫ শতাংশ কম। সময় পেরিয়েছে সময়ের মতো। বাজার ধীরে ধীরে আরও খারাপ হয়েছে। অঙ্কের হিসেবে প্রথম সপ্তাহের শেষেই প্রায় ৪ শতাংশ কমে গিয়েছিল এলআইসি-র এক একটি শেয়ারের মূল্য। এই হ্রাস স্বাভাবিক ভাবেই বিনিয়োগকারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।কিন্তু যে আইপিও নিয়ে এত আলোচনা, এত প্রত্যাশা, এত বিবেচনা, সেই আইপিওতে কেন এ ভাবে ক্ষতির মুখ দেখছেন বিনিয়োগকারীরা? বিশেষজ্ঞরা এর নেপথ্যে বিভিন্ন কারণ তুলে ধরেছেন। প্রথমত, বিশ্বব্যপী মুদ্রাস্ফীতি। এই বছরের শুরু থেকেই দেশ জুড়ে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে শেয়ার বাজারেও। মুদ্রাস্ফীতির ভয়ে শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে রাশ টানা হয়েছে কিছু ক্ষেত্রে। প্রভাব পড়েছে এলআইসি-র উপরে। দ্বিতীয়ত, শ্রীলঙ্কা এবং ইউক্রেনের পরিস্থিতি। আর্থিক দেউলিয়া হওয়ার পথে হাঁটছে শ্রীলঙ্কা। অন্য দিকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতির ক্রমাগত প্রভাব পড়ছে বিশ্বের বাজারে। ফলত, বিশ্ব বাজারে এই মুহূর্তে তৈরি হয়েছে ভয়ানক অস্থিরতা যা এলআইসি-র শেয়ারের দাম কমার অন্যতম বড় কারণ। পাশাপাশি, বর্তমানে ভারতীয় শেয়ার বাজারের দুর্বল অবস্থাও আইপিও-র প্রাথমিক বিনিয়োগে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে।
কিন্তু কত দিন বহাল থাকবে এই পরিস্থিতি? বাজার ঠিক হবে কবে? কবেই বা লাভের মুখ দেখতে পাবেন লগ্নিকারীরা। অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন, এই পরিস্থিতি সাময়িক। পরিসংখ্যানও সেই কথাই বলছে। এর আগে যত বার বাজার পড়েছিল, খানিক সময় পরে ঠিক তত বারই ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। কিছু ক্ষেত্রে দ্বিগুণ বিনিয়োগের মুখ দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে এলআইসি-র ক্ষেত্রে লাভের মুখ কবে দেখা যাবে, তা নিয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারছেন না কেউই।
বর্তমানে এলআইসি-র মার্কেট ক্যাপ প্রায় ৫ লক্ষ ২২ হাজার কোটি টাকা। মার্কেট ইস্যুর মূল্যের তুলনায় প্রায় ৭৭,৬৩৯ কোটি টাকা কম। সোমবার বাজার বন্ধের সময়ে এলআইসি-র এক একটি শেয়ারের মূল্য ছিল ৮১৪ টাকা ৮০ পয়সা। শুক্রবারের বাজারের তুলনায় প্রায় ১১ টাকা ৩৫ পয়সা কম। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মঙ্গলবার এই বাজারমূল্য আরও কিছুটা নামতে পারে। তবে হ্যাঁ, এখনই হতাশ হওয়ার কিছু নেই। অন্ধকারের শেষে যেমন আলো রয়েছে, ঠিক তেমনই এই কালো সময়েও কেটে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
প্রত্যেক বিনিয়োগকারীরই মনে রাখা উচিত যে, বাজার কখনই সমান তালে চলে না। বিশেষ করে শেয়ার বাজারে স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগে ঝুঁকিও থাকে প্রচুর। এলআইসি-র আইপিও শুরুর সময়েই লগ্নিকারীদের যে লোকসানের ভার বইতে হতে পারে, তার ইঙ্গিত দিয়েছিল গ্রে মার্কেট প্রিমিয়াম। তা সত্ত্বেও খুচরো বিনিয়োগকারী, পলিসি হোল্ডার ও সংস্থার কর্মীরা প্রচুর পরিমাণে অর্থ এলআইসি-তে বিনিয়োগ করেছেন। ভরসা করেছেন দেশের সর্ববৃহৎ পাবলিক ইস্যুর উপরে। এই বিনিয়োগের ফল মিলতে বাধ্য। তবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে বিনিয়োগকারীদের। সেই অপেক্ষা অবশ্যই অনন্তকালের জন্য নয়।